কানাইপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃ*ত্যুর ৯ মাস পরে পুনর্তদ*ন্তের নির্দেশ

উত্তরপাড়া থানার কানাইপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ৯ মাস পরে ফের তদন্তের নির্দেশ দিল শ্রীরামপুর আদালত (Srirampur Court)। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গঙ্গায় ডুবে একমাত্র ছেলে সৌতন দাসের অস্বাভাবিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি বাবা সৌমেন দাস। মৃত্যুর ঘটনার ৯ মাসের মাথায় পুনর্তদন্ত চেয়ে শ্রীরামপুর আদালতের দ্বারস্থ হন বাবা। আবেদন মঞ্জুর করে শ্রীরামপুরের আদালত। শ্রীরামপুর থানার পুলিশকে (Srirampore Police Station)সৌতন মৃত্যুর পুনর্তদন্তের নির্দেশ দেন। অভিযুক্তদের আইনজীবীর দাবি, সৌতনের মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা। মিথ্যে খুনের অভিযোগ করে তাঁর মক্কেলদের সামাজিক সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে।

শ্রীরামপুর আদালত সূত্রে খবর, উত্তরপাড়া থানার কানাইপুরের বাসিন্দা সৌমেন দাস ২০২২ সালের ২০ জুলাই অভিযোগ করেন, ছেলে সৌতনের দুই আইনজীবী বন্ধু সৌর্যদীপ বসু মুখোপাধ্যায় ও প্রদীপ্ত সেন ১৬ জুলাই তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তার আগের দিন রাতে সৌর্যদীপ তাঁদের বাড়িতেই ছিলেন। “পরদিন তাঁদের বাড়ি থেকেই সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ডানকুনির একটি গ্যারেজে সৌর্যদীপ গাড়ি মেরামত করার জন্য ডানকুনি যাওয়ার নাম করে আমার ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। দুপুর আড়াইটা নাগাদ আমার ছেলে আমাকে ফোন করে জানায় শ্রীরামপুর টেক্সটাইল কলেজ লাগোয়া গঙ্গার ঘাটে বসে সৌর্যদীপ, প্রদীপ্তদের সঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করছে। বিকেল ৪টে নাগাদ শ্রীরামপুর থানার পুলিশ আমাকে ফোন করে জানায় শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে যেতে। সেখানে গেলে আমাকে পুলিশ জানায় জলে ডুবে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।“ ছেলের মৃত্যুর পর ২০ জুলাই সৌমেন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে গঙ্গায় ঠেলে ফেলে দিয়েছে দুই বন্ধু সৌর্যদীপ ও প্রদীপ্ত। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। দুই অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করে। বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছে। এদিন সৌমেন দাস বলেন, ছেলে সাঁতার জানত না সেটা ওর দুই বন্ধু জানতেন। “লেখাপড়ার সুবাদে অনেক বছর ধরেই ওরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত ও ছিল। ঘটনার দিন আমার ছেলের মূল্যবান চশমা দুই বন্ধু গঙ্গায় ফেলে দেয়। সেই নিয়ে ছেলে প্রতিবাদ করতেই ছেলেকে গঙ্গায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় দুই অভিযুক্ত। পুলিশ তদন্ত করলেও বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে। যাতে দুই অভিযুক্ত আইনের ফাঁস থেকে রেহাই পায়। তাই আমি পুনরায় তদন্তের দাবি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালতের নির্দেশে আমি খুশি।“ এই মামলায় বাদী পক্ষের হয়ে সাওয়াল করেছেন শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, পুলিশি তদন্তে অনেক গলদ রয়েছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হলেও চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় পুলিশ কমপ্যাক্ট ডিস্ক(সিডি) জমা দেয়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মদের বোতলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়নি। ফলে বেনিফিট অব ডাউটের সুযোগ নিয়ে অভিযুক্তরা বেঁচে যেতে পারেন। সেই কারণেই ফের তদন্তের আর্জি জানানো হয় আদালতে। অভিযুক্তদের আইনজীবী কিশোর মণ্ডল বলেন, তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। ছেলের মৃত্যুর পর দাহকার্য সব মিটে যাওয়ার চারদিনের মাথায় অভিযোগ করা হয়। ঘটনার দিন থানায় দাঁড়িয়ে সৌমেন জানিয়েছে ছেলের মৃত্যু নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। হাসপাতালে ময়নাতদন্তের সময়েও কোনো অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছে। এরপর আচমকাই অভিযোগ করেছে। সৌতনকে জলে নেমে সৌরদীপ ও প্রদীপ্তই উদ্ধার করেছেন। ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। সেটা হাসপাতালের মেমোতে উল্লেখ আছে। যদি বন্ধুকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে থাকত। তাহলে ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া ও পুলিশে খবর দেওয়ার কাজ করত কি! “আমার মক্কেলরা প্রায় ৯০ দিন জেলে ছিল। তাদের সামাজিক সম্মান নষ্ট হল। পুলিশ খুনের মামলায় ৩০২ ধারায় চার্জশিট দিয়েছে। সুতরাং সবটাই উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েই আমরা আইনি লড়াই করব।“

 

 

Previous article৭০০ কোটি টাকা বকেয়া ! এবার গো ফার্স্টের নামে নালিশ পেল DGCA
Next articleকলেজে ফেল করা শতরূপের জন্ম তারিখেও কারচুপি