বিদায় বলিউডের ‘ক্যালেন্ডার’, সমাজমাধ্যমের ক্যানভাসে এখনও রঙিন সতীশ !

যিনি অভিনয় দিয়ে হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, আবার পরিচালক হয়ে উপহার দিয়েছেন দারুন সব ছবি, সেই শিল্পীর ৬৬ বছর বয়সে হঠাৎ প্রয়াণ কি মেনে নেওয়া যায়?

‘জন্মিলে মরিতে হবে’ এ কথা যেন জীবনের মতোই সত্যি। তাই যে কটা দিন পৃথিবীতে থাকা প্রতিমুহূর্তে হাসি আনন্দে সকলকে ভরিয়ে রাখার মধ্যেই যেন বেঁচে থাকার সার্থকতা। তাইতো হোলির রং মাখা হাসিমুখটা একদিনের মধ্যেই সাদাকালো ফ্রেমে বন্দি হয়ে যাবে সেটা মেনে নিতে পারছে না বলিউড (Bollywood)। প্রয়াত সতীশ কৌশিক (Satish Kaushik)। বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতেই মনখারাপ করা খবর ছড়িয়ে পড়েছে বি টাউনে। শুধু কী বলিউড? আকস্মিক এই ঘটনায় মন ভেঙেছে অনুরাগীদেরও। যিনি অভিনয় দিয়ে হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, আবার পরিচালক হয়ে উপহার দিয়েছেন দারুন সব ছবি, সেই শিল্পীর ৬৬ বছর বয়সে হঠাৎ প্রয়াণ কি মেনে নেওয়া যায়?

৪৫ বছরের বন্ধুত্বে হঠাৎ ছেদ পড়ার কথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবার গোচরে এনেছিলেন অভিনেতা অনুপম খের (Anupam Kher)। হোলি উৎসবে প্রাণ ভরে রং খেলার পরে রাত ১১টা নাগাদ হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন সতীশ কৌশিক(Satish Kaushik)। তাঁকে তখনই গুরুগ্রামের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃ*ত্যু হয় অভিনেতা পরিচালকের। ময়না তদন্তের রিপোর্ট অস্বাভাবিক মৃত্যুর কোনও প্রমাণ দেয়নি। মায়ানগরীতে অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানা যাচ্ছে। হরিয়ানায় জন্মেছিলেন সতীশ। ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ছাত্র সতীশ ফিল্মি কেরিয়ার শুরু করেন মাসুম ছবি দিয়ে। কয়েক বছর পরই মিস্টার ইন্ডিয়া-য় তাঁর চরিত্র ক্যালেন্ডার দর্শকদের চমকে দেয়। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে বহু ছবিকে কমেডিয়ানের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে কৌশিককে। শেষ অভিনয় কঙ্গনা রানাউতের (Kangana Ranaut) পরিচালনায় এমার্জেন্সি (Emergency) ছবিতে। জগজীবন রাম (Jagjivan Ram) ওরফে বাবুজির ভূমিকায় অসাধারণ কাজ করেছিলেন অভিনেতা, বলছেন পরিচালক নিজেই। কিন্তু বড়পর্দায় সেই কাজ দেখার সুযোগ টুকু আর হল না, মৃত্যুর এমার্জেন্সিতে বাস্তবের জীবন ছাড়তে হল অভিনেতা সতীশকে । তাঁর স্মৃতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কঙ্গনা লিখেছেন, ‘কী ভীষণ একটা খারাপ খবর শুনে ঘুম থেকে উঠলাম। আমার সবচেয়ে বড় চিয়ারলিডার ছিলেন উনি। একজন ভীষণ সফল পরিচালক আর অভিনেতা সতীশ কৌশিক। একজন সত্যিকরের ভাল মানুষ ছিলেন উনি। ইমার্জেন্সি ছবিতে ওঁকে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা অনবদ্য। ওঁকে চিরকাল মিস করব। ওম শান্তি।’


