ফের নির্লজ্জতার সীমা ছাড়ালেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। প্রকৃত অর্থেই তিনি যে “ফিটার মিস্ত্রি” সেটা প্রমাণ করলেন। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কের ঝড় তুলেছে। সমালোচিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু শিক্ষা নেননি। একেবারে দু’কান কাটা। তা না হলে বাংলার মা-বোনদের “ভিখারি” বলতে পারতেন বিজেপি নেতা (BJP Leader)!

শনিবার দুর্গাপুরের মায়াবাজারে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দিলীপ ঘোষ চরম অপমান করলেন বাংলার মানুষকে। বিশেষ করে মহিলাদের। বললেন, যাঁরা ৫০০ টাকা করে নেন, তাঁরা “ভিখারি”। এই বাংলারই একজন জনপ্রতিনিধি, একজন সাংসদের এমন মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইছে।


রাজ্য সরকারের প্রকল্প নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, “আপনাকে রেশন থেকে চাল দিয়েছে। কাপড় দিয়েছে। কোথাও কিছু টাকা দিয়েছে। দিদিমণি মাসে ৫০০ টাকা করে দিচ্ছেন। আর মাসে ৫০০ টাকা পাবে বলে বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে, রান্না বন্ধ করে দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে সারাদিন মহিলারা রোদ্দুরের মধ্যে বাচ্চা কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কি না, মাসে ৫০০ টাকা পাব। এত ভিখারি হয়ে গিয়েছে। কারণ কি কিছুই পাই না। যা পাই তাই ভাল। ৫০০ টাকা হলেও ঠিক আছে। এখানে সবাইকে ভিখারি তৈরি করা হচ্ছে।” দিলীপবাবুর এমন অবিবেচকের মতো মন্তব্যকে একেবারেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না রাজ্যের মহিলারা। যখন রাজ্যের মহিলাদের জন্য, নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে কাজ করছেন দেশের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banrejee), তখন দিলীপ ঘোষের মুখ থেকেই এমন মন্তব্য স্তম্ভিত রাজ্যবাসী।

অনেক মহিলাকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপকারিতা নিয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, “৫০০ টাকা হলেও তা তো আমাদেরই। সরকার আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আমাদের নামেই টাকা পাঠায়। দরকারের সময় কারও কাছে চেয়ে এক পয়সাও পাওয়া যায় না। আমাদের নির্বাচিত সরকার আমাদের এই টাকা দেয়।”


দিলীপ ঘোষের এমন মন্তব্যকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি বলেন, “দিলীপ ঘোষ এসব আজেবাজে কথা বলে বাংলার মানুষ, বাংলার মা-বোনদের অপমান করছেন। মানুষকে ভিক্ষুক বলছেন, এসব কী ধরণের কথাবার্তা? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রের কর্তব্য পালন করছেন। সাধারণ, গরিব মানুষ, যাঁরা কষ্টে থাকেন, তাঁদের সরাসরি কিছু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছেন। যাতে তাঁদের আত্মসম্মান, অধিকারবোধ ঠিকঠাক থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মডেলকেই তো গোটা দেশে, কেন্দ্রে নকল করা হচ্ছে।”

এরপরই দিলীপকে খোঁচা মেরে কুণাল ঘোষের সংযোজন, “দিলীপবাবু মনে হয় জানেন না, করোনাকালে যখন গোটা ভারতের অন্যান্য জায়গায় মানুষের মাথাপিছু আয় কমে গেছে, সেখানে বাংলার মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তার কারণ, বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি লক্ষীর ভান্ডার থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী স্বাস্থ্য সাথী সহ একের পর এক সামাজিক স্কিমগুলির সুবিধা পেয়েছে মানুষ। যেখানে বাংলার মহিলারা দারুনভাবে উপকৃত হয়েছেন, আর তাঁদেরকেই ভিখারি বলে অপমান করছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর নূন্যতম সচেতনতা নেই, সেই কারণেই তো উনি গরুর দুধ থেকে সোনার স্বপ্ন দেখেন।”

দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্যের পাল্টা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ওনার অর্থনৈতিক বোধটাই একেবারে নেই। আমি দিলীপদার কোয়ালিফিকেশনটা ঠিক জানি না। তবে এসব রোটেশন অব মানির বিষয়টা অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বুঝতে পারবেন। রোটেশন অব মানি যত হবে, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এর ফলে যাঁরা একটু পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁরা এগিয়ে আসবেন।”

দিলীপ ঘোষকে ধিক্কার জানিয়েছেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা থেকে শুরু করে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারও।
