গেরুয়ায় মাথা ঢেকে মন্ত্রীর বাড়িতে আড্ডা অরিজিতের, ফের মুখে চুনকালি বিজেপি নেতাদের

কনসার্টের সেই রেশ যেন কাটছেই না কাটতেই এবার সোজা ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে গিয়ে অরিজিৎ বুঝিয়ে দিলেন সস্তায় রাজনীতি তাঁর একেবারেই না পসন্দ। ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে প্রিয়দর্শিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সেই ছবি

শনিবসার সন্ধ্যায় অ্যাকোয়াটিকার সুপার হিট শো থেকে তাঁকে কেন্দ্র করে যাবতীয় গেরুয়া বিতর্কে জল ঢেলেছিলেন জনপ্রিয় গায়ক অরিজিৎ সিং নিজেই। আর রবিবার চলে যান কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলার বাড়িতে। একেবারে গেরুয়ায় মাথা ঢেলে খোশ মেজাজে মন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে গল্পে-আড্ডায় মেতে উঠলেন অরিজিৎ। খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনায় ফের মুখে চুনকালি পড়ল বিজেপি নেতাদের।

অরিজিৎ সিংকে নিয়ে সস্তায় রাজনীতি করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী থেকে দিলীপ ঘোষ, অমিত মালব্যরা। কিন্তু কলকতায় ঐতিহাসিক কনসার্টের মঞ্চ থেকে তাঁদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছিলেন গায়ক। “গেরুয়া” কারও পৈতৃক সম্পত্তি বা পেটেন্ট নয়। এই রং ত্যাগের রং, সন্ন্যাসীদের রং, এই রং স্বামীজীর রং।” নাম না করে গানের ভাষাতেই কষে থাপ্পড় মেরে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, অমিত মালব্যদের। গেরুয়া পাগড়ি পরে কলকাতার অ্যাকোয়াটিকায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পারফর্ম করে দর্শকদের মাতিয়েছেন বাংলার গর্ব, দেশের গর্ব অরিজিৎ সিং। গানে গানে কড়া জবাবও দিয়েছেন বিজেপিকে।

কনসার্টের সেই রেশ যেন কাটছেই না কাটতেই এবার সোজা ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে গিয়ে অরিজিৎ বুঝিয়ে দিলেন সস্তায় রাজনীতি তাঁর একেবারেই না পসন্দ। ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে প্রিয়দর্শিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সেই ছবি। বাড়িতে আসা অতিথিকে নিয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত মেয়র কন্যা। ছবিতে দেখা যায়, সোফায় ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বসে খোশমেজাজে গল্প করছেন অরিজিৎ। তাঁর মাথায় তখনও সেই গেরুয়া ফেট্টি। মহানাগরিকের বাড়িরে অন্য সদস্যদের সঙ্গেও হাসিমুখে ছবি তুলেছেন গায়ক।

ছবি পোস্ট করে ফিরহাদ কন্যা প্রিয়দর্শিনী লিখেছেন, “গত রাতের কনসার্টে অরিজিৎ সিংকে লাইভ শোনার ঘোর এখনও কাটেনি আমার। তার মধ্যেই এবার আমাদের বাড়িতে হাজির স্বয়ং গায়ক। তাঁর ব্যবহার ঠিক তাঁর গানের মতোই সপ্রতিভ।”

খুব স্বাভাবিকভাবেই এমন ঘটনায় গাত্রদাহ শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির কিছু দলবদলু নেতার। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ প্রিয়দর্শিনী হাকিমের পোস্ট করা ছবিটিগুলি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ার করে লিখেছেন, “গেরুয়া স্বামীজীর রং। এই কথাটা বলতেই কি ববি হাকিমের বাড়িতে উপস্থিত হতে হল স্বয়ং শ্রী অরিজিৎ সিং কে? এই না হলে আমার এগিয়ে বাংলা!” অন্যদিকে, তৃণমূলের বক্তব্য, “অরিজিৎ সিং যা বলেছেন সঠিক কথা বলেছেন। অকারণ একটি রং নিয়ে রাজনীতি করছিল বিজেপি। গায়ক নিজের মতো করে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মানুষ তা শুনেছেন।”

উল্লেখ্য, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে অরিজিৎ সিং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে গান গাইতে গিয়ে ”রং দে তু মোহে গেরুয়া…” গেয়েছিলেন। যেহেতু মঞ্চে শাহরুখ খান ছিলেন, তাই বলিউড বাদশাকে সম্মান জানিয়ে তারই একটি ছবির এই গান গিয়েছিলেন অরিজিৎ। আর তা নিয়েই যাবতীয় বিতর্ক।

কাকতালীয়ভাবে ওই সময়ে ইকো পার্ক থেকে তাঁর কনসার্ট সরানো নিয়ে খামোখা বিতর্ক উস্কে দেয় বঙ্গ বিজেপির কিছু নেতা। ওই সময় শুভেন্দু-দিলীপ-অমিত মালব্যদের দাবি ছিল, “সিনেমা উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে গেরুয়া গাওয়ার জন্যই ইকো পার্কে বাতিল করা হয়েছে এই শো।” যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা।

যদিও তাঁকে নিয়ে তৈরি এই যাবতীয় বিতর্কে একটিবারের জন্যও মুখ খুলতে দেখা যায়নি অরিজিৎ সিংকে। কিন্তু, শনিবার অ্যাকোয়াটিকার কনসার্ট থেকে অবশেষে “গেরুয়া বিতর্ক” নিয়ে ভরা কনসার্টের মঞ্চে দাঁড়িয়েইতাৎপর্যপূর্ণ
মন্তব্য করেন গায়ক।

সম্ভবত বিজেপির বাজার গরম করা বিতর্কের জবাব দিতেই ফের মঞ্চে ”রং দে তু মোহে গেরুয়া…” গানটি করেন অরিজিৎ সিং। এরপরেই হাততালির বন্যা বয়ে যায়। মঞ্চে গিটার হাতে অরিজিতের হয়ে কথা বলে তাঁর গান। কিন্তু, এদিন গেরুয়া গান শেষ করার পর অরিজিৎ বলেন, “এই গান নিয়ে প্রচুর জল্পনা কল্পনা হল। কিন্তু, গেরুয়া রংটা তো সন্ন্যাসীদের রং রে বাবা! স্বামী বিবেকানন্দও তো গেরুয়া পরতেন। তিনি যদি কোনও দিন সাদা পরতেন সেক্ষেত্রেও কি এত বিতর্ক হত?” মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নাম না করে অমিত মালব্য, শুভেন্দু অধিকারীদের অরিজিৎ বুঝিয়ে দিলেন গেরুয়া রং বিজেপির পৈতৃক সম্পত্তি নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বলেন, গেরুয়া প্রীতি, হিন্দুত্ব বিজেপির থেকে শেখার নেই। তার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ আছেন। অরিজিৎ যেন কনসার্ট থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষাতেই জবাব দিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরকে।

আরও পড়ুন:মেয়ের ‘ভর’ হয়েছে! তা*ন্ত্রিকের কাছে মা নিয়ে যেতেই এ কী হল!

 

 

 

 

 

Previous articleমেয়ের ‘ভর’ হয়েছে! তা*ন্ত্রিকের কাছে মা নিয়ে যেতেই এ কী হল!
Next articleবদ্রীনাথ হাইওয়েতেও ফা*টল! চারধাম যাত্রা নিয়ে আ*শঙ্কা