বিশ্বভারতী তার অতীতের গৌরব হারিয়েছে। কবিগুরুর চিন্তাধারা আজ অবরুদ্ধ। সেই হারানো গৌরব ফেরাতে বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে বদলের দাবি জানালেন বিশিষ্টজনেরা।রবিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র চিন্তার মুক্তধারা অবরুদ্ধ’ এই শীর্ষক আলোচনা সভায় অভীক সরকার বলেন, রবীন্দ্রনাথ যে চিন্তাধারা নিয়ে বিশ্বভারতী শুরু করেছিলেন তার বিপরীত পথে হাঁটছেন বর্তমান উপাচার্য।তিনি স্পষ্ট বলেন, এমনকী অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে। তাকে সেখান থেকে উৎখাত করা চেষ্টা করছে বিশ্বভারতী।কিছুদিন আগে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন, অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পাননি।উনি নিজেও জানেন উনি মিথ্যাচার করছেন। উপাচার্য সব জেনে শুনেই এমন মন্তব্য করছেন। তিনি কোনও অভিসন্ধি নিয়ে এই ধরনের কথা বলছেন। মনে রাখতে হবে যে অমর্ত্য সেন কিন্তু এখনও ভারতীয় নাগরিক।
নাট্যকার অভিনেতা মনোজ মিত্র বলেন, এখন যিনি উপাচার্য তিনি ছাত্রদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেন যা কোনও ভাবেই কাম্য নয়।উপাসনা গৃহকে অপমান করে বারবার আশ্রমিক ও প্রাক্তনীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। তিনি বিশ্বভারতীকে রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় বলেন, শিক্ষার যে সর্বব্যাপী স্থান তাতে বাধা সৃষ্টি করছেন উপাচার্য। বাংলাকে মারবার জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা যাকে নিয়ে গর্ব করি সেই অমর্ত্য সেনকে পর্যন্ত অসম্মান করা হচ্ছে।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, যা কোনওভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়।
চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন প্রশ্ন তোলেন, বিশ্বভারতীর উপাচার্য কোন অধিকারে অমর্ত্য সেনের মতো মানুষের সমালোচনা করেন।বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, সমাবর্তন উৎসব থেকে যে তিন জনকে অধ্যাপককে বাদ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে আমিও একজন। কারণ আমি উপাচার্যের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেছিলাম। সমাবর্তন উৎসব থেকে কোনও ছাত্রের হাতে ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয়নি। কোন বিশিষ্টজন ছিলেন না। সমস্ত প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে হয়েছে সমাবর্তন উৎসব।
তিনি অভিযোগ করেন, এই চার বছরে কোনও নতুন নিয়োগ হয়নি, তারই পাশাপাশি বিশ্বভারতীর পড়াশোনার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শিক্ষক ছাত্রদের অন্যায় ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষকেরই পদোন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বর্তমান উপাচার্য।ঐতিহ্যের পৌষ মেলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।সুপ্রিয় চৌধুরী বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তিনি বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশ্বভারতী নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট প্রায় ১০০টি মামলা চলছে। আদালত অবমাননা দায়ে পড়েছে বিশ্বভারতী। বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তারা।
ডঃ দেবপ্রিয় মল্লিক বলেন, বিশ্বভারতীর গৌরব ফেরাতে দ্রুত উপাচার্য বদল করা উচিৎ। নাহলে কবিগুরুর চিন্তাধারা পড়ুয়াদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে।এদিন বিশিষ্টজনেরা একযোগে বিশ্বভারতীর হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফেরাতে উপাচার্য বদলের পক্ষে সওয়াল করেন।