নোটবন্দি মামলার রায়ে কেন সহমত হলেন না বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না ?

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ২৬ (বি) ধারা উল্লেখ করেই তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের নোটবন্দি সিদ্ধান্তে সঠিক ছিল বলে সোমবার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের ৫ বিচারপতির মধ্যে চারজন সহমত পোষণ করে বলেছেন, নোটবন্দি বৈধ। কিন্তু বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না ওই বেঞ্চের সঙ্গে সহমত হতে পারেননি। তাঁর মতে, নোটবন্দির নির্দেশিকা ‘বেআইনি’ এবং প্রক্রিয়াটি ‘অবৈধ’। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ২৬ (বি) ধারা উল্লেখ করেই তিনি নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ৮ নভেম্বর নোটবন্দির বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়াটি ছিল বেআইনি। কিন্তু, এখন আর ২০১৬ সালের সেই স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে না। তিনি আরও বলেন, নোটবন্দি ছিল ক্ষমতার প্রয়োগ, আইনের পরিপন্থী এবং সবমিলিয়ে বেআইনি।তাঁর মতে, যথাযথ আইন মেনে নোটবন্দি কার্যকর করা হয়নি। যদিও নোটবন্দির ‘মহৎ উদ্দেশ্য’ নিয়ে তাঁর কোনও প্রশ্ন নেই, শুধুমাত্র ‘আইনের দিক থেকেই’ তিনি একথা বলছেন। তাঁর কথায়, বিমুদ্রাকরণ যে মহৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ভাল উদ্যোগ এবং মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।শুধুমাত্র আইনি বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে বিষয়টি পরিমাপ করা হয়েছে, নোটবন্দির উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “এটি কালো টাকা, জঙ্গি তহবিল এবং জাল নোটচক্রকে নিশানা করেই করা হয়েছে।”

এরই পাশাপাশি, নোটবন্দির বিরোধিতা করে আবেদনকারীরা যে যুক্তি দিয়েছেন, তাকেও সমর্থন জানিয়েছেন বিচারপতি বি.ভি নাগরত্না। তিনি বলেন, আরবিআই এর আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বোর্ডেরই নোট বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করা উচিত। এক্ষেত্রে গত ৭ নভেম্বর কেন্দ্র আরবিআই-কে চিঠি দিয়ে নোটবন্দি করার প্রস্তাব জানিয়েছে।

পুরোনো উদাহরণ টেনে বিচারপতি আরও জানান, শুধুমাত্র একটি কার্যকরী বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারত। এ প্রসঙ্গেই বিচারপতি নাগরত্না বলেছেন, কেন্দ্র ও আরবিআই-এর তরফে দেওয়া নথি ও রেকর্ড থেকে বোঝা যাচ্ছে, যেন নোটবন্দি কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েছে, আরবিআই-এর স্বাধীন মত সেখানে ছিল না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে ৫৮টি পিটিশন জমা পড়েছিল। আবেদনকারীদের দাবি ছিল, সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিকল্পিত নয় এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত। যদিও এখন আর সিদ্ধান্ত বদল করা সম্ভব নয় বলে দাবি জানায় সরকার।