সম্রাট অশোকের জন্মদিন! বিহারের অত্যুৎসাহ হাস্যকর-ইতিহাস বিরুদ্ধ: মত ইতিহাসবিদদের

সম্রাট অশোক। প্রথম জীবনে চণ্ডাশোক। কলিঙ্গ যুদ্ধ। দয়া নদী দিয়ে শোণিত স্রোত। প্রিয়জন, আত্মীয় মৃতদেহ। শোকে দিশাহারা মৌর্য বংশের সম্রাট। জীবনের কাছে, প্রকৃতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ। চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক। এই ইতিহাস প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই জানা। স্বাধীন ভারতে মহান সম্রাট অশোককে সম্মান জানিয়ে রয়েছে জাতীয় প্রতীক- অশোক স্তম্ভ। জাতীয় পতাকায় রয়েছে অশোক চক্র। কিন্তু কবে জন্মে ছিলেন তিনি? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অশোকের জন্ম হয়েছিল ৩০৪ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে। কিন্তু তারিখ? তার কোনও উল্লেখ কোথায় নেই।

তাতে অবশ্য অশোকের গরিমা কোন অংশে খাটো হচ্ছিল না। কিন্তু ভোট বড় বালাই। সেই দিকে নজর থেকেই বিহারের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে খুশি করতে প্রায় বছর আষ্টেক আগে অশোকের জন্মদিন ঘোষণা করে নীতিশ কুমারের সরকার। তখন অবশ্য তারা ছিল বিজেপির জোট সঙ্গী। আর সম্রাট অশোকের জন্মদিন ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন সেই সময় বিজেপি নেতা তথা বিধানপরিষদের সদস্য সুরজনন্দন প্রসাদ কুশওয়াহা। কারণ, তাঁর দাবি ছিল, অশোক ছিলেন তাঁদের সম্প্রদায়ভুক্ত। এরপরেই ১৪ এপ্রিলকে অশোক জন্মদিন বলে ঘোষণা করে ধুমধাম করে পালন শুরু করে বিহার সরকার। শুধু তাই নয়, ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর অম্বেদকরের জন্মদিনের দিনই অশোকের জন্মদিন বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনার বিরোধিতা করে তখনই বিহারের বিরোধীদলগুলি এর বিরোধিতা করে। কিন্তু তাও ঘটনা করে অশোকের জন্মদিন পালন করা হয়।

দীপবংশ ও মহাবংশ বই দুটি অনুযায়ী, গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর ২১৮ বছর পর সিংহাসনে বসেন অশোক। তিনি ৩৭ বছর শাসন করেন। বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন, বুদ্ধের মৃত্যু ৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হয়েছিল। এই দুই গ্রন্থের তথ্য যদি সঠিক হয়, তবে অশোক ২৬৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিংহাসনলাভ করেছিলেন। আবার পুরাণ অনুযায়ী, বিন্দুসার ২৫ বছর সাম্রাজ্য শাসন করেছিলেন। এটি সঠিক হলে অশোক ২৬৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিংহাসনলাভ করেছিলেন। যদি ধরে নেওয়া হয় গৌতম বুদ্ধ ৪৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেন তাহলেই একমাত্র পুরাণের সঙ্গে মহাবংশ ও দীপবংশের বর্ণনা মিলে যায়। কারণ ৪৮৬ থেকে ২১৮ বিয়োগ করলে ২৬৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ হবে। কিন্তু এই কোনও গ্রন্থেই অশোকের জন্মদিনের উল্লেখ নেই। থাকার সম্ভবও নয়। কারণ অশোকের সময়কার সব কথা জানা যায় সেইসময়কার শিলালিপি থেকে। কিছু তথ্য পাওয়া যায় ঐতিহাসিক স্থাপত্য থেকে। কিন্তু তার কোথাও ১৪ এপ্রিল তার জন্মদিন বলে উল্লেখ নেই। কারণ, যে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এই সাল, তারিখ – তা তখন আবিষ্কৃতই হয়নি।

ইতিহাসবিদ অমল মুখোপাধ্যায়ের (Amol Mukharjee) মতে, ১৪ এপ্রিল সম্রাট অশোকের জন্মদিন এই তথ্যের কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এটা ঐতিহাসিকরা জানেন না। কাজেই ১৪ এপ্রিল পালন করা ইতিহাস বিরুদ্ধ। এটা হাস্যকর। অশোকের জন্মদিন কোথাও লেখা নেই। চণ্ডাশোক থেকে চূড়ান্ত পরিণতিতে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পুত্র-কন্যাকে সিংহলে পাঠান বৌদ্ধধর্ম প্রচারে। অশোকের জন্মদিন পালন একটা হাস্যকর প্রয়াস বলে মত অমল মুখোপাধ্যায়ের।

তাহলে কী শুধুই রাজনীতির তাস! কেন অশোক নিয়ে মাতছে বিহার (Bihar)? কারণ, তাদের রাজ্যেই রয়েছে বুদ্ধগয়া (Budhagaya)। সেই অঞ্চলে রয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। তাছাড়া বছরভর দেশ বিদেশ থেকে বহু বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষ যান সেখানে। সেই কারণেই অশোক নিয়ে মাতামাতির চেষ্টা-মত বিশেষজ্ঞ মহলের। কারণ, আর যাই হোক এর সঙ্গে ইতিহাসের কোনও সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন:ভাড়াটিয়াদের মধ্যে ব.চসার জের! ম.র্মান্তিক পরিণতি একরত্তির

 

 

Previous articleভাড়াটিয়াদের মধ্যে ব.চসার জের! ম.র্মান্তিক পরিণতি একরত্তির
Next articleফের বিপাকে রাহুল! আরও এক মানহানি মামলা দায়ের