Monday, November 10, 2025

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালদহে বন্দুকবাজকে ধরে নায়ক আজহারউদ্দিন

Date:

Share post:

এমন খবর আসবে ভাবেননি।নিজের অফিসেই বসে ছিলেন মালদহের ডিএসপি  আজহারউদ্দিন খান।কিন্তু বুধবার দুপুরে একটা ফোন সব ওলোটপালট করে দিয়েছে।হঠাৎ খবর আসে মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে এক বন্দুকবাজ ঢুকে পড়েছে। দ্রুত তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। পুলিশ ততক্ষণে স্কুল ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু কেউই ভয়ে এগোতে পারছেন না।

কারণ,পুলিশ দেখলেই রেগে যাচ্ছেন বন্দুকবাজ দেব বল্লভ। সেই সময়েই আচমকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকবাজের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন অকুতোভয় আজহারউদ্দিন। বন্দুক ধরা হাতটা উপরে করে দিলেও বাগে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়। আজহারউদ্দিনের সাহস দেখে ততক্ষণে অন্য পুলিশকর্মীরাও আজহারউদ্দিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। এই ঘটনার কথা জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।আজহারউদ্দিনের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘‘পুলিশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভাল কাজ করেছে।’’

আজহারউদ্দিনের এই সাহসিকতা এখন মুখে মুখে ফিরছে পুলিশ মহলে।হাতে অল্প চোট পেলেও বন্দুকবাজকে ধরতে পেরে খুশি স্বয়ং আজহারউদ্দিন। তাঁকে নিয়ে গর্বিত পুলিশ কর্তারও। সাহসী আজহারউদ্দিন জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের কী হয়ে যাবে ভেবে তখন তাঁর মাথা কাজ করেনি। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে নিয়েছিলেন।

কলকাতার পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা বছর আড়াই আগে চাকরি সূত্রেই মালদহে যান। সিটি কলেজে শারীরবিদ্যা (ফিজিওলজি) নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।যে স্কুলে হামলা হয়েছে সেটি ডিএসপি হিসাবে তাঁরই এলাকার মধ্যেই পড়ে। এমন দুরূহ কাণ্ড ঘটিয়েও ধীর স্থির আজহারউদ্দিন বলছেন, ওখানে গিয়ে দেখি পড়ুয়াদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে।মনে হচ্ছিল, ওরা আমার সন্তানের মতো। দেখেশুনে মাথা কাজ করছিল না। মাথা ঠান্ডা করে পরিকল্পনা করি।

তিনি বলেন, গিয়ে দেখি, পুলিশকে দেখলেই বন্দুকবাজ রেগে যাচ্ছেন। তাই আমি স্কুলের পিছন দিকে চলে যাই। পুলিশের পোশাকে কিছু করা যাবে না বুঝে স্থানীয় এক জনের কাছ থেকে টি-শার্ট চেয়ে নিই। জামার বদলে টি-শার্ট পরে জুতো খুলে হাওয়াই চটি পায়ে গলাই। বেল্টও খুলে ফেলি। আগেই দেখেছিলাম, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভয় পাচ্ছেন না বন্দুকবাজ। ছবি তুলতে দিচ্ছেন, কথাও বলছেন। আমিও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে মিশে যাই। উনি বুঝতে পারেননি, আমি পুলিশ। তার পরে মুহূর্তের সিদ্ধান্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ি।

সেই সময়ে বন্দুকবাজ গুলি চালিয়ে দিলে কী করতেন ? আজহারউদ্দিন বলেন, সেই চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু আমি আগেই বন্দুক ধরা হাতটা উপরের দিকে করে দিই। তার পরে সর্বশক্তি দিয়ে মাটিতে ফেলি। আমাকে ব্যাকআপ দেওয়ার কথা আগেই পুলিশকর্মীদের বলে রেখেছিলাম। সেই মতো সবাই চলে আসেন। সবাই মিলে ধরে ফেলি।

এর পরে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসা হয়। দেখা যায় তাঁর কাছে আরও একটি বন্দুক এবং ছুরি ছিল। সঙ্গে পেট্রল বোমাও। তিনি আরও বলেন, বড় বিপদ হতে পারত। বন্দুকবাজকে ধরে ফেলার পরেই পড়ুয়াদের বাইরে বার করে আনার উদ্যোগ নিই। কারণ, তখন ওদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের কর্তব্য করতে পেরে যরপরনাই খুশি তিনি।

 

 

spot_img

Related articles

ধর্মীয় বই কিনতে গিয়ে ২ কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদে কলকাতা ইসকন! গ্রেফতার ১ 

ধর্মীয় বই কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হল কলকাতা ইসকন। অভিযোগ, অর্ডার অনুযায়ী...

বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের সৌজন্যে হারানো পুলিশের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বাবা

কয়েকদিন আগেই আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ(ICC World Cup)  জিতেছে ভারতীয়  মহিলা দল। মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত মা-বাবারা। তবে বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের...

গ্যাস-সমস্যায় নিঃশ্বাসের পরীক্ষা: যুগান্তকারী আবিষ্কারে বিশ্বে স্বীকৃতি বাঁকুড়ার চিকিৎসকের

একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে জর্জরিত বর্তমান যুবসমাজ থেকে শিশুরা পর্যন্ত। গ্যাস বা গ্যাসট্রাইটিসের মতো সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য...

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে বাড়তে পারে আসন সংখ্যা, জানালো এসএসসি 

রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী,...