মাধ্যমিক পাশের পর কী করবে ছাত্র-ছাত্রীরা? জানালেন ড. পার্থ কর্মকার

এই সময়ে সামান্য ভুল ভবিষ্যৎ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করে। অভিভাবকদের কাছে বিনীত আবেদন মাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীদের ওপরই ছেড়ে দিন বিষয় নির্বাচন।

আলোচনা শুরুতেই ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো মাধ্যমিক পরীক্ষা জীবনের একটি অন্যতম পরীক্ষা এই সময় অত্যন্ত সচেতন ভাবে চোখকান খোলা রেখে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিভিন্ন বিষয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন ও জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে। কেননা এই সময়ে সামান্য ভুল ভবিষ্যৎ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করে। অভিভাবকদের কাছে বিনীত আবেদন মাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীদের ওপরই ছেড়ে দিন বিষয় নির্বাচন।

ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো এই সময় যে সকল গুরুত্বপূর্ণ

যে দিকগুলি তোমাদের মনে রাখতে হবে তা হল:

১) নিজের পছন্দের বিষয়গুলি নির্বাচন করবে এটা ঠিক কিন্তু  বিষয় নির্বাচনের সময় নিজের পছন্দের পাশাপাশি পিতা-মাতা এবং শিক্ষক মহাশয়দের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

২) একটা কথা মনে রাখবে  বন্ধুদের দ্বারা কখনো প্রভাবিত হবে না কেননা নিজের ভবিষ্যৎ তোমার নিজেকেই তৈরি করতে হবে। বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিষয় নির্বাচন করলে তার প্রতি ভালোবাসা না থাকলে পূর্বজ্ঞান না থাকলে পরীক্ষায় খারাপ নম্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩) বিষয় নির্বাচনের সময় দেখতে হবে উচ্চমাধ্যমিকের পর এ বিষয়টি নিয়ে তোমরা কতদূর এগোতে পারবে বিষয়টি নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে একটু যাচাই করে নিতে হবে। বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে একটু যাচাই করে নিতে হবে। যারা এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন  তাদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে পড়ে নিয়ে সেই বিষয়  সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করলে-বিষয় নির্বাচনে সুবিধা হবে ।

৪) তোমরা পলিটেকনিক যদি পড়তে চাও তাহলে সিলেবাসটা দেখে নিতে পারো। Google বা firefox এর মাধ্যমে তোমরা পলিটেকনিকের সিলেবাস বা ইত্যাদি বিষয়ের  সিলেবাস ডাউনলোড করে একবার দেখে নিতে পারো।

৫) অনেক বিদ্যালয়ে  X + 2 – স্তরের ভোকেশনাল কোর্স আছে। খোজ নিয়ে এই বৃত্তিমূলক শাখাগুলি দ্রুত চাকুরীর পথ খুলে দেয় । বিভিন্ন ট্রেড আছে । এখান থেকে সরাসরি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স পড়ার সুযোগ পাবে , Polytechnique -এ সরাসরি ভর্তি হয়ে বি.টেক করে জীবনের দিশা স্থির করে নিতে পার।

৬) মাধ্যমিকের পর  নার্সিং সহ কিছু প্যারামেডিকেল ডিপ্লোমা কোর্স আছে সেগুলো সিলেবাস দেখে নাও  । যদি মনে করো মাধ্যমিকের পর সেগুলো পড়ে জীবনের দিশা বেছে নেবে তাও করতে পারো।                                         সমস্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ইংরেজি অংক জেনারেল নলেজ খুব গুরুত্বপূর্ণ ।তাই এ কটা দিন তোমরা দশম শ্রেণীর বইগুলো পুনরায়  পড়ে নিতে পারো।

কখনো বিভ্রান্ত হবে না?

আমি বারবার একথা ছাত্রছাত্রীদেরকে বলি নিজের পছন্দ মনে মনে একটা এসে যায়। এরপরে শুরু হয় বাড়িতে মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন এরা বলেছেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে আবার বন্ধুরা অনেকে কমেন্টস দিচ্ছে কমার্স নিয়ে পড়লে প্রচুর টাকা চাকরি পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ বলছে আর্টস নিয়ে পড়লেও অনেকগুলো পথ খোলা আছে নানা ঘটনা।

