ঋতুচক্র স্বাভাবিক, দেবী আগমনে সেই বার্তা পাথুরিয়াঘাটা ৫-এর পল্লির!

তাদের থিমে মহিলাদের ঋতুচক্র (menstrual cycle) নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে , অবগুণ্ঠন উন্মোচনের বার্তা।

ক্যালেন্ডারের তারিখ বলছে হাতে এখনও মাস চারেক সময় আছে। কিন্তু বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব(Durga Puja) আগমনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বড় বড় পুজো কমিটির তরফে । থিমের বাহারে চমক দিতে চায় উত্তর থেকে দক্ষিণ। গত বছর ইউনেস্কোর (UNESCO) থেকে হেরিটেজ তকমা পাওয়ার পর কলকাতার পুজোর দায়িত্ব আরও বেড়েছে। আর তাই শুধু অভিনবত্ব নয়, সঙ্গে সচেতনতার বার্তা দিয়ে এই বিশ্বকে নারী পুরুষ সকলের বাসযোগ্য ভূমি করতে চান উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা ৫-এর পল্লির (Pathuriaghata Pancher palli) পুজো উদ্যোক্তারা। তাদের থিমে মহিলাদের ঋতুচক্র (menstrual cycle) নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে , অবগুণ্ঠন উন্মোচনের বার্তা। থিম ভাবনায় মানস রায় (Manas Roy), মৃৎশিল্পী সনাতন পাল (Sanatan Pal), থিম মিউজিক করছেন ক্যাকটাসের সিধু(Sidhu)। আর সবকিছু সুদক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলোরা সাহা(Ellora Saha)। পঞ্জিকার কোনও তিথি নক্ষত্র দেখে নয়, তাঁরা দুর্গা পুজোর সূচনা করলেন বিশ্ব ঋতুস্ব্রাব স্বাস্থ্যবিধি দিবসে। সোনাগাছির যৌন কর্মীদের উপস্থিতিতে পিতলের মূর্তি এনে এইবারের পুজোর ব্যানার ও থিম উন্মোচন করল পুজো কমিটি।

মেয়ে মানেই তাঁকে একধাপ পিছিয়ে থাকতে হয় মাসের পাঁচটা দিন। নিজেকে লুকোতে হয় ভাই, দাদা, বাবা এমনকী বন্ধু বা পুরুষ সতীর্থদের কাছ থেকে।কেন? লজ্জা না কি ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে থাকা সামাজিক ছুৎমার্গের কাছে নিজেদের লুকোতে বাধ্য হন নারীরা? নারীত্ব থেকে মাতৃত্বের দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় এই ঋতুচক্রই৷ তারপরও এই নিয়ে এত কুসংস্কার কেন? মেয়েরা ঋতুমতী হলেই এখনও শুনতে হয় নানান নীতি-নিয়মের কথা। এটা করতে নেই আর ওটা ধরতে নেই-এর মাঝে কীভাবে থাকলে অসুস্থ হবেন না এ কথা কি কেউ বলে? প্রশ্ন তুললেন ইলোরা সাহা। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পুজো উদ্যোক্তা ইলোরা সাহা বলছেন মা দুর্গা নিজেই নারী। আসামের কামাক্ষা দেবী তো রজস্বলা আর সেভাবেই তিনি পুজিতা হন । তিনি জানান, দক্ষিণ ভারতে তো রীতিমত বয়ঃসন্ধির এই পর্যায়কে নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়। যা ঋতু কাল সংস্কার অনুষ্ঠান বা ঋতুশুদ্ধি নামে পরিচিত। তাহলে বাংলার পুজোয় কেন কথা হবে না মহিলাদের ঋতুচক্র নিয়ে ,এর সচেতনতা নিয়ে কেন কথা হবে না? ৮৪ তম বর্ষ দুর্গা পুজো উদযাপনে তাই পাথুরিয়াঘাটা ৫-এর পল্লির নিবেদন ‘ এবার অবগুণ্ঠন খোলো ‘।

অনেকেই বলছেন ধর্ম নিয়ে ছেলে খেলা আবার অনেকে বলছেন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। থিম ভাবনা যাঁর সেই শিল্পী মানস রায় জানাচ্ছেন, ” আমি নিজে দেখেছি পিরিয়ডস চলাকালীন দিদি, বোনেদের কত কষ্ট করতে হত। কিন্তু আমি ছেলে বলে আমার থেকে আড়াল করা হত। ” ইলোরা সাহা বলছেন “ধর্ম বা শাস্ত্রের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই, আমরা শুধু স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে চাই। কারণ এটা ‘শরীর খারাপ’ নয়, এটা না হলেই শরীর খারাপ হয়।”

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজে সারদা মাকে অনুমতি দিয়েছিলেন ঋতু চক্র চলাকালীন অবস্থায় ভবতারিণীর ভোগ রান্না করার জন্য। তাহলে আজ এত বছর পেরিয়ে এসেও সমাজ আর মানসিকতা কেন পিছিয়ে থাকবে, মা দুর্গাকে সাক্ষী রেখে এই প্রশ্ন তুলে দিল পাথুরিয়াঘাটা ৫-এর পল্লি।

Previous articleস্নাতক হতে সময় লাগবে ৪ বছর, জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বড় ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর!
Next articleব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে ক.ড়া পদক্ষেপ! ফের আদালতের তীব্র ভ.র্ৎসনার মুখে CBI