Monday, August 11, 2025

রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’-এর অপব্যাখ্যা ইসকনের সাধু অমোঘ লীলার! বিতর্ক তুঙ্গে

Date:

Share post:

হাজার হাজার বছর ধরে চলেছে ভারতের ধর্মচর্চা। নানা তত্ত্ব নানা মতের মণিষীরা এসে গা ভাসিয়েছেন এই স্রোতে। সেই জ্ঞানরাশির, সেই শাশ্বত উপলব্ধির সারাৎসার যদি কোথাও ধরা দেয়, তবে তা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ-এর কথাতেই মেলে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ভারতবর্ষের সমগ্র অতীত ধর্মচিন্তার সাকার বিগ্রহস্বরূপ। যে তাঁকে নমস্কার করবে সে সেই মুহূর্তেই সোনা হয়ে যাবে।’ এ তো শুধু গুরুর প্রতি তাঁর ভক্তিচন্দন মাখা প্রণতি নয়, এ আসলে এক বলা যায়।গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, মনীষীর সম্পর্কে মনীষীর অনুভব। যে মহাসাধক আধুনিক জীবনের সার্থকতম মন্ত্রটি উচ্চারণ করে গিয়েছেন, জগৎবাসীকে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন- যত মত তত পথ – তাঁর উদ্দেশেই তো এ-কথা

যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্৷
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ৷

এর বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, যে আমাকে যেভাবে ভজনা করে, আমিও তাকে সেভাবেই কৃপা করি। মানুষ যে-পথই অনুসরণ করুন না কেন, আমার কাছেই এসে পৌঁছায়। সেই গীতার বাণীরই তো প্রতিধ্বনী শুনি শ্রীরামকৃষ্ণের কথায়। তিনি বলেন, যত মত তত পথ। যদি ভুল পথেও কেউ যায়, যদি ভুল করে ঘুরপথ ধরেও ফেলে, অন্তর যদি অসরল না হয়, তব সব পথই সোজা হবে। এসে পৌঁছাবে ঈশ্বরের কাছে।

এবার বেনজিরভাবে নিজেদের মতামত জাহির করতে গিয়ে রামকৃষ্ণদেব ও বিবেকানন্দর দর্শনকে যেভাবে আক্রমণ করলেন ইসকনের নবীন সাধু অমোঘ লীলা তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সর্বত্র।পরমহংসদেবের সেই দর্শনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অমোঘ লীলা বলেন, ‘যে রাস্তা দিয়ে ইচ্ছে যাওয়ার বেরিয়ে পড়, গন্তব্য একই হবে। সেটা কখনই হয় না। আমি যদি মায়াপুর যেতে চাই, তবে ডান-বাম-আগে-পিছে যে কোনও রাস্তা ধরে যাওয়া সম্ভব নয়। একটি নির্দিষ্ট রাস্তা ধরতে হবে।’

শুধু রামকৃষ্ণ নন, বিবেকানন্দর নীতিকেও সমালোচনা করেছেন অমোঘ লীলা। তিনি বলেন যে, বিবেকানন্দকে তিনি শ্রদ্ধা করেন ঠিকই, কিন্তু সব মানতে পারেন না। তিনি কখনই বিবেকানন্দকে সিদ্ধ পুরুষ মনে করেন না। অমোঘ লীলার ব্যাখ্যা, “কোনও সিদ্ধপুরুষ কখনও কোনও পশু মেরে খাবেন না।”  বিবেকানন্দ মনে করতেন খেলাধূলার মাধ্যমে একটা মানুষের শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব। তাই গীতাপাঠ না করলেও চলবে, কিন্তু ফুটবলটা যেন খেলে যুবসমাজ। কিন্তু ইসকনের সাধুর বিবেকানন্দের এই চিন্তাচেতনাকেও মানতে চাননি। বলেছেন, “খেলাধূলা করাই মনের বিকাশের জন্য শেষ কথা হতে পারে না। গীতা পাঠ করাটা অত্যন্ত জরুরি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্টে অমোঘ লীলার ‘বাণী’ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অদিকাংশই। কেউ কেউ বলেছেন, হিন্দু ধর্মের প্রসারে বিবেকানন্দের ভূমিকাকে খর্ব করতে গিয়ে বেনজির আক্রমণ করে ফেলেছেন তিনি। যা কখনই কাম্য নয়।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অমোঘ লীলার ওই ভিডিও রি-টুইট করে লেখেন, ‘ইস্কন আমাদের প্রিয়। কিন্তু তাদের এই বাচালের অসভ্যতা বন্ধ করুন তাঁরা। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দকে অপমান করে এসব কথা বললে বরদাস্ত করা হবে না।’ পাশাপাশি, অমোঘ লীলার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন কুণাল।

 

spot_img

Related articles

বারবার মিছিল-মিটিংয়ের অনুমতি চেয়ে মামলায় বিরক্ত বিচারপতি! শুভেন্দুর সভার অনুমতি দিল না হাইকোর্ট

পুলিশ কোনও সভা বা মিছিল করার অনুমতি না দিলেই বিশেষত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা শুভেন্দু অধিকারী হাইকোর্টের দ্বারস্থ...

‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এ মন্ত্রীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করলেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্য সরকারের নতুন কর্মসূচি ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এ এবার এলাকার নির্বাচিত মন্ত্রীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।...

রবি মরশুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে রেকর্ড রাজ্যের, আশা দাম কমার 

রাজ্যে এ বছর রবি মরশুমে পেঁয়াজ উৎপাদন ৭ লক্ষ টন ছাড়িয়েছে—যা এখন পর্যন্ত সর্বকালীন রেকর্ড। উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণেও...

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে বড় পদক্ষেপ, ৬ হাজারের বেশি চিকিৎসক-নার্স নিয়োগে উদ্যোগ রাজ্যের

গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবাকে (Health Service) আরও শক্তিশালী করতে রাজ্য সরকার ১,২০০-র বেশি সাধারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক (জিডিএমও) সহ প্রায়...