কানে নেই হেডফোন, আটপৌরে ঠাকুমার ফুটপাত হোটেল এখন বুড়িমার চকলেটের মতোই বিখ্যাত

গড়িয়াহাট হিন্দুস্থান পার্ক সংলগ্ন গলিতে বড় বটগাছ-ই ঠিকানা ঠাকুমার। ফুটপাতে ষোলোয়ানা বাঙালির ভাতের হোটেল

নয়ের দশকের নস্টালজিয়া। তখনও আইন করে নিষিদ্ধ হয়নি শব্দবাজি। মনে পড়ে সেই বুড়িমার চকলেট বোম? গম্ভীর আওয়াজের সঙ্গে আলোর ঝলকানির চকলেট বোমের প্যাকেটের উপর থাকত নিরিহ এক বৃদ্ধার ছবি। তিনি অন্নপূর্ণা দাস ওরফে বুড়িমা। বাঙালি নারী হিসেবে যিনি এক অনন্য নজির গড়ে গেছেন। বর্তমান নারীর ক্ষমতায়নের যুগের কথা উঠলেই হাতের কাছে সবচেয়ে বড় উদাহরণ টানা যেতেই পারে বুড়িমার। শূন্য থেকে শুরু করা সফল বাঙালি উদ্যোগপতিদের কথা হলে, তাঁর কথাও বারে বারে উঠে আসবে। তবে আধুনিকা ছিলেন না। এককালে বাঙালির ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর যে ছবি, তাতে মাথায় ঘোমটা টানা আইডিয়াল ‘বুড়িমা’ তিনি। বাংলার শব্দবাজির বাজারে যে বুড়িমা হয়ে গেলেন কিংবদন্তি। কালীপুজো থেকে নিউ ইয়ার, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে হোক কিংবা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, হইহই করে ফাটত বুড়িমার চকলেট বোম। বুড়িমার চকলেট মানেই এক ইতিহাস।

এবার আসা যাক এক ঠাকুমার গল্পে। গড়িয়াহাট হিন্দুস্থান পার্ক সংলগ্ন গলিতে বড় বটগাছ-ই ঠিকানা ঠাকুমার। ফুটপাতে ষোলোয়ানা বাঙালির ভাতের হোটেল। ওই অঞ্চলে কাজে যাওয়া মানুষ থেকে ব্যবসায়ী কিংবা পথচলতি মানুষ, কিড পেলেই ছুটে যান ঠাকুমার কাছে। সস্তায় পুষ্টিকর ভাত, ডাল, সবজি, ডিম, মাছ, মাংস যা চাইবেন গরম গরম সেটাই পাবেন। স্বাদে-গন্ধে ঠাকুমার রান্নার জুড়ি মেলা ভার। মান্ধাতার আমলে কাঠের বেঞ্চ আর টেবিলে বসে পড়লেই মনে পড়বে মা-ঠাকুমার কথা। সকলকে আপন করে বাড়ির মতো নিজে হাতে পরিবেশন করেন ঠাকুমা।

প্রায় পাঁচ দশক ধরে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ভোরে উঠে নিজে হাতে বাজার করে কাঠের উনুনে রান্না। বৃদ্ধা মা-কে এই কাজে সাহায্য করেন প্রতিবন্ধী মেয়ে ও ছেলে। ছুটির দিন বাদে, রোজই খোলা। সকাল ১১টা থেকে সার্ভিস শুরু। তিনটে বাজতে না বাজতেই শেষ। নামমাত্র দাম। পাঁচরকম সবজি-ডাল দিয়ে ভাত মাত্র ৩০টাকা। ডিম নিলে ৪০, যে কোনও মাছ ৫০ এবং বুধ-শুক্র মুরগির মাংস খেলে দিতে হবে মাত্র ৬০টাকা।

তবে ঠাকুমার এই হোটেলের ইতিহাস, বুড়িমার চকলেটের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ঠাকুমার নাম মঙ্গলাদেবী। বর্তমানে বয়স ৭০ পেরিয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের মঙ্গলা মাত্র ২০ বছর বয়সে বাবা-মা’কে সাহায্য করতে হিন্দুস্তান পার্কের এই বটগাছের তলায় চায়ের দোকান দিয়ে হাতেখড়ি। তারপর একটু একটু করে ৫০ বছর নিরলস পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে আজ বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে আছে ঠাকুমার ফুটপাতের হোটেল। বয়স ঠাকুমার কাছে একটা বয়স মাত্র। ৫০ বছর আগে যেমন পরিশ্রম করতেন, আজও তার অন্যথা হয় না।

প্রচারের আলো থেকে শত শত যোজন দূরে থাকা আটপৌরে মঙ্গলাদেবী মোবাইলের ব্যবহার জানেন না। তাই কানে নেই কোনও ব্লুটুথ হেডফোন। ছাপাশাড়ি পড়ে শুধু মানুষকে ভালোমন্দ খাওয়ানোর নেশাতেই বিভোর থাকেন ঠাকুমা।

Previous articleকেরলের মন্দিরে নিষিদ্ধ RSS, জারি হল বিজ্ঞপ্তি
Next articleআজ প্রথম প্লে-অফের ম‍্যাচে নামছে চেন্নাই-গুজরাত, জাদেজার রহস্যময় টুইট ঘিরে জল্পনা