Monday, August 25, 2025

আলিগড়ে দরিদ্র ক্রিকেটারদের জন্য হোস্টেল তৈরি করছেন KKR-এর রিঙ্কু!

Date:

Share post:

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ অনেক অচেনা ক্রিকেটারকে সাফল্যের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে। অনেকে আবার আইপিএলের হাত ধরে এঁদো গলি থেকে রাজপথে এসে দাঁড়িয়েছেন। ২০০৮ সালে এই টুর্নামেন্টের সূচনার পর থেকে এই লিগের হাত ধরে শুধু প্রতিভাই উঠে আসেনি। এর সঙ্গে উদীয়মান ক্রিকেটাররা আর্থিক ভাবেও লাভবান হয়েছেন।

চলতি আইপিএলে কেকেআরের রিঙ্কু সিং-এর লড়াইয়ের গল্পও বেশ হৃদয়স্পর্শী। রিঙ্কু এখনও ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি।উত্তরপ্রদেশের এই ব্যাটসম্যান কয়েক দিন আগে গুজরাট টাইটান্সের ঘরের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়ে তাঁর দলের জন্য একটি অসম্ভব জয় এনে দিয়েছেন।

এ কথা ঠিক যে রিঙ্কু হয়তো আইপিএলের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী ক্রিকেটার নন, তবু আসন্ন ক্রিকেটারদের জন্য একটি হোস্টেল নির্মাণ করে তিনি চমকই লাগিয়ে দিয়েছেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতা কোনও ভাবেই তাঁর স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হতে পারেনি।

আসলে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন রিঙ্কু। তাঁর বাবা খানচন্দ্র সিং গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন এবং তাঁর এক ভাই সোনু অটোরিকশা চালান এবং মুকুল একটি কোচিং সেন্টারে মেঝে মোছেন। কিন্তু ছোটবেলায় খেলার সরঞ্জাম পাওয়া তো দূর, দু’বেলা ভাতও ঠিক মতো জুটত না রিঙ্কুর। যে পরিবার থেকে তিনি উঠে এসেছেন, সেখানে রীতিমতো যুদ্ধ করে ক্রিকেটটা খেলতে হয়েছে তাঁকে।

আর সেই কারণে রিঙ্কু চান না, আলিগড়ের কোনও গরীব বাচ্চার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে তাঁর মতো বাধা আসুক। তাই তিনি আলিগড়ের বাচ্চাদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এক হোস্টেল তৈরি করছেন। আলিগড়ের মহুয়া খেদা স্টেডিয়ামে এই হোস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। রিঙ্কু সিংয়ের বড় দাদা মুকুল সিং জানিয়েছেন, রিঙ্কুর উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই হোস্টেলে প্রায় ১০০ ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হোস্টেল খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যাবে। সম্ভবত পরের মাসেই তৈরি হয়ে যাবে হোস্টেল।

আলিগড় থেকে রিঙ্কুর শৈশবের কোচ মাসুদুজ-জাফর আমিনি বলেছেন, ‘ও সব সময়ে তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি হোস্টেল তৈরি করতে চেয়েছিল, যাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য আর্থিক সংস্থান নেই। যেহেতু ও এখন আর্থিক ভাবে শক্তিশালী, তাই ও এটিকে বাস্তবে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

রিঙ্কুর ক্রিকেটার হিসাবে উথ্থানটাও বেশ নাটকীয়।২০১৬ সালে রিঙ্কুর রঞ্জিতে অভিষেক হয় এবং পরের বছর আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি টিম কিংস ইলেভেন পঞ্জাব তাঁকে দলে নেয়। আর কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে ২০১৮ সালে ৮০ লাখ টাকায় কিনেছিল এবং তার পর থেকে রিঙ্কু কেকেআর-এর হয়ে খেলেন। আমিনী প্রায় ১২-১৩ বছর আগে রিঙ্কুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছিলেন। এবং তাঁর লড়াইয়ের সাক্ষী তিনি। রিঙ্কুর ছেলেবেলার কোচ এখন জেলা অ্যাসোসিয়েশনের মালিকানাধীন ১৫ একর জমিতে আলিগড় ক্রিকেট স্কুল এবং অ্যাকাডেমি পরিচালনা করেন।

রিঙ্কুর কোচ কী বলছেন ? ‘প্রায় তিন মাস আগে কাজ শুরু হয়েছিল রিঙ্কুর এই হোস্টেলের। আইপিএল দলে যোগ দেওয়ার আগে ও এখানে থেকে অগ্রগতি দেখাশোনা করছিল। এই হোস্টেলে ১৪টি ঘর থাকবে এবং প্রতিটিতে চার জন প্রশিক্ষণার্থী থাকতে পারবে। একটি শেড এবং একটি প্যাভিলিয়নও তৈরি করা হচ্ছে। আলাদা টয়লেট রয়েছে। এ ছাড়াও এই প্রশিক্ষণার্থীরা ক্যান্টিনে খাবার খেতে পারবে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হবে এবং পুরো খরচ বহন করছে রিঙ্কু।’

রিঙ্কুর বড় ভাই সোনু হোস্টেলের দৈনন্দিন বিষয়গুলি দেখাশোনা করবে। তিনি খুশি যে তাঁর ভাইয়ের স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হচ্ছে। সোনু বলেন, আমার বাবা যখন পারত না আর, তখন আমরা একসঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করেছি। তবে আমরা সব সময়ে চেয়েছিলাম যে, রিঙ্কু ক্রিকেটে মন দিক। আমরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেটা ফল ও হাতেনাতে দিয়েছে। কারণ ও শুধু আমাদের দারিদ্র্য থেকে টেনে বের করে আনেনি, বরং দরিদ্র ক্রিকেটারদের জন্য একটি হোস্টেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ওর এই প্রচেষ্টাকে আমরা কুর্নিশ করছি।

 

spot_img

Related articles

শ্রমশ্রী প্রকল্পে ভুয়ো আবেদন রুখতে কড়া নজরদারি রাজ্যের 

ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত শ্রমশ্রী প্রকল্পে প্রকৃত ও যোগ্য প্রার্থীরাই সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ...

আদিবাসী উন্নয়ন আরও সুদূর প্রসারি করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, সৌজন্য উড়িয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত বিজেপি

আদিবাসী উন্নয়ন নয়, রাজনীতিই যে তাদের লক্ষ্য তা আরও একবার প্রমাণ করল বিজেপি (BJP)। আমন্ত্রণ পেয়েও সৌজন্যের জবাব...

DHFC-র হারের পরই ক্লাব থেকে কর্তাদের ছোট করার চেষ্টা, জবাব দিলেন মানস

ডুরান্ড কাপের(Durand Cup) ফাইনালে পৌঁছে সকলকে চমকে দিয়েছিল ডায়মন্ডহারবার এফসি(DHFC)। বাংলার ফুটবলকে যে দল নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তাদের...

আধারের অভাবে রেশন বঞ্চনা নয়, কড়া নির্দেশ খাদ্য দফতরের 

আধার কার্ড না–থাকা বা বায়োমেট্রিক যাচাই না–হওয়ার কারণে আর কোনও বৈধ রেশন গ্রাহককে খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত...