চারিদিকে বরফ! খোলা আকাশের নীচেই অনশন রিয়েল লাইফ র‍্যাঞ্চোর

চারিদিকে বরফ আর বরফ। তাপমাত্রা মাইনাস ১৮.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। প্রবল শৈত্যপ্রবাহে মধ্যেই দাঁতে দাঁত চেপে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাস্তবের র‍্যাঞ্চো ওরফে পরিবেশবিদ সোনম ওয়াংচুক। তাঁর প্রিয় লাদাখ এবং সেখানকার মানুষদের বাঁচাতে তিনি বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোনম একটি ভিডিওবার্তায়আবেদন করেন, “আপনি হস্তক্ষেপ করুন। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী লাদাখের প্রকৃতিকে বাঁচান।”

আরও পড়ুন:আমাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে, লাদাখে গণতন্ত্র নেই: ভিডিওবার্তা সোনম ওয়াংচুকের

অপরিকল্পিত নগরায়নে দ্রুত বদলে যাচ্ছে জলবায়ু, যার ফলশ্রুতিতে প্রকৃতির ভয়াবহ রোষানল আছড়ে পড়ছে পাহাড়ের মানুষের উপর। জোশীমঠ সহ উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গার ভয়াবহ ভূমিধস তার প্রমাণ।প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোনম আবেদন করেছিলেন, লাদাখে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। তার জেরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে। আপাতত মানুষের জীবিকার সুবিধা হলেও কয়েকদিনের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে গোটা লাদাখ। তাই লাদাখ-সহ হিমালয়ের অন্যান্য অঞ্চলকে রক্ষা করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর। মোদির দৃষ্টি আকর্ষণই ছিল সোনমের মূল লক্ষ্য। তাই গত ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে খরদুংলা পাসে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অনশন শুরু করেন সোনম। আজ সোমবার শেষ হচ্ছে ৫ দিন ব্যাপী সেই অনশন।

তবে এর মধ্যেই সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখার অভিযোগ তুলেছেন সোনম। দীর্ঘ ১৮ মিনিটের ভিডিওয় তাঁকে লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ”সমস্ত মানুষই কষ্টে রয়েছেন। যেমন যুব সম্প্রদায়ের কথাই ধরা যাক। তাঁরা চাকরি পাচ্ছেন না। ১২ হাজার চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও চাকরি পেয়েছেন ৮০০ জন। তাও পুলিশে। মানুষকে অবদমন করে রাখার জন্য। চারদিকে প্রতিবাদ হচ্ছে। মানুষ ভয় পাচ্ছে।”

রবিবার নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে আরও একটি বিস্ফোরক অভিযোগ করেন সোনম। জানান, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির প্রশাসনের তরফে বন্ড কাগজ পাঠানো হয়েছে তাঁকে। সেখানে বলা হয়েছে, লেহ জেলার সাম্প্রতিক অনুষ্ঠান বিষয়ক কোনও ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা, বিবৃতি দেওয়া, জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণ, কিংবা এই বিষয়ক কোনও জনসমাবেশে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। এমনকী, তাঁর বাড়ির এলাকার মধ্যেই অনশন সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয় তাঁকে।যদিও সোনমের অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, সোনম ওয়াংচুককে আধুনিক লাদাখের রূপকার বলা যায়। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন এই ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ম্যাগসেসে পুরস্কার। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই ‘থ্রি ইডিয়টস’  সিনেমায় র‍্যাঞ্চোর চরিত্রটি ভাবা হয়েছিল, যেখানে র‍্যাঞ্চো ওরফে ফুংসুক ওয়াংড়ুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আমির খান। বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ প্রতিষ্ঠা করেন সোনম। পুরো ক্যাম্পাসটিতে কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ব্যবহার করা হয় না জীবাশ্ম জ্বালানিও। সেখানে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সমস্ত বৈদ্যুতিক কাজকর্মই হয় সৌরশক্তিতে।

 

Previous articleরাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অখিলের মন্তব্য মামলায় ক্লিনচিট মুখ্যমন্ত্রীকে
Next articleএবার ডিজিটাল চোরের খপ্পরে আসানসোলের পরিবার, দুপুরে চুরি করে রাতে মজার whatsapp