কালিয়াগঞ্জকাণ্ডে কড়া পদক্ষেপ রাজ্যের, সাসপেন্ড ৪ ASI: NCPCR চেয়ারম্যানের অভিযোগ নস্যাৎ শশী-কুণালের

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অভিযোগ তোলেন, কালিয়াগঞ্জে জাতীয় প্রশাসন যা বলেছে তার পুরোটাই এখানে আসার আগে ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। ওনাদের কাজ শুধু বিজেপিকে অক্সিজেন জোগানো।

ছাত্রী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে উত্তপ্ত কালিয়াগঞ্জ (Kaliyaganj)। আর এই আবহে অব্যহত রাজ্য বনাম জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের (NCPCR) দ্বন্দ্ব। আর অভিযোগ সামনে আসতেই কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য। ইতিমধ্যে সাসপেন্ড (Suspend) করা হয়েছে চার এএসআই (ASI) পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিককে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলবে বলেই জানিয়েছেন পুলিশ সুপার সানা আখতার (Sana Akhtar)। তবে  নাবালিকার মৃত্যুতে ইতিমধ্যে ‘বিষক্রিয়া’র (Poisoning) অভিযোগ সামনে এনেছে পুলিশ। সোমবার বিকেলেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পুলিশ সুপার সানা আখতার। তিনি জানান, দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪ পুলিশ কর্মীকে ইতিমধ্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। পুলিশ কমিশনার জানান, এখন এলাকা শান্তিপূর্ণ। দু’দিন ধরে সেরকম কোনও সমস্যা নেই। মানুষ আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন। আমরা বিভাগীয় তদন্ত করেছি। প্রাথমিক যে রিপোর্ট পেয়েছি, সেই অনুযায়ী চারজন অফিসারকে আজ সাসপেন্ড করেছি। আজ সকালেই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি জানান, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি। পরিবার আবেদন করলে, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা তা হাতে পেয়ে যাবেন। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, অনেকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ভুল তথ্য ছড়িয়ে শান্ত রায়গঞ্জে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা চলছে। পুলিশ সুপার মহম্মদ সানা আখতার জানান, কোনও গুজবে কান দেবেন না। পুলিশ প্রশাসনের উপর ভরসা রাখুন। আমরা তদন্তের প্রতিটা ধাপ সিনিয়র অফিসারদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। একজন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক তদন্ত করছেন। পুলিশ সুপার আরও জানান, ওই নাবালিকার পরিবারের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কোনও কারণ নেই। প্রথম দিন থেকেই সেখানে পুলিশ পাহারা রয়েছে।

যদিও পুলিশের দাবি মানতে নারাজ জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। তিনি জোর গলায় দাবি জানাচ্ছেন, নাবালিকার যৌন হেনস্থা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ময়না তদন্তের (Post Mortem Report) পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে না এলেও কেন ময়নাতদন্তকারী দুই ডাক্তারকে ছুটিতে পাঠাতে হল? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রিয়াঙ্ক। তবে এই ঘটনায় প্রথম থেকেই বিষক্রিয়ার অভিযোগ তুলেছে রাজ্য। রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আড়াই এমএল বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ছাত্রীর। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অবশ্য এখনও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।

রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা (Sashi Panja) বলেন, এটা একটা সামাজিক বিষয়। সেটা আত্মহত্যাই হোক কিংবা নির্যাতন। কিন্তু যখন উন্নাও হয়, তখন কেন সেখানে এনসিপিসিআর যায় না কেন? তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, মৃত্যু থেকেও কেন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যস্ত বিজেপি? অন্যদিকে, এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) অভিযোগ তোলেন, কালিয়াগঞ্জে জাতীয় প্রশাসন যা বলেছে তার পুরোটাই এখানে আসার আগে ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। ওনাদের কাজ শুধু বিজেপিকে অক্সিজেন জোগানো। বিজেপির ‘দলদাসে’ পরিণত হয়েছে তাঁরা। পাশাপাশি কমিশনের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে কুণাল প্রশ্ন তোলেন, বিলকিস বানোর ঘটনায় এদের গুজরাট যাওয়ার সময় হয় না। পাশাপাশি উত্তর প্রদেশের উন্নাও, হাথরাস বা প্রয়াগরাজের মতো জায়গায় মহিলাদের সঙ্গে চরম অত্যাচার হলেও এদের দেখতে পাওয়া যায় না।

পাশাপাশি এদিন কুণাল মনে করিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা ও শিশু সুরক্ষায় ভারতবর্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক জায়গায় আছে। এখানে সামাজিক কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়। এটা বাংলা, গুজরাট বা উত্তর প্রদেশ হয়ে যায়নি। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে কুণাল জানান, প্রিয়াঙ্ক কানুনগোর কাজই হচ্ছে এখানে এসে নাটক ও কুৎসা করা। নাহলে ওঁর চাকরি চলে যাবে। পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জকাণ্ডে সোমবারই জনস্বার্থ মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে পরিবারের নিরাপত্তার কারণে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আর্জি জানানো হয়েছে। এদিন সেই ইস্যুতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুণাল জানান, এটা পুরোটাই আদালতের বিষয়। এই বিষয়ে মন্তব্য করার মতো সময় আসেনি।

 

 

Previous articleএবার অয়নের ছেলের বান্ধবী ইমন গঙ্গোপাধ্যায়কে তলব ইডির
Next articleকোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ একটাই বঙ্গ: অভিষেক, কোচবিহারে জনজোয়ার