রেল নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ টাকায় ফুট মাসাজার! প্রকাশ্যে ক্যাগ-এর চা.ঞ্চল্যকর রিপোর্ট

সরকারের কাছ থেকে প্রাথমিক মূলধন ছাড়াও, রেলওয়ে তাদের নিজস্ব রাজস্ব এবং অন্যান্য উৎস থেকে ভারসাম্যমূলক অর্থ সংস্থান করবে। এটা ছিল ঘটনা, এবার দেখা যাক ক্যাগ রিপোর্ট কী বলছে ।

করমণ্ডল দুর্ঘটনার ( Coromandel Express Accident)পর এক এক করে রেলের অপদার্থতার ছবি ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। মোদি সরকার (Modi Government)কীভাবে মানুষের নিরাপত্তা আর সুরক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা করেছে তার প্রমাণ মিলল ক্যাগ রিপোর্টে (CAG Report)। রেল দুর্ঘটনা বারবার করে প্রশ্ন তুলছে রেলের যাত্রী সুরক্ষা সংক্রান্ত অসচেতনটার দিকে, এবার সেই কথাকেই সিলমোহর দিল ক্যাগ রিপোর্ট। বাহানাগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার পরেই নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (CM)জানিয়েছিলেন বন্দেভারত এক্সপ্রেসকে নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে সাধারণ ট্রেনের দিকে কোনও লক্ষ্যই নেই কেন্দ্র সরকার এবং ভারতীয় রেলের। তাই এত মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। এবার ক্যাগের রিপোর্ট বলছে ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার রেলওয়ের নিরাপত্তার উন্নতির জন্য তৈরি করা একটি বিশেষ তহবিল থেকে ফুট ম্যাসাজার, ক্রোকারিজ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, শীতকালীন জ্যাকেট, কম্পিউটার এবং এসকেলেটর কেনা, বাগান তৈরি, টয়লেট তৈরি, বেতন ও বোনাস প্রদান এবং একটি পতাকা স্থাপনের জন্য টাকার অপব্যবহার করা হয়েছিল।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ক্যাগ (Comptroller and Auditor General of India) ভারতীয় রেলওয়ের লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়ার ঘটনা সংক্রান্ত একটি অডিট রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। আর সেখানে যেভাবে জনগণের টাকা নিয়ে নয়ছয় করেছে মোদি সরকার তা একেবারে স্পষ্ট। ২০১৭-১৮ সালের বাজেটে এই রেল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ তহবিল প্রকল্পটির উন্মোচন করা হয়েছিল। বাজেট পেশ করে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়ে ছিলেন, যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য, পাঁচ বছরের মধ্যে ১ লক্ষ কোটি টাকার সংস্থান দিয়ে একটি রাষ্ট্রীয় রেল সুরক্ষা তহবিল তৈরি করা হবে। সরকারের কাছ থেকে প্রাথমিক মূলধন ছাড়াও, রেলওয়ে তাদের নিজস্ব রাজস্ব এবং অন্যান্য উৎস থেকে ভারসাম্যমূলক অর্থ সংস্থান করবে। এটা ছিল ঘটনা, এবার দেখা যাক ক্যাগ রিপোর্ট কী বলছে ।

২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত ৪৮-মাস সময়ের মধ্যে – ডিসেম্বর ২০১৭, মার্চ ২০১৯, সেপ্টেম্বর ২০১৯ এবং জানুয়ারী ২০২১ – চারটি নির্বাচিত মাসে ১১,৪৬৪ টি ভাউচারের একটি র‍্যান্ডম অডিট স্ক্রুটিনিতে সেফটি ফান্ডের অধীনে ৪৮.২১ কোটি টাকা অন্য খাতে খরচ করার তথ্য পাওয়া গেছে। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জোনালের দুটি ডিভিশনের তথ্য। এটা প্রমাণ করে যে রেলওয়ের নিরাপত্তার উন্নতির জন্য তৈরি তহবিল আসলে প্রতারণার হিমশৈলের চূড়া মাত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রেলের কর্মকর্তারা অসঙ্গতিপূর্ণ ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করছেন। ‘রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ’-এর অধীনে তথাকথিত কম গুরুত্বপূর্ণ কাজের বরাদ্দ প্রায় ৬.৩৬ শতাংশে বেড়েছে। ‘রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ’ বলে এটা আইন বিরুদ্ধ এবং অনৈতিক। আর সবথেকে বড় কথা হল যাত্রীদের নিরাপত্তার থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না। অগ্রাধিকার-১-এর কাজগুলিকে প্রথম দায়িত্ব হিসেবে পূরণ করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উলটো ঘটনা ঘটছে। ট্র্যাক পুনর্নবীকরণ কাজের জন্য তহবিলের বরাদ্দ ২০১৮-১৯ সালে ৯,৬০৭.৬৫ কোটি টাকা থেকে ২০১৯-২০ সালে ৭,৪১৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অথচ ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রেল দুর্ঘটনার ক্যাগ-এর বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে ২ হাজার ১৭টি দুর্ঘটনার মধ্যে ১ হাজার ৩৯২টি লাইনচ্যুত হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে কানপুর রেল দুর্ঘটনার তদন্তে NIA এবং সাম্প্রতিক বালাসোর রেল দুর্ঘটনার তদন্তে CBI নিয়োগ রেল দফতর ও সরকারের অপদার্থতা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নয়তো ? আসল সত্যি উঠে আসবে কি?

 

Previous articleপঞ্চায়েত ভোট ঘিরে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত নয়: রাজীব সিনহাকে ডেকে বার্তা রাজ্যপালের
Next articleফের মোদির রাজ্য! খাবার নিয়ে কথা বলায় দলিত খু.ন গুজরাটে