মুক্তি পাচ্ছে ফরাসি সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ। বয়সের কারণে তাকে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৯ বছর ধরে নেপালের জেলে রয়েছেন চার্লস। সম্প্রতি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের কাছে মুক্তির জন্য আবেদন করেছিল সে। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বিচারপতি স্বপ্না প্রধান মাল্লা ও বিচারপতি তিল প্রশাস শ্রেষ্ঠার ডিভিশন বেঞ্চে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের সেই সিদ্ধান্তের কথা সংবাদমাধ্যমকে জানান আদালতের মুখপাত্র বিমল পাউডেল।

২০০৩ থেকে জোড়া খুনের অভিযোগে নেপালের জেলে রয়েছে এই ফরাসি সিরিয়াল কিলার। দুই বিদেশি পর্যটককে খুনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছিল নেপাল পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ২৯ বছরের কোনিয়ে জো বরোনজিক। তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। অন্যজন ছিলেন তাঁর বান্ধবী লিউব়্যান্ট ক্যারিয়েরে। ২৬ বছরের লিউব়্যান্ট ছিলেন কানাডার বাসিন্দা। ১৯৭৫-এ তাঁদের দু’জনকে খুন করে চার্লস শোভরাজ। দু’জনের মধ্যে একজনকে চার্লস কাঠমান্ডুতে হত্যা করে। অন্যজন ভাক্তপুরে খুনে হয়েছিলেন। নেপাল সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাসি নাগরিক চার্লসের মা-বাবা ছিলেন ভারতীয় ও ভিয়েতনামের বাসিন্দা। গ্রেফতারির সময় তাঁর থেকে জাল পাসপোর্টও উদ্ধার করেছিল নেপাল পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতারের পর দু’টি আলাদা আলাদা মামলা রুজু করা হয়েছিল।


নেপাল পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জোড়া খুনের পর দীর্ঘদিন ফেরার ছিল চার্লস। পরে কাঠমান্ডুতে একটি ক্যাসিনোর সামনে ঘোরাঘুরির সময় তাঁকে গ্রেফতার করে নেপাল পুলিশ। প্রথমে কাঠমান্ডুর আদালতে ওঠে তার মামলা। সেখানে তাকে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টে যায় ওই মামলা। সেখানেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় চার্লসের। এর পর থেকে গত ২১ বছর ধরে নেপালের জেলে রয়েছে ওই ব্যক্তি। এছাড়া জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করার জন্য ২ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল তার।

প্রসঙ্গত, পুলিশের কাছে ‘বিকিনি কিলার’ নামেই পরিচিত ছিলেন চার্লস। নেপালে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরই নিশানা করত সে। তার বিরুদ্ধে একাধিক খুন, চুরি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬-র মধ্যে অন্ধকার জগতে দাপিয়ে বেড়িয়েছে চার্লস শোভরাজ। এই সময়ের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জনকে তিনি খুন করে বলে দাবি পুলিশের।


সত্তরের দশক এবং আশির দশকের গোড়ায় তাইল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশে মহিলা পর্যটকদের মাদক খাইয়ে খুনের অভিযোগ রয়েছে শোভরাজের বিরুদ্ধে। তাঁর অধিকাংশ শিকারের পরনেই নাকি থাকত বিকিনি। খুনের ধরন দেখে শোভরাজকে বলা হত ‘দ্য স্প্লিটিং কিলার’। হত্যাকাণ্ডের পরে সরীসৃপের মতো মসৃণ পথে পালানোর কায়দা তাকে নাম দিয়েছিল ‘দ্য সারপেন্ট’।

উল্লেখ্য, জেলমুক্তির ১৫ দিনের মাথায় তাঁকে প্রত্যর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছে নেপাল সুপ্রিম কোর্ট। জেলমুক্তির পর চার্লসকে কোনও দেশের হাতে প্রত্যর্পণ করা হবে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি।