এখানে হতাশ হওয়ার  কোন জায়গা নেই ঠিকই কিন্তু এই সমস্ত ঘটনাগুলি একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির  দিকে ঠেলে দেয়। আমাদের সচেতনভাবে এটিকে দূর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বলব আগে তোমরা দেখে নাও কোন বিষয়ের প্রতি তোমাদের আগ্রহ সবথেকে বেশি এবং কোন বিষয়গুলি তোমাদের খুব পছন্দের প্রথমেই তা চিহ্নিত করে নাও। কোন কোন বিষয়ের প্রতি তোমাদের দক্ষতা আছে বা আগ্রহ আছে যেটা  তুমি ভালো বুঝতে পারবে। তবে তোমার মনে রাখতে হবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের পেশা বাছাই  করার সুযোগ প্রচুর রয়েছে। মাধ্যমিকের পর আমাদের কাজটি হবে সেটি নির্বাচন করা।

মূলত জেনারেল স্টিমে যে বিষয়গুলো রয়েছে দশম শ্রেণীর পরে তা হলো সাইন্স, কমার্স এবং আর্টস।

এছাড়া টেকনিক্যাল দিকে রয়েছে ভোকেশনাল কোর্স, পলিটেকনিক, প্যারামেডিকেল কোর্স ও আইটিআই। I.T.I.-এর মধ্যে আছে ফিটার, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ইত্যাদি। এতেও ভালো লাইন আছে। প্যারামেডিকেল এর মধ্যে আছে ডি.এম. এল. টি., ডি. এইচ. এফ. এম., ডি. ও. এ., ড.ও.ট. এবং শর্ট টার্ম কিছু কোর্স –এতে রয়েছে জিডিপি, টালি, গ্রাফিক, পিজিডিসি ইত্যাদি।

প্রথমে তোমাদের বলে রাখা দরকার এই যে -বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্বিনেশন আছে তবে তোমার পছন্দ ঠিক করে বিষয়গুলি নির্বাচন করো।

আর্টস-এর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি আছে, তা হল- ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, সংস্কৃত, সমাজবিদ্যা ,ফিজিক্যাল এডুকেশন, পরিবেশবিদ্যা, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি। এ বিষয়ে ছাত্রীদের বলব তোমরা যদি গণমাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতে চাও তাহলে সাংবাদিকতা, সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, সমাজবিদ্যা, মনস্তত্ত্ব, ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস তোমাদের পক্ষে উপযুক্ত।

আর্টস-এর মানে অনেক সময় আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে আমার মনে হয় পিছনের দিকে অর্থাৎ পিছিয়ে পড়া ছেলে কিন্তু একেবারেই এটা ঠিক নয় এই প্রচলিত ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে মনে আত্মবিশ্বাস রাখো এটি পড়লে শুধুমাত্র শিক্ষকতা এবং অধ্যাপনার কাজ করতে হবে এই প্রচলিত ধারণা এই মুহূর্তে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। ইতিহাস নিয়ে পড়লে পড়ে আমরা আর্কিওলজি বা প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়তে পারি। আবার ভূগোল বিষয় নিয়েও তো অনেক কাজ করা যায় যেমন ভূগোলের স্নাতক হতে চাইলে এখন অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাতে অর্থনীতি ও গণিত প্রয়োজন তাই উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সঙ্গে দুটি বিষয় সঙ্গে রাখা খুব দরকার।

ভূগোল নিয়ে স্নাতক হওয়ার পরেও ছাত্রছাত্রীরা কারটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতে শুরু করতে পারে। এর জন্য স্নাতকোত্তর কোর্স করা দরকার হয় না। এরা মানচিত্র তৈরীর জন্য কাজের যুক্ত থাকেন। এছাড়া স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম বা আইএস অফিসার পদের জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। আবার আবহাওয়া দপ্তরের কিন্তু কাজের সুযোগ রয়েছে। ভূগোল পড়ার পর অর্থনীতির ক্ষেত্রে একই কথা অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করার পরে শুধুমাত্র শিক্ষকতার কাজ করতে হবে এমন কোন মানে নেই এই মুহূর্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে বড় বড় সরকারি বেসরকারি ব্যাংকে উচ্চপদে ইকনোমিকস পড়া মানুষের চাহিদা রয়েছে। অনেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন আইন নিয়ে পড়াশোনা করে শুধুমাত্র ওকালতি করতে হবে তা নয় বরং ল ফার্মে যোগ দিয়ে কাজ শিখে বড় বড় কোম্পানি আইনগত দিকগুলি যদি দেখভাল করে তাতেও অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বা সাইন্স নিয়ে পড়লে প্রথমে শিক্ষার্থীর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় আমি ডাক্তার হব এবং ইঞ্জিনিয়ার হব শেষে  অনেকে আইটি সেক্টরে চলে যায় ।এর বাইরেও কিছু করার আছে যেমন গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ,উদ্ভিদবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ক স্নাতকোত্তর- উচ্চ শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। উচ্চশিক্ষার পরে অনেক চাকরির পথ খোলা আছে যেমন জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যার ও প্রাণিবিদ্যার ক্ষেত্রে Zoological Survey of India, Botanical Survey of India-এর বিভিন্ন পদে চাকুরী , ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস বা ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিসের জন্য এই বিষয়গুলি আবশ্যিক , পাশাপাশি পরিবেশ বিদ্যা থাকলে হাইডোলজিস্ট হিসেবে কাজ করা যায় ও তার সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও পাওয়া যায়।

