কুতুপালং-এর শরণার্থী শিবিরে ফ্রি রেশন থেকে শিক্ষা- তবু ‘ঘরে’ ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

জয়িতা মৌলিক, কক্সবাজার, বাংলাদেশ

ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি… পেরিয়েছো দেশ-কাল জানো না কি!- কক্সবাজারের কুতুপালং-এর রোহিঙ্গা শিবিরের এখন এটাই পরিস্থিতি। ফিরতে চান তাঁরা। কিন্তু “ফেরার পথ নাই”।

2017 মায়ানমারের সেনা ও বৌদ্ধ মৌলবাদীদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ-কক্সবাজারের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন রোহিঙ্গারা। পাঁচ বছর আগে যে সংখ্যাটা ছিল সাড়ে আট থেকে ন লাখ- সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ লাখ। এই সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাঁদের গতিবিধি মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত ওই শিবিরগুলির অঞ্চলের মধ্যেই। যদিও কুতুপালং-এ শিবির আছে।কোনও চেক পোস্ট নেই। বাইরেও বেরোতে পারেন যে কেউ। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে নানারকম সাহায্য পাচ্ছেন শরণার্থী শিবিরে থাকা মানুষজন। খাবার বাবদ জন পিছু বিনামূল্য রেশন দেওয়া হয় এই রোহিঙ্গাদের। চলছে শিক্ষা দানের প্রক্রিয়াও। নারী শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথাগত লেখাপড়ার পাশাপাশি চলছে কর্মশিক্ষার পাঠও। কিন্তু তাঁরা ঘরে ফিরতে চান। চান জন্ম ভিটেতে স্থান।

‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ’-কে স্থানীয় এক বৃদ্ধ জানালেন, এই শিবিরে তাঁদের সব আছে- খাওয়া- দাওয়ার সংস্থান, মাথার উপর ছাদ, চিকিৎসা, ছেলে মেয়ে লেখাপড়া। কিন্তু কোনোটাই পর্যাপ্ত নয়। কোনটাই তাঁদের পছন্দের নয়। ফলে তাঁরা চান নিজের মুলুকে ফিরে যেতে। মেয়েদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, একরাশ হতাশা বৃদ্ধের চোখে মুখে। তিনি বলেন, মেয়েরা কিছুটা গৃহবন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। যখনই বৃদ্ধ সীমান্ত বেরিয়েছিলেন তখন তার বাড়ির সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ গত পাঁচ বছরে তবে এরে দাড়িয়েছে সাত এভাবেই গত পাঁচ বছরে শরণার্থী শিবিরে শিশুর জন্মের ফলে ১২ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে এখন বাংলাদেশে।

তবে, বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে এই শরণার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। চলছে স্কুল। বিভিন্ন হাতের কাজ শিখিয়ে প্রথাগত শিক্ষার বাইরে হাতে-কলমে তাদের নিজ স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রকল্প চালু হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে Livelyhood Project। এর মধ্যে ছেলেদের যেমন ঝুড়ি তৈরি, বিভিন্ন বাঁশের সামগ্রী তৈরি, জামা-কাপড় তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তেমনই মেয়েদের ছোট জায়গার মধ্যে সবজি চাষ, হাতের কাজ, সেলাইয়ের ট্রেনিং দেওয়া হয়।য়াঁরা লেখাপড়ায় ভালো তাঁরা ওই শরণার্থী শিবিরগুলোতেই শিশুদের পড়ান। মোট ১০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। তার মধ্যে ৫০ জন বাংলাদেশী আর ৫০ জন রোহিঙ্গা। ৫০ জন বাংলাদেশীর মধ্যে সবাই মহিলা। আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষিকা। পথ চলতে চলতে হঠাৎ নজরে পড়ল একটি মাদ্রাসায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দুলে দুলে পড়ছে। প্রধানত বার্মিজ ভাষাতেই সেখানে শিক্ষা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ইংরেজিও পড়ানো হচ্ছে। কারণ ভাষা সমস্যা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় তীব্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই পড়া যায় সর্বোচ্চ ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত।

শরণার্থী শিবিরের রাস্তা দুধারে চোখে পড়ল নানা রকম বাঁশের জিনিসের দোকান, দর্জির দোকান। আছে মুদিখানা, বার্মিজ আচারের দোকান। বিভিন্ন আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের লোকেরা সমান পুঁজি যোগাড় করে ব্যবসা করছেন আর আর শরণার্থী শিবিরে থাকা মানুষ সেখান থেকে বিকিকিনি করছেন।

অপরাধ জগতের কালো ছায়াও রয়েছে সেখানে। রোজ সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে রোহিঙ্গা শিবিরে খুন-গুলি-হামলার ঘটনা। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, সন্ধের পরে অপরাধ জগত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এই অঞ্চলে। পুলিশি নিরাপত্তা যে পর্যাপ্ত নয়, তার প্রমাণ মিলছে রোজকার খুনাখুনির ঘটনায়। একদিন প্রাণের দায় মায়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন রোহিঙ্গারা। প্রাণ হাতে করে শুধুমাত্র ঘরের কিছু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন অজানার উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। দিয়েছে বসবাস করার সুযোগ। তবে, শরণার্থী শিবিরে নয়, নিজের দেশে সসম্মানে বাঁচতে চান রোহিঙ্গারা।

আরও পড়ুন- আবারও মিথ্যাচার! বাংলায় বন্দে ভারতে পাথর ছোড়া হয়নি, বিবৃতি রেলের

 

Previous articleআবারও মিথ্যাচার! বাংলায় বন্দে ভারতে পাথর ছোড়া হয়নি, বিবৃতি রেলের
Next articleমেসিদের বিরুদ্ধে অভিষেক হতে চলেছে রোনাল্ডোর, জানালেন আল নাসেরের কোচ এরিক গার্সিয়া