WBHSC : একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনে ৫০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের পরীক্ষার্থী !

রাজ্য সিলেবাস কমিটির (Syllabus Committee) চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার (Aveek Majumdar)জানিয়েছেন আমাদের সামাজিক ইতিহাসের দিকে তাকালে এটা একটা বিরাট বড় পদক্ষেপ। যে কোনও ধরনের প্রান্তিক বা অবহেলিত গোষ্ঠীর যদি কেন্দ্রীয় স্বীকৃতির জায়গা তৈরি হয়, সেটাকে অভিনন্দন জানাতেই হবে। 

সময় বদলাচ্ছে, আর তার সঙ্গেই বদল হচ্ছে মানসিকতার। লিঙ্গ পরিচয়ের (gender identity) বেড়াজালে আটকে নেই আজকের শিক্ষিত সমাজ। শিক্ষা (Education)প্রতিটি মানুষের নূন্যতম অধিকার। তা সে পুরুষ হোক বা নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের (Third gender) ব্যক্তিত্ব। সবার পাশে সমান ভাবে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Government of West Bengal)। ফের তার প্রমাণ দিল রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতর (Education Department)। এই বছর উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (WBHSC) উদ্যোগে স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমবার স্বীকৃতি পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের পড়ুয়ারা। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে (Online Registration) ফর্ম ফিল আপের সুযোগ পেলেন তাঁরা। আর তাতেই তৈরি হল রেকর্ড, নাম পড়ল ৫০০ জন পরীক্ষার্থীর। গোটা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষাবিদরা।

শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার, অন্তত আজকের যুগে দাঁড়িয়ে ঠিক এমন ভাবনা নিয়েই এগিয়ে চলেছে বর্তমান যুব সমাজ। সেখানে শুধুমাত্র লিঙ্গ বৈষম্যকে অজুহাত করে কেন শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে এক শ্রেণির মানুষকে? এই স্টিরিওটাইপ ভাবনা সমাজকে অনেকটা পিছিয়ে রাখে বলেই মনে করেন সমাজতাত্ত্বিকরা। আর সেই কারণেই যুগান্তকারী পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের (Government of West Bengal)। চলতি বছর একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে সম্পূর্ণ অনলাইনে (Online)। এই প্রথমবার তা অনলাইনে হল। এবং তাতে লিঙ্গ পরিচয়ের কলামে মহিলা, পুরুষের সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের অপশন দেওয়া হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, সেই অপশন নির্বাচনের মাধ্যমে স্ব-পরিচয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন পাঁচ শতাধিক পড়ুয়া। রাজ্য সিলেবাস কমিটির (Syllabus Committee) চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার (Aveek Majumdar)জানিয়েছেন আমাদের সামাজিক ইতিহাসের দিকে তাকালে এটা একটা বিরাট বড় পদক্ষেপ। যে কোনও ধরনের প্রান্তিক বা অবহেলিত গোষ্ঠীর যদি কেন্দ্রীয় স্বীকৃতির জায়গা তৈরি হয়, সেটাকে অভিনন্দন জানাতেই হবে। এই ধরনের অভিমুখ ভারতবর্ষের আর কোথাও আছে বলে জানা নেই। ফলে, এটা একটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করা পড়ুয়া একশোর কম হলেও কলা শাখায় সংখ‌্যাটা চারশোর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে।

ডিএ মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য

প্রসঙ্গত রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গকে (Third gender) স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে বহুদিন আগে থেকেই । কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরতির ফর্মে ‘অন্যান্য’ অপশনের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয় জানানোর সুযোগ থাকে এবং আবেদন করা যায়। তৃতীয় লিঙ্গকে আইনত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। স্কুলশিক্ষাতেও সেই স্বীকৃতি দিতে একাদশ শ্রেণির অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের পোর্টাল তৈরির সময়ই লিঙ্গ পরিচয়ে পুরুষ, মহিলার সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে। পুরাণ বিশেষজ্ঞ তথা শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী জানিয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে ফর্মপূরণ করতে বলা হচ্ছে এবং তাঁরা করছেন, এটা একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জায়গা।  এই পদক্ষেপে একটা মুক্তির জায়গা তৈরি হল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিক থেকে এই স্বীকৃতি অত্যন্ত গর্বের মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। বাংলার সরকার চাইছে শিক্ষায় মেধা ছাড়া, অন্য কোনও ক্ষেত্রই প্রাধান্য পাবে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা তৈরির এই পদক্ষেপকে বৈপ্লবিক বলে আখ্যা দিচ্ছে রাজ্যের শিক্ষা মহলের একাংশ।

Previous articleশিলিগুড়িতে ডেঙ্গির বলি পুরসভার সাফাইকর্মী! বিক্ষোভ বিজেপির  
Next articleভারত-বাংলাদেশ ম‍্যাচ ঘিরে আইসিসিকে তোপ আফ্রিদির