বলিউডের বিনোদন পরিবারের অন্যতম সদস্য ছিলেন সতীশ। মিস্টার ইন্ডিয়া ছবিতে তার অভিনীত ক্যালেন্ডার চরিত্র প্রতিটি ভারতীয় দর্শকের কাছে এক বিশেষ প্রাপ্তি। কমেডিয়ান হিসেবে নিজেকে যথাযথ করে গড়ে ছিলেন তিনি। যখন নেগেটিভ চরিত্রের অফার এসেছে সেখানেও নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অভিনয়ের সঙ্গে একশ শতাংশ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছেন সতীশ। জানে ভি ইয়ারো-র লেখক সতীশকে ক্যামেরার পেছনে প্রথমবার দেখা যায় ১৯৯৩ সালে ‘রূপ কি রানী চোরো কা রাজা’ ছবিতে। পরে আরও একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন-প্রেম। তবে পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম সাফল্য আসে হাম আপ কে দিল মে রহতে হ্যায় (১৯৯৯) এবং তেরে নাম (২০০৩) ছবিতে। দোলের আনন্দ আর রঙের হুল্লোরে এখনো জ্বলজ্বল করছে সতীশের হাসি মুখ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকাল থেকে সেই সব ছবি ঘোরাফেরা করছে। অভিনেত্রী রেখা (Rekha) ২০২৩ সালে হোলি উৎসবের একগুচ্ছ ছবি শেয়ার করে স্মৃতিচারণায় কাতর।

অভিনেতা সুনীল শেট্টি (Sunil Shetty) লিখেছেন, ‘আজ আমরা ইন্ডাস্টির একজন নিপুণ অভিনেতাকে হারিয়ে ফেললাম। যাঁরা তাঁকে চেনেন, জানেন, তাঁদের কাছে ওঁর স্মৃতি আশীর্বাদের মতোই। ওঁর পরিবারের জন্য সমবেদনা’।

প্রিয় অভিনেতার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না অমিতাভ পুত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিষেক বচ্চন (Abhishek Bacchan) লেখেন, ‘আমাদের সবার প্রিয় সতীশ কৌশিক জির প্রয়াণের খবর পেয়ে আমি অবাক, বাকরুদ্ধ। একজন সত্যিকরের ভদ্রলোক, সৎ মানুষ। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির একটা একটা বড় ক্ষতি। শান্তিতে ঘুমোন সতীশ আঙ্কল। আপনাকে বড্ড মনে পড়বে।’

অভিনেতা রীতেশ দেশমুখের (Ritesh Deshmukh) কাছে সতীশ কৌশিক মানে শিক্ষার এক বড় ইনস্টিটিউশন যা এক লহমায় শূন্য হয়ে গেল। রীতেশের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ধরা পড়েছে সেই অনুভূতি। তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি নেই। তোমার সেই প্রাণখোলা হাসি এখনও কানে বাজে। এত ভাল আর সৎ একজন সহ অভিনেতা হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তোমায় মিস করব। সবসময় তুমি আমাদের মনের মধ্যে বেঁচে থাকবে।’


সামাজিক মাধ্যমের পাতায় পুরনো ছবি শেয়ার করে শোকপ্রকাশ করেছেন নস্টালজিক সুভাষ ঘাই (Subhash Ghai)। প্রিয় বন্ধুর এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না তিনি।

অভিনেতা-পরিচালক সতীশ কৌশিকের আকস্মিক প্রয়াণে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা কখনও পূরণ করা সম্ভব নয়।সতীশের আচমকা মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন নীনা গুপ্তা। শোকবার্তা জানিয়ে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী। অবিবাহিত অবস্থায় নীনার গর্ভে সন্তান এসে যাওয়ায় তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সতীশ। এতটাই উদার মনের মানুষ ছিলেন তো প্রয়াত কমেডিয়ান। ‘রাম লক্ষ্ণণ’ ছবির কাশীরাম অভিনয় গুণেই নজর কেড়েছিলেন দর্শকদের। বলিউড বলছে ‘ দিওয়ানা মাস্তানা’ ছবির পাপ্পু পেজার-কে দর্শক কোনদিনও ভুলতে পারবেন না। এখানকার কাজ শেষ হয়েছে, তাই এবার সতীশ পাড়ি দিলেন তারার দেশে।

 

Previous articleহিন্দি-ইংরেজি ‌নয়, লিখতে পারবেন না বাংলাতেও ! অনুব্রতর দাবিতে তাজ্জব ইডি
Next articleচতুর্থ টেস্টে অনন্য নজিরের সামনে দাঁড়িয়ে বিরাট-অশ্বিন