“ভোট আসলেই মোদি রামচন্দ্রকে পোলিং এজেন্ট বানিয়ে দেন”! দাবি শুভেন্দুর, ভিডিও ছাড়লেন কুণাল

কয়েক বছর আগেও শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, ভোট আসলেই মোদি রামচন্দ্র পুরুষোত্তমকে পোলিং এজেন্ট বানিয়ে দেয়। কিন্তু প্রকৃত হিন্দুত্বের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই

এই মুহূর্তে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে গিয়েছেন তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে ময়দানে প্রচার, জনসংযোগ, সাংবাদিক বৈঠক যেমন করছেন, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিজেপির মুখোশ খুলছেন। বিশেষ করে দলবদলু কিছু নেতার মুখ আর মুখোশের পার্থক্যটা জনসমক্ষে তুলে আনলেন।

আজ, সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সাড়ে তিন মিনিটের ভিডিও পোস্ট করেন কুণাল। যেখানে দলবদলু বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখোশ তিনি খুলে দেন। কুণাল ঘোষ বারে বারে দাবি করেন, শুভেন্দু সিবিআই-ইডি থেকে বাঁচতে বিজেপিতে যোগ দিয়ে অমিত শাহের জুতো পালিশ করছেন। নারদা কাণ্ডে FIR-এ শুভেন্দুর নাম জ্বলজ্বল করছে। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন খোদ শুভেন্দুর নামে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। যে শুভেন্দু এখন আরএসএস অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, তিনি কয়েক বছর আগেও সঙ্ঘ পরিবারের বাপবাপান্ত করেছেন। নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। এদিন ভিডিও পোস্ট করে ফের একবার হিন্দুত্বের ভেকধারী শুভেন্দুর মুখোশ খুলে দিলেন কুণাল।

কুণাল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্টের ক্যাপশনে শুভেন্দু ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের নিশানা করে লিখছেন, “সুপ্রভাত। যাঁরা আমার দশ বছর আগের ভিডিও দেন, তাঁদের মাত্র তিনচার বছর আগের মিষ্টি একটা ভিডিও দিলাম। আশা করি ভালো লাগবে। মনে রাখবেন, আমি দলবদল করিনি। ওটা দলবদলু।”

ভিডিওটি সম্ভবত ২০১৯ বা ২০২০ সালের প্রথমের দিকে। সাড়ে তিন মিনিটের সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন শুভেন্দু। বিজেপি এবং আরএসএস-কে নিশানা করে তিনি বলছেন, “বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নাও দুর্বৃত্ত। বিজেপির এখন দুটো ভাঙা রেকর্ড আছে। এখন আর ১৫ লাখ নেই, উন্নয়ন নেই। এখন শুধু ভারত মাতা কী জয়, আরে ভারত মাতার জয় আমরাও বলি। আমার পরিবারের লোকও স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, ব্রিটিশের জেলে বন্দি ছিলেন। এটা স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিজেপির যারা ঠাকুরদা ছিল, সেই জনসংঘ আরএসএস, তারা ব্রিটিশের দালাল ছিল। আরএসএসের অন্যতম পুরোধা সাভারকার ব্রিটিশের স্প্যাই ছিলেন, ব্রিটিশের গোয়েন্দা ছিলেন। ইংরেজদের তিনি বলতেন ‘আমাকে জেল থেকে ছেড়ে দাও তাহলে আমি স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের ধরিয়ে দেবো!’

শুভেন্দুর আরও সংযোজন, “এরা সব ইংরেজদের দালাল। আমরা গান্ধীজিকে পুজো করি, আর এরা গান্ধীজিকে যে খুন করেছিল সেই নাথুরাম গডসের গলার মালা পরায়। স্বাধীনতা আন্দোলনে বিজেপির কোনোল ভূমিকা ছিল না, এদের মুখে ভারত মাতার জয় মানায় না, দেশপ্রেম মানায় না। আমরা তেরঙ্গা পতাকাকে, বন্দে মাতারামকে ইজ্জত দিতে জানি।”

এখানেও শেষ নয়, বিজেপির হিন্দুত্ব ও বিভাজনের রাজনীতির তীব্র নিন্দা করছেন শুভেন্দু। বক্তব্যে তিনি বলছেন, ”এদের আর একটা এজেন্ডা হল হিন্দুত্ব। ১৯৯১ থেকে ২০১৯, সব ভোটে শুধু হিন্দুত্বের জিগির। বলছে মন্দির বানাবো কিন্তু সেই মন্দির কেউ দেখতে পাবেন না। রাম মন্দির হবে কিন্তু সেই তারিখ কেউ জানতে পারবে না। আর জিজ্ঞাসা করলেই বলবে সুপ্রিম কোর্ট দেখছে। আরে তালাক আইন যদি তোমরা অডিনেন্স করে করতে পারো তাহলে রাম মন্দির অর্ডিন্যান্স করে করলে না কেন।”

ভোটের ময়দানে বিজেপির হিন্দুত্বের তাসকে কটাক্ষ করে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমরা শ্যামা সংগীত শুনি, যা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। শ্রীচৈতন্যদেব নদীয়া থেকে পুরী গিয়েছিলেন, যাত্রাপথে অনেক মুসলিমের বাড়ি ছিলেন তিনি। রানী রাসমণি যে দক্ষিণেশ্বর মন্দির করেছিলেন সেখানে মাজার ছিল, রানী রাসমণি মন্দিরও রেখেছেন মাজারও রেখেছেন। তাই বাংলার মাটিতে ওসব ধর্মের নামে বিভাজন চলবে না। ভোট আসলেই মোদি রামচন্দ্র পুরুষোত্তমকে পোলিং এজেন্ট বানিয়ে দেয়। কিন্তু প্রকৃত হিন্দুত্বের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।”

আরও পড়ুন:Entertainment:’বিগ বস ১৬’-র বিজয়ী এম সি স্ট্যান, পুরস্কার কত টাকা পেলেন জানেন?