এক্তিয়ার ছাড়াচ্ছেন রাজ্যপাল! রবীন্দ্রভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ, ক্ষো.ভ সর্বত্র

উপাচার্য নিয়োগের জটের মধ্যেই ফের এক্তিয়ার বহির্ভূত পদক্ষেপ রাজভবনের। বুধবার রাতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। উল্লেখ্য, যাঁর কর্মপদ্ধতির প্রতিবাদ করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছিল কর্ণাটকের তৎকালীন বার কাউন্সিল, কর্ণাটক হাই কোর্টের সেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ‌্যায়কেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য পদে বসালেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস।

কলকাতা হাই কোর্টেও বিচারপতি হিসাবে কর্মরত ছিলেন শুভ্রকমল মুখোপাধ‌্যায়। তবে বিশ্ববিদ‌্যালয়ের উপাচার্য পদে প্রাক্তন কোনও বিচারপতিকে নিয়োগ করে রাজ্যে প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাজ্যপাল। স্বাভাবিকভাবেই রাজ‌্যপালের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষামহলে শোরগোল তুঙ্গে। সূত্রের খবর, বুধবার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় সহ রাজ্যপাল নিযুক্ত ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের মধ্যে কয়েকজন রাজভবনে গিয়েছিলেন। সেখানেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে রাজভবন সূত্রে খবর।

প্রসঙ্গত, সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য পদে নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তীকে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল। নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তীর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত গত ৮ জুন। তারপর থেকে উপাচার্যহীন ছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের বক্তব‌্য, ‘‘ব‌্যক্তি নিয়ে কোনও বক্তব‌্য নেই। তবে নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তির যথেষ্ট কারণ রয়েছে।’’ তবে রাত পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি তৃণমূল।

২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন শুভ্রকমল মুখোপাধ‌্যায়। ২০১৫ সাল থেকে একবছর বিচারপতি হিসাবে কর্মরত থাকার পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি কর্ণাটক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। ইতিমধ্যেই সেই বছরের আগস্ট মাসে তাঁর কর্মপদ্ধতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বার কাউন্সিলের সদস‌্যরা সরব হন। বেঙ্গালুরু অ‌্যাডভোকেট অ‌্যাসোসিয়েশন তাঁর কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর অপসারণ দাবি করে রীতিমতো প্রস্তাবও পাস করে। পরে তারই প্রেক্ষিতে কর্ণাটক রাজ‌্য বার কাউন্সিল শুভ্রকমল মুখোপাধ‌্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়। প্রধান বিচারপতির পদে থেকে আদালত প্রশাসন পরিচালানার ক্ষেত্রে ঢিলেমি ও অপ্রয়োজনীয় ও লঘু মন্তব‌্য করার অভিযোগ তোলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ‌্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার এই খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘অভূতপূর্ব ঘটনা। রাজ‌্যপালের এককভাবে উপাচার্য নিয়োগ করার এক্তিয়ার আছে কি না জানিনা। উপাচার্যদের নিয়োগপত্রে রাজ‌্যপালের উল্লেখ থাকে ঠিকই। তবে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই উপাচার্যরা নিযুক্ত হন। শুভ্রকমলবাবু বিশিষ্ট বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ‌্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে তাঁকে নিয়োগের কার্যকারিতা কতটুকু, তা সত্যিই বুঝে উঠতে পারছি না।’’

আরও পড়ুন- একবছরে অনলাইনে ২৩ লক্ষ জন্ম-মৃ.ত্যুর শংসাপত্র প্রদান রাজ্যের