কমার্স  নিয়ে পড়লে বর্তমান পরিস্থিতি অনেকগুলি চাকরি আছে যেমন চার্টার অ্যাকাউন্টেন্ট হতে গেলেই যে কমার্স লাগবে তা নয়; শিক্ষার্থী এমবিএ করে বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ পদে চাকরি করতে পারবে। এই সুযোগ পেতে গেলে উচ্চমাধ্যমিকে কমার্স নিয়ে পড়ার পর তিন বছরের বি.কম. ডিগ্রী কোর্স পড়তে হয়।

শুধু তাই নয়  বি.কম. ডিগ্রী কোর্স করার ক্ষেত্রে এখন ব্যাচেলর ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স কোম্পানি ব্যাচেলর অফ ফিনান্সিয়াল মার্কেটিং এর অপশন থাকে- যেগুলি নিয়ে পড়াশোনা করলে ক্যাম্পাসিং এর মাধ্যমে ভালো টাকাr চাকরি পাওয়া যায়, আবার সঙ্গে ফিন্যান্স থাকলে যে কোন কোম্পানি ফিনান্স এনালিস্ট, সার্টিফাইড ফিন্যান্স প্লানার, ফিনান্স ম্যানেজার, ফিনান্স কন্ট্রোলার ইত্যাদি পদে কমার্সের শিক্ষার্থীরা চাকুরী পাবে।

আর যদি গবেষণা বা অধ্যাপনা বা শিক্ষকতা তো রইলই।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন সংসদ কর্তৃক যে সকল কোর্স বিভিন্ন বিদ্যালয় গুলিতে পড়ানো হয় সে সকল বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পাস করার পরে আমাদের শুধু খোঁজ নিতে হবে।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা :

১) দশম শ্রেণীর বই গুলো ফেলে দেবে না বা কাউকে দিয়ে দেবে না কারণ তোমার পূর্ব জ্ঞান গুলির সঙ্গে নিজেকে ঝালাই করে নিতে ঐগুলো খুব কাজে লাগবে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে ওই বইগুলি খুব দরকার হবে।

২) জেনারেল নলেজের বই কিছু বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করতে পারো

৩) সাইন্স, কমার্স, আর্টস এই তিনটি মধ্যে যদি কোন বিষয়কে তুমি পছন্দ করে থাকো উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য তাহলে সর্বদা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছ এইরকম কোন সিনিয়র দাদা অথবা দিদির কাছ থেকে বইগুলো এনে দেখতে পারো। তবে সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকে সিলেবাসটা কিন্তু ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নেবে।

৪) বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, পিতা-মাতার সঙ্গে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারো। যে বিষয়ে তুমি পছন্দ করবে সেটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পড়বে সবসময় মনে রাখবে সেই বিষয় দিয়েই তুমি জীবনের লক্ষ্য স্থির করবে

৫) যারা ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং নিচ্ছে সেই  দাদা বা দিদির কাছ থেকে তোমরা বিষয়গুলো কিভাবে পড়তে হবে সেগুলো নিয়ে একটা ধারণা নিতে পারো। কাউকে কখনো প্রতিযোগী ভেবে তুলনা করে সাবজেক্ট নির্বাচন করবে না। এখানে ক্যারিয়ার টাই আসল -এই সময় কম্পিউটার সংক্রান্ত বেসিক জিনিসগুলি ঝালাই করে নিতে পারো। কেননা এখন প্রতি পদক্ষেপে কম্পিউটার প্রয়োজন। কম্পিউটারের একটা বেসিক কোর্স করে রাখতে পার।

৬)  নিয়মিত স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করবে মাধ্যমিক পরীক্ষা মানে সব শেষ হয়ে যায়নি। তাই পড়াশোনা একেবারে বন্ধ করবে না। লাইব্রেরীতে চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকা আছে সেগুলো দেখা যেতে পারে। মাধ্যমিক পাশের পর কি কি ধরনের চাকরি পাওয়া যায় তার একটা ধারণা তৈরি হবে।

