নাগলসমান থেকে টুখেল,সোনা খুঁজতে গিয়ে ধুঁকছে বায়ার্ন

অথচ বলা নেই–কওয়া নেই, সাফল্যের চূড়ায় থাকা নাগলসমানকে হুট করে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাঁর জায়গায় কোচ করে আনা হয় টমাস টুখেলকে।

কোচরা নাকি যে কোনও মুহূর্তে ছাঁটাই হওয়ার আশঙ্কায় বাক্সপেটরা গুছিয়ে রাখেন, এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। এদুয়ার্দো গালেয়ানো ‘সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো’ বইয়ে আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘আজ যে কোচকে নিয়ে সমর্থকেরা উল্লাস করে তাঁর অমরত্ব চাইছে, পরের রোববার সেই একই কোচকে সমর্থকেরা মরতে বলবে।’
কিন্তু ইউলিয়ান নাগলসমানের সঙ্গেও এমনটা ঘটবে, সেটা ভাবতে পেরেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা? বায়ার্ন মিউনিখকে জার্মান সুপার কাপ জিতিয়ে গত মরসুম শেষ করেছিলেন নাগলসমান। এ মরসুমেও শুরু থেকে দল পরিচালনা করছিলেন শক্ত হাতে।

বুন্দেসলিগায় দুইয়ে ছিল বায়ার্ন। তবে শীর্ষে থাকা বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে ব্যবধান ছিল মাত্র ১ পয়েন্টের। জার্মান কাপে উঠে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। আর চ্যাম্পিয়নস লিগের রেকর্ডটা তো আরও ঈর্ষণীয়। ৮ ম্যাচের সব কটি জিতে বাভারিয়ানরা উঠেছিল শেষ আটে। এই স্বপ্নযাত্রায় দলটি দুবার করে হারিয়েছিল বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, পিএসজির মতো শক্তিধরদের।
নাগলসমানের অধীনে সব মিলিয়ে এ মরসুমে ৩৭ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছিল বায়ার্ন। গোল পাচ্ছিল মুড়ি–মুড়কির মতো; ১১২টি। মানে ম্যাচ প্রতি তিনটির বেশি। অথচ বলা নেই–কওয়া নেই, সাফল্যের চূড়ায় থাকা নাগলসমানকে হুট করে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাঁর জায়গায় কোচ করে আনা হয় টমাস টুখেলকে।

শুরুতে ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছিল, কোচিংয়ে কোনো ত্রুটির কারণে নয়, বরং সাংবাদিক প্রেমিকা লিনা ভুরজেনবার্গারের মাধ্যমে বায়ার্নের অন্দরমহলের খবর বাইরে ছড়ানো আর শিষ্যদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় চাকরি হারাতে হয়েছে নাগলসমানকে। তবে বায়ার্নের ক্রীড়া পরিচালক হাসান সালিহামিদজিচ জানান, নাগলসমানের কাজে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট ছিল না বলেই ছাঁটাই করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় সম্ভাব্য সেরা কোচকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

কিন্তু এখন পুরো বিপরীত চিত্র। আরও ভালোর আশায় নাগলসমানকে বিদায় করে টুখেলকে এনে আরও খারাপ করছে বায়ার্ন। জার্মান চ্যাম্পিয়নরা যেন সোনা খুঁজতে গিয়ে হীরা হারিয়েছেন! এ মরসুমে নাগলসমানের অধীনে যেখানে ৩৭ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে হেরেছিল বায়ার্ন, সেখানে টুখেলের অধীনে ৭ ম্যাচে হেরেছে তিনটিতে। ম্যাচ প্রতি গোল মাত্র ১.২৮! বায়ার্ন সমর্থকদের জন্য এর চেয়েও অস্বস্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে টুখেলের কোচিংয়ে একেকটা হারে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায়।

টুখেলের কোচিংয়ে ফ্রাইবুর্গের কাছে হেরে জার্মান কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। ম্যানচেস্টার সিটির কাছে প্রথম লেগে ৩–০ ব্যবধানে হারের পর ফিরতি লেগে ১–১ ড্রয়ে ছিটকে পড়তে হয়েছে বাভারিয়ানদের। টানা ১০ বার বুন্দেসলিগা জেতা বায়ার্ন এখন এ গৌরব হারানোরও ঝুঁকিতে। বায়ার্নের কোচ হিসেবে অভিষেকে সাবেক ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে বুন্দেসলিগার শীর্ষে ফিরলেও তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবার দুইয়ে নেমে গেছে তারা।

টুখেলের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছে বায়ার্ন। এর আগে তাঁকে ছাঁটাই করলে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আপাতত হয়তো সে পথে হাঁটবে না তারা। তবে টুখেলকে নিয়োগপত্র দিতে যিনি কলকাঠি নেড়েছিলেন, সেই অলিভার কানকে বরখাস্ত করে ‘ভুলের প্রায়শ্চিত্ত’ করতে পারে ক্লাবটি।

 

Previous articleঅমর্ত্য সেনকে ফের নোটিশ, বিশ্বভারতীর নি.ন্দায় সরব বিদ্বজনেরা! 
Next articleএপ্রিলের শেষে ফের তাপপ্রবাহ! হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বাড়ছে আশ.ঙ্কা