Wednesday, December 3, 2025

চলে গেলেন আনে ফ্রাঙ্কের প্রিয় বন্ধু ‘হানেলি’

Date:

Share post:

আনে ফ্রাঙ্কের ডায়েরিতে ‘হানেলি’ নামটা মনে আছে?আনের অন্যতম প্রিয় বান্ধবী ছিলেন হানেলি। স্কুলে দু’জনে পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বের্গেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ঠাঁই হয়েছিল তাঁরও। পার্থক্য শুধু একটাই, রক্ষা পেয়েছিলেন হানেলি যাঁর পুরো নাম হানা পিক গসলার। ৯৩ বছর পর্যন্ত পৃথিবীর আলো দেখে গত ২৮ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃগত ২৭ মাসে সর্বনিম্ন ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

আনে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশনের তরফে এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়ে বলা হয়েছে, আনের মতো ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশনও হানার উপর ভরসা করতে পারত। তবে, তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিশদে কিছু জানানো হয়নি ফাউন্ডেশনের তরফে। আনের সঙ্গে নিজের বন্ধুত্বের কথা হানা বিস্তারিত জানিয়ে গিয়েছেন ‘মেমরিজ় অব আনে ফ্রাঙ্ক; রিফ্লেকশন অব চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড’ বইয়ে।

১৯২৮ সালে জার্মানিতে জন্ম হানার। ১৯৩৩ সালে হিটলারের উত্থান ও সেই সঙ্গে ঘনিয়ে আসা ইহুদি বিদ্বেষ এড়াতে হানার পরিবার আমস্টারডামে চলে আসে। সেই একই সময় ফ্রাঙ্ক পরিবারও পা রাখে শহরে। খুব দ্রুত হৃদ্যতা গড়ে উঠেছিল দুই পরিবারের মধ্যে। আনে ও হানা একই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় ১৯৩৪ সালে দুই বন্ধু ও তাদের মায়েদের একসঙ্গে বাজারে যাওয়ার কথা প্রায়শই নিজের স্মৃতিচারণে বলতেন হানা।

জার্মানির পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসেও ঘনিয়ে আসে ইহুদি বিদ্বেষ। নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৪২ সালে বাবা, মা, দিদির সঙ্গে আমস্টারডামের এক কারখানার গুদামঘরের চোরা কুঠুরিতে আত্মগোপন করেন আনে। তখনই যোগাযোগ ছিড়ে যায় দুই বান্ধবীর মধ্যে। হানারাও তখন আত্মগোপন করতে ব্যস্ত। ১৯৪৪ সালের ৪ অগস্ট নাৎসি গেস্টাপো অফিসারের হাতে ধরা পড়ে ফ্রাঙ্ক পরিবার। বের্গেন-বেলসেন ক্যাম্পে ঠাঁই হয় তাঁদের। সেই এক ক্যাম্পেই ছিল হানার পরিবারও। ১৯৪৩ সালে ধরা পড়েন তাঁরা। ‘আরবেট মাখট ফ্রাই’-এর আড়ালে নাৎসিদের নারকীয় অত্যাচার চালানোর সেই আখড়ায় ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ দেখা হয়েছিল আনে ও হানার। দু’জনেই তখন পনেরো ছুঁইছুঁই, দু’জনেই তখন কিশোরী। তার ঠিক এক মাস পরেই টাইফাসে মৃত্যু হয় আনের। হানার পরিবারের মধ্যে বেঁচে ছিলেন কেবল তিনি ও তাঁর দিদি গ্যাবি। স্মৃতিচারণে হানা জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পের দুটি আলাদা অংশে তাঁরা থাকতেন। মাঝে ছিল কাঁটাতার। হানাকে দেখে আনে কেঁদে ফেলেছিল। জানিয়েছিল, সে একা। নাৎসিরা অন্যদের মতো আনের মাথার চুলও কামিয়ে দিয়েছিল। আনে নিজের চুলের প্রতি যত্নশীল ছিল খুবই। ব্যথিত হানা অনুভব করেছিলেন বান্ধবীর কষ্ট।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্যাম্প থেকে মুক্তি পান হানা। জেরুসালেমে নার্স হিসাবে নতুন করে জীবন শুরু করেন তিনি। বিয়ে করেন ওয়াল্টার পিককে। তাঁর পরিবারে রয়েছে, তিন ছেলে, ১১ জন নাতি-নাতনি ও তাঁদের ঘরের আরও ৩১ জন সন্তান।

spot_img

Related articles

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে বিশেষভাবে সক্ষমদের সুবিধার্থে বিশেষ প্রকল্পের কথা স্মরণ মুখ্যমন্ত্রীর

প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস(International Day of Persons with Disabilities) হিসেবে পালিত হয়। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সাল...

‘স্মৃতি’ হারিয়ে ভক্তিপথে পলাশ! প্রেমানন্দজী মহারাজের আশ্রমে হাজির বলিউড সুরকার

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সহ অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানের (Smriti Mandhana) সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিয়ের...

ভাঙন রোধে মোদি সরকার কিছু করেনি, ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য: মালদহে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী

মালদহ ও মুর্শিদাবাদের প্রধান সমস্যা গঙ্গা-ভাঙন। কিন্তু সেই ভাঙন (Erosion) রোধে কিছুই করেনি কেন্দ্রে বিজেপি (BJP) সরকার। বুধবার...

বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ তৃণমূলের, খতিয়ান তুলে কেন্দ্রকে তোপ দোলার 

১০০ দিনের কাজ গ্রামীন আবাস যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্পে প্রাপ্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। এর...