সর্বশেষ তোমাদেরকে বলব মাধ্যমিকের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিষয়বস্তু  সঠিকভাবে অধ্যায়ন করা, অনুশীলন করা আর তার জন্য দরকার আমাদের একাগ্রতা- লক্ষ্য যেন আমাদের নির্দিষ্ট হয়। ঐ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে গেলে পড়া শুনার পাশাপাশি সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে সবদিকে যোগাযোগ রাখতে হবে, খোঁজ নিতে হবে ও  সেই অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করতে হবে। দক্ষতার উন্নয়ন করতে গেলে প্রথমে আমাদের নিজেদেরকে আপডেট করতে হবে। প্রয়োজনে  স্বল্পমেয়াদি কিছু কোর্স নির্বাচন করে তা করে রাখতে হবে। এখন যে কোন চাকরি ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত আপডেট খুব দরকার। একটা সময় ছিল যে কোন একটা সাবজেক্ট নির্বাচন করলে পরলেই চাকুরী  যেমন ভূগোল সাবজেক্টটা আমাদের সময় নির্বাচন করলে চাকুরী হতো এবং ভূগোলের টিচারই পাওয়া যেত না কিন্তু বর্তমানে প্রচুর ভূগোলের স্টুডেন্ট হয়ে গেছে সেই জন্য সবকিছু চিন্তা করতে হবে বর্তমান চাহিদাকে মাথায় রেখে ।

তবে তোমাদের শেষ দিকে কয়েকটি কথা আমি বলব তা হল, যা পড়বে তা মন দিয়ে পড়বে, ভালোবেসে পড়বে, প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করবে, ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ অর্থাৎ শারীরিক ব্যায়াম চর্চা করলে জড়তা কাটবে। একই সঙ্গে মনসংযোগ অভ্যাস বাড়বে। এতে নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়বে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে, নিজের মধ্যে পজেটিভ চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটবে।

।কখনোই ভাববে না আমার দ্বারা এটি হবে না ওইটি হবে না। আমি সব পারি-এই  ভাবনা নিজের মধ্যে জাগরুক থাকুক -নির্ভয়ে এগিয়ে চলো -মনে মনে উপলব্ধি করো -তুমি অনন্ত শক্তির অধিকারী- তুমি সব পারো।

কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প হয় না। পড়াশোনা করবে ধৈর্য ধরে । কখনোই ফাঁকি দেবে না। জানবে ফাঁকি দিলে নিজেকে পিছিয়ে পড়তে হবে। পদার্থবিদ্যা,  রসায়ন, গণিত, জীববিদ্যা এই বইগুলি ভালো করে সিলেবাস অনুযায়ী পড়ো যাতে কোন চ্যাপ্টার বাদ না যায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলি কি ধরনের প্রশ্ন আসে সেগুলো নিয়ে নিয়মিত চর্চা করো। শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই।

বাংলা ইংরেজি বিষয়গুলোকে কখনো উপেক্ষা করবে না এ বিষয়গুলো বছরে প্রথম থেকেই শুরু করা ভালো। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে পড়ো। এই বিষয়গুলি পড়ার জন্য সময় লাগবে পাশাপাশি গ্রামার গুলো দেখে নেবে।

রাত জেগে পড়াশোনা করবে  না। নির্দিষ্ট সময় ঘুমানোর চেষ্টা কর। খুব সকালে উঠে আবার পড়াশোনা করার চেষ্টা করো। মোবাইল ফোন যতটা সম্ভব না ধরাই ভালো। আমরা যেন কখনো মোবাইল ফোনের দাস না হয়ে যাই। যতটা সম্ভব মোবাইল থেকে দূরে থাকো

আমার বিশ্বাস তোমরা জীবনে উন্নতি করবে।  মানুষের মতো মানুষ হয়ে জীবনে  সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। তোমরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তোমাদের দেখানো পথে চলবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, অধ্যবসায়, নিঃস্বার্থপরতা, আত্মসংযম, আত্ম শ্রদ্ধা তোমাদের উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবে এই বিশ্বাস আমার আছে। লক্ষ্য স্থির কর ও এগিয়ে চলো।

লেখক- ড. পার্থ কর্মকার, ডেপুটি সেক্রেটারি,পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ

 

 

 

 

Previous articleWTC ফাইনালে ভারত হারতেই টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ সচিনের, প্রথম একাদশ নিয়ে তুললেন প্রশ্ন
Next articleবিপর্যয়ের দাপটে সতর্কতা জারি গুজরাটে! তড়িঘড়ি বৈঠকে বসছেন মোদি