ইসকনের অমোঘ লীলাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ন্যাসী’ বলে তোপ শ্রীজাতর

এবার সেই সন্ন্যাসীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক হাত নিলেন শ্রীজাত। স্বামীজিকে অপমান করায় রীতিমতো গর্জে উঠলেন তিনি।

দিন কয়েক আগে শ্রী রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন ইসকনের সন্ন্যাসী অমোঘ লীলা দাস। তাঁর মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়াতে।বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ক্ষমা চায় ইসকন।এমনকী, অমোঘ লীলা দাসকে প্রায়শ্চিত্তের জন্য বৃন্দাবনের গোবর্ধন পাহাড়ে পাঠানো হয়েছে।এবার সেই সন্ন্যাসীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক হাত নিলেন শ্রীজাত। স্বামীজিকে অপমান করায় রীতিমতো গর্জে উঠলেন তিনি।

কী লিখেছেন শ্রীজাত?তিনি অমোঘ লীলাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ন্যাসী’ বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর লিখেছেন, “কর্পোরেট সাধুদের একদিন এ-রাস্তা নিতেই হতো। কারণ অতীতের ঐতিহ্যকে বর্তমানের গৌরব দিয়ে রক্ষা করবার যে-সংস্কৃতি, তা বড় কঠিন। এই সহজায়নের দিনে সে-পথ বেছে নেওয়ার কেউ আছেন বলে আর মনে হয় না। এই অমোঘ লীলা দাস যা বলেছেন এবং যে-অঙ্গভঙ্গি সহকারে ও যে-ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলেছেন, তার উৎপত্তি হঠাৎ হয়নি। তিলে তিলে হয়েছে। তাই বিষয়টি তাচ্ছিল্যের নয়, ইয়ার্কিরও নয়। বরং গভীরভাবে ভেবে দেখার।”

শ্রীজাত আরও লিখেছেন, “যে বহুতল বাড়ির ৪৫ কি ৬৭ বা ৮৩ তলার কোনও একখানা কামরা থেকে তিনি গলা তুলে কথা বলছেন, সেই বহুতলের ভিতটার নাম স্বামী বিবেকানন্দ। আর যে-জমিতে সেই ভিত খোঁড়া হয়েছিল, সেই জমিটার নাম পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ। আজ গেরুয়া বসন গায়ে চাপিয়ে কপালে তিলক কেটে মুখে মাইক এঁটে যেটুকু করে খাচ্ছেন, তার একবিন্দুও জুটত না, এই দু’জন মানুষ ধর্মচর্চার দরজা হাট করে খুলে না-দিলে। কাজটা হয়তো একা হাতে করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ, কিন্তু তাঁর মাটিকে প্রতিমায় রূপান্তরিত করেছেন যে-কারিগর, সেই শ্রীরামকৃষ্ণের অবদানই বা কম কীসে?”

সিদ্ধপুরুষের মাছ খাওয়া নিয়ে অমোঘ লীলার মন্তব্য প্রসঙ্গে আরও বিস্ফোরক শ্রীজাত লিখেছেন, “অমোঘবাবু আমিষ ভোজন নিয়ে নিদান দিচ্ছেন যখন, তখন নিশ্চয়ই তাঁর এ-খেয়াল হয়নি যে, স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র আর একজন সন্ন্যাসী নন। তিনি নিজের জীবনে যে ত্যাগ, যে লড়াই দেখিয়ে গেছেন, তা কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হতো না। একটা গোটা সমাজের পথপ্রদর্শক ও প্রতিনিধি হয়ে ওঠার জন্য কেবল সন্ন্যাসীর বসনটুকু যথেষ্ট নয়, অন্তরটুকুও তেমন হওয়া জরুরি। তাঁর মতো আর একজনকেও আমরা আজ অবধি পাইনি। পেলে, বাঙালি জাতির ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হতো।”

এরই পাশাপাশি, অমোঘ লীলা দাসকে তাঁর হাতের বহুমূল্য ঘড়ি নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি শ্রীজাত। বলেছেন, “বেচারা নিজে এখনও ‘টমি হিলফিগার’-এর হাতঘড়ি পরিত্যাগ করতে পারেননি। সামান্য দৈনন্দিন সময় দেখার জন্য যাঁর এত বহুমূল্য ঘড়ি প্রয়োজন হয়, তিনি দ্রষ্টা হবেন কোন মুখে? পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ বা স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠা কারও পক্ষেই অসম্ভব। কারণ তাঁকে বা তাঁদের প্রথমে গদাধর চট্টোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে জন্মাতে হবে। অমোঘবাবু যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর এটুকুও বোঝেন, সেই অনেক। সন্ন্যাসীর কেরিয়ার তাঁর জন্য নয়। কারণ একটাই। সন্ন্যাস কোনও কেরিয়ার অপশন নয়। একধরনের যাপন। সেই বোধ এই অমোঘবাবুদের যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।

উল্লেখ্য, ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা কর্পোরেট দুনিয়াতেই কাজ করেছেন আশিস আরোরা, ওরফে অমোঘ লীলা। পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। শ্রীজাতর এই পোস্টের পরই কমেন্ট বক্সে মন্তব্যের ঝড় ওঠে। নেটিজেনরা রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন ইস্কনের এই তথাকথিত সন্ন্যাসীকে। একজন লিখেছেন, “এ ব্যাটা ধর্মও জানেনা, অধর্মও জানে না। দু’টো জানেনা বলেই এই কথা বলার সাহস পেয়েছে। দুঃখের বিষয় হল, বেচারা যে কারণে বলেছে, সেটাও জানে না। ঘড়িটার ডায়াল কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। ওটাও নকল হতে পারে। ওরই মতো।”

আর একজন ব্যক্তি লেখেন, “আমিষ ভোজন কিন্তু হিন্দুধর্মে সব সন্ন্যাসীদের নিষিদ্ধ নয়। শুধুমাত্র বৈষ্ণব পন্থা যাঁরা অবলম্বন করেন তাঁরা আমিষ ভোজন ত্যাগ করেন। স্বামী বিবেকানন্দ শৈব বা বৈষ্ণব এরকম কোন নির্দিষ্ট পন্থার সন্ন্যাসী ছিলেন না। স্বামীজি কিন্তু কেতাবি সন্ন্যাসীও ছিলেন না। আর এখানেই উনি মহাপুরুষ হয়ে উঠতে পেরেছেন।” সবমিলিয়ে অমোঘ লীলার মন্তব্য নিয়ে শ্রীজাতর তোপ বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে নেটিজেনদের।তাদের একের পর এক মন্তব্য ইসকনের এই সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে আছড়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

 

Previous articleদলত্যাগের পুরস্কার! অজিত পওয়ারকে অর্থ দফতর দিল বিজেপি
Next articleAIIMS-এর নিয়োগে বড়সড় দু.র্নীতি! চাকদার বিজেপি বিধায়ককে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ সিআইডি-র