Monday, August 25, 2025
দেবাশিস বিশ্বাস

মালনদীতে বিসর্জনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কেন এই দুর্ঘটনা? সেটা ভাবা বেশি জরুরি। রাজ্য জুড়ে গ্রাম-গঞ্জে যে ভাবে বিসর্জন নামক পর্বটি হয় তা প্রত্যক্ষ করলে অনেকেই ঘবড়ে যাবেন। শত নয়, সহস্র লোকের ভিড়, অতি অপরিসর জায়গা, তার মধ্যে নানা বাজি (রংমশাল থেকে চকলেট বোম)। তার মধ্যে সিদ্ধি বা অন্যান্য মাদক সেবন করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উদ্দাম নৃত্য, ছোট নদীর চরে তীব্র ভিড়। এর সঙ্গে রয়েছে পুজো কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা। সব আমলে এটা হয়েছে। কারণ এই দিনটার জন্য বহু মানুষ গ্রাম-গঞ্জে সারা বছর অপেক্ষা করেন।
এর পাশাপাশি আছে প্রকৃতির খেয়াল। উত্তরবঙ্গের (North Bengal) তরাই, ডুয়ার্স ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এসব জায়গায় বেশ কিছু ছোট ছোট নদী আছে। যেখানে সারা বছর তেমন জল থাকে না কিন্তু বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে। বন্যা ও হয়। জল বাড়ে রাত ভোর বৃষ্টি হলে, এলাকা প্লাবিত হয়, রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। এটা সাধারণ বান। আবার বৃষ্টি থামলে জল দ্রুত নেমেও যায়। কিন্তু কিছু বাণ আসে একেবারেই আচমকা। অতি অল্প সময়ে প্রবল প্লাবন। এটাকে “পাগলা বান”, “ঝটকা বান”, “হরপা বান” বলা হয়। ঝাড়গ্রামের দুলুং, তরফেনি ইত্যাদি নদীতে দেখি। হরপা খুব ই কম আসে। এই পাগলা বান আসলে যদি কেউ নদীর কাছে থাকলে বিপদ ভয়ানক হতেই পারে। তবে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দারুণ সাঁতার জানেন বলে তেমন বিপর্যয় হয় না। আর তাঁরা জলে একটা আওয়াজ শুনে আন্দাজও করতে পারেন। জঙ্গলমহলেও বহু ছোট সেতু আছে ওই নদীর উপর দিয়ে, যার উপর দিয়ে সারা বছর বাস-লরি যাতায়াত করে। কিন্তু বানের সময় রাস্তা উপচে যায় জলে, তখন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার জল নেমে গেলে চলে। কিন্তু পাগলা বান আসলে সব হিসেব গুলিয়ে যায়। আমি নিজে পাগলা বানে একটা ১০ চাকার বড় লরিকে পুরো ভেসে যেতে দেখেছিলাম।
মনে রাখতে হবে, পাগলা বান সাধারণত বর্ষাকালেই হয়। বছরের অন্য সময়ে তেমন দেখা যায় না। দুর্ভাগ্য এই বছর দুর্গাপুজোও (Durga Pujo) বর্ষাতেই হয়েছে। তাই বিপদ একটা ছিল। তা সত্বেও মিলিয়ে নেবেন ওই জায়গায় সামনে বছর ও বিসর্জন হবেই।

বরং ভাবা উচিত নির্দিষ্ট বিসর্জনের জায়গায় ঘাট ভালো ভাবে বানানো হোক, সেখানে বিপদ মোকাবিলার ব্যবস্থা রাখা হোক, প্রচুর মানুষ যেন আসতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হোক। রাখা হোক ডুবুরি, অ্যাম্বুল্যান্স। এরকম কিছু জায়গায় শোভাযাত্রা (কার্নিভাল) করেই সব প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা হোক। আমার মতে, কার্নিভাল বন্ধ করার মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। হয়তো ওই কার্নিভালই সমাধানের পথ।

 

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...
Exit mobile version