কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে রাজ্যের অভিযোগে ‘সিলমমোহর’ রাজ্যপালের!

কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা নিয়ে রাজ্য সরকারের অভিযোগে সিলমমোহর রাজ্যপালের। বুধবার, বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের স্বাগত ভাষণে এই কথা তুলে ধরনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose)। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন রাজ্যপাল। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সাফল্যও তুলে ধরেন।

একশো দিনের কাজ থেকে আবাস ও সড়ক প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া দীর্ঘদিন ধরে আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাকে বঞ্চনা করা নিয়ে বারবার দিল্লির কাছে দরবার করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের এই অভিযোগেই এদিন সিলমোহর দিয়েছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ অর্থ না পাওয়ায় রাজ্যে এই সব প্রকল্পের কাজ ব্যহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাজ্যপাল বলেন, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজ, গ্রামীণ আবাস ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে রাজ্য প্রথম স্থানে ছিল। কিন্তু এ বছর এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য টাকা মেলেনি। ফলে এই এবার এই তিন প্রকল্প রূপায়ণে বিশেষ সাফল্য অর্জন করা যায়নি। এই তিন প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়ার পরিমাণ ১১হাজার ৮০০ কোটি টাকা বলে বিধানসভায় জানান সিভি আনন্দ বোস। এর ফলে রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন রাজ্যপাল। গরিব মানুষের স্বার্থে কেন্দ্র দ্রুত রাজ্যের বকেয়া মিটিয়ে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সাম্প্রতিক কালে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে রাজ্যপাল বলেন করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে রাজস্ব আদায় এ পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত জিএসটি আদায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, বিদ্যুৎ মাশুল আদায় ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়াও বৃত্তি কর, আবগারি কর, স্ট্যাম্প ডিউটি-সহ প্রত্যক্ষ কর আদায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।

রাজ্যপাল জানান, কৃষি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৩৪ হাজার একর জমি সেচের আওতায় এনে চাষ যোগ্য করে তোলা হয়েছে। এর ফলে ডাল, ভুট্টা তৈলবীজ উৎপাদন বহু গুণ বেড়েছে। ফুল-ফল-সবজি উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটির সৃষ্টি ও কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরে তিনি জানান, কৃষক-বন্ধু নতুন প্রকল্পের অধীনে এপর্যন্ত ৫০৩২ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নদী ভাঙন রুখতে পশ্চিমবঙ্গ বৃহৎ সেচ ও বন্যা ব্যবস্থাপন প্রকল্প নামে একটি বড়সর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হুগলির ভাঙন প্রবণ এলাকায় নিজস্ব কোষাগারের টাকায় নদী ভাঙন আটকাতে কাজ করছে রাজ্য।

শিল্প ক্ষেত্রে রাজ্যের উন্নয়নের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে শিল্প সাথী পোর্টাল নবরূপে দান ও তাজপুরে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন রাজ্যপাল। বলেন ওই প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে। আরও বেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই এখন রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য। রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে এবং রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকার সর্বদা তৎপর।

আরও পড়ুন- বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কী জানালেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা

বাজেট অধিবেশনের সূচনায় রাজ্যপালের ভাষণ গতানুগতিক বিষয়। এবারের অধিবেশনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে, রাজ্যপাল কেন্দ্রের প্রতিনিধি। তাঁর মুখে রাজ্যের বঞ্চনার উল্লেখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, এর ফলে রাজ্যের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের উপর পরোক্ষে চাপ বাড়ল।

 

 

 

Previous articleবিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কী জানালেন জিটিএ প্রধান অনীত থাপা
Next articleপার্ক স্ট্রিটে পতাকা বিড়ির হেড অফিসেও তল্লাশি আয়কর দফতরের