মোদি-শাহের ‘জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে প্রশ্ন রোমিলার, ‘মিথ্যা ইতিহাস’ লেখার পাল্টা অভিযোগ বিজেপির

থাপারের বক্তব্যে নতুন করে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলেই পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) বারবার ‘জাতীয়তাবাদ’-এর ধুয়ো তুলে নতুন করে ইতিহাস লেখার প্রয়োজনের কথা বলছেন। পাশাপাশি ইতিহাসে মোগলরা (Mughal) গুরুত্ব পেয়েছেন আর চোল-গুপ্ত-মৌর্য রাজারা উপেক্ষিত থেকে গিয়েছেন বলে মনে করে বিজেপি। এরপরই নতুন ইতিহাসে প্রাচীন ভারতের ‘গৌরবময় অতীত’ তুলে আনতে বললেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার। এদিকে থাপারের বক্তব্যে নতুন করে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলেই পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র (Kapil Mishra)। আর সেকারণেই ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (India International Centre) কর্তৃপক্ষের কাছে বক্তৃতা বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

কপিল অভিযোগ আরও অভিযোগ তোলেন, রোমিলা থাপারের মতো ব্যক্তিরা মিথ্যা ইতিহাস লেখেন, ভুয়ো তথ্য দিয়ে হিন্দুদের গণহত্যার পক্ষে যুক্তি দেন। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্যও হল বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যা প্রচার। পাশাপাশি বিজেপি নেতার হুঁশিয়ারির জেরে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের সময় বাড়তি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেন্টারের সদস্য ও আমন্ত্রিত ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও বক্তৃতার সময় প্রেক্ষাগৃহে একটিও আসন খালি ছিল না। ভরা প্রেক্ষাগৃহে বছর একানব্বইয়ের রোমিলা কার্যত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদেরই পাল্টা জবাব দিয়েছেন। পেশাদার, প্রশিক্ষিত ইতিহাসবিদের সঙ্গে বানানো গল্প, রূপকথাকে ইতিহাস বলে চালানো বিভিন্ন দলের যে ফারাক রয়েছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

সম্প্রতি দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে সি ডি দেশমুখ স্মারক বক্তৃতায় বক্তব্য রাখেন ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার। আমাদের ইতিহাস, তাদের ইতিহাস, কাদের ইতিহাস-এই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন থাপার। তবে বক্তৃতার একেবারে শুরুতেই হলদিঘাটে মোগল সম্রাটদের সঙ্গে রাজপুতদের যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে আনেন। ইতিহাসবিদ বলেন, ওই যুদ্ধে মোগলদের সেনাপতি ছিলেন রাজা মান সিংহ। আবার তেমন আফগান যোদ্ধাদের নেতৃত্বে ছিলেন শের শাহ সুরির বংশধর হাকিম খান সুরি। তাহলে মোগল বনাম রাজপুতদের যুদ্ধকে কী ভাবে হিন্দু বনাম মুসলমানের লড়াই বলা যায়?

রোমিলা আরও বলেন, স্কুলে যে ইতিহাস পড়ানো হবে, তা নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণভিত্তিক, প্রশিক্ষিত ইতিহাসবিদদের লেখা হওয়াটা জরুরি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক থাপার একই সঙ্গে মনে করিয়েছেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যে জাতীয়তাবাদ গোটা দেশকে এককাট্টা করেছিল, সবাইকে একটাই ভারতীয় পরিচিতি দিয়েছিল, তার সঙ্গে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিভাজনকারী জাতীয়তাবাদের বিস্তর ফারাক রয়েছে। তাঁর স্পষ্ট কথা, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতা অর্জনে একটিমাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়েছিল। হিন্দু ও মুসলমান—দুই ধর্মের জাতীয়তাবাদ দেশ ভাগ করেছে। মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান তৈরি হয়েছে। হিন্দুরা হিন্দুরাষ্ট্রের কিনারায় এগিয়ে যাচ্ছে। ঔপনিবেশিক পরিকল্পনাই ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে। অন্যদিকে লাভ জিহাদ’ নিয়েও মন্তব্য করেন রোমিলা থাপার।

 

 

Previous articleআইনি জটে ফের পিছোল ডিএ মামলা, ১৫ মার্চ শুনানি
Next articleযৌনতার ফাঁদ পেতে চিকিৎসকের থেকে ১১ লাখ আদায়,ধৃত দিল্লির যুবক