ডে*ঙ্গি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জেলায় জেলায়, র*ক্ত পরীক্ষার পরামর্শ স্বাস্থ্য দফতরের

শরীরে যদি লাল র‍্যাশ দেখা যায়, তা হলেও রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নাক-মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হলেও পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গিতে জেলাতে সংক্রমণ বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। পরিস্থিতি নজরে রাখতে ঘন ঘন বৈঠক করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বলা হয়েছে, ২ দিন ধরে জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, শরীরে, হাত-পায়ে ব্যথা থাকলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। শরীরে যদি লাল র‍্যাশ দেখা যায়, তা হলেও রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নাক-মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হলেও পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঠাকুরপুকুর ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাখরাহাট রোডের বাসিন্দা অণিমা সর্দার ডেঙ্গির কারণে মারা গিয়েছেন।

এদিকে পূর্ব বর্ধমানে প্রায় প্রতি দিনই কালনা মহকুমা হাসপাতালে জ্বরে কাবু রোগী ভর্তি হচ্ছেন।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ৬০ জন। যার মধ্যে ডেঙ্গি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা তিন জন।

কালনা হাসপাতালের সুপার চন্দ্রশেখর মাইতি বলেন, জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতাল সব দিক থেকে প্রস্তুত। অন্য দিকে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত কোনও রোগী নেই। আগাম সতর্কতা হিসেবে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া রয়েছে।’’

পশ্চিম বর্ধমানে আসানসোল পুরনিগম এলাকায় এখনও পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে পুরনিগমের স্বাস্থ্য দফতর। তার মধ্যে ৮ জন আসানসোলেরই বাসিন্দা। এক জন কলকাতা এবং এক জন জামশেদপুর থেকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন। জানা গিয়েছে ‘‘পুরনিগমের পক্ষ থেকে ৫০০ জনকে নোটিশ ধরানো হয়েছে। তাঁদের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অন্যান্য জেলার তুলনায় হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৮।জানা গিয়েছে, এখনও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৪ জন। হুগলি গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২২৭ জন। জেলার শহরাঞ্চলে আক্রান্ত সংখ্যা ১৩১ জন। হুগলিতে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্ত (৬৫) চণ্ডীতলা-১ ব্লকে। তার পরেই রয়েছে শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লক। সেখানে ২৬ জন আক্রান্ত। শহরাঞ্চলের মধ্যে চন্দননগর পুরনিগম এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২৯। তার পরেই আছে শ্রীরামপুর পুরসভা এলাকা (২২) এবং চুঁচুড়া (১৮)।

হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া জানিয়েছেন, ডেঙ্গি মোকাবিলায় একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলার বড় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গি পরীক্ষা হচ্ছে। ‘ফিভার ক্লিনিক’ চালু হয়েছে সব হাসপাতালে।

হাওড়া জেলাতে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৬ জন। যার মধ্যে হাওড়া পুর এলাকারই ৮০ জন রোগী রয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়।হাওড়া পুর এলাকায় সতর্কতামূলক সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে মালদহ জেলা স্বাস্থ্য দফতর।ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শুরু হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। জেলার দুই পুরসভা-সহ গ্রামীণ স্তরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করছেন সাধারণ মানুষকে। সচেতনতা শিবির আয়োজিত হচ্ছে।চলতি মরসুমে মালদহে ৭২ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। জেলার কালিয়াচক-১ ব্লক, হবিবপুরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লকে ১৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।

এ বার ডেঙ্গি মোকাবিলায় শুরু থেকে সজাগ বাঁকুড়া পুরসভা। শনিবার বাঁকুড়ার ডেঙ্গিপ্রবণ ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা সমীক্ষা করেছেন। খতিয়ে দেখেছেন কোথাও জমা জল রয়েছে কি না।বাঁকুড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর বাঁকুড়া শহরে ১৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।পুরসভা সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী এবং মশানাশক স্প্রে করার কাজে যুক্ত কর্মীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে এলাকা জুড়ে ডেঙ্গি মোকাবিলায় নামানো হয়েছে।

কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট ৫৯ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে এক জন, মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালে এক জন এবং মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে এক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। জেলায় ডেঙ্গিতে এ পর্যন্ত একটিও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মোট ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪। এ পর্যন্ত গঙ্গারামপুর হাসপাতালে এক জন এবং বালুরঘাট হাসপাতালে এক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বালুরঘাট গ্রাম ও শহর এলাকা মিলিয়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১২।

গত বছরের তুলনায় এ বছরের ডেঙ্গির প্রকোপ অনেকটাই কম দার্জিলিং জেলায়। ডেঙ্গি প্রতিরোধ গড়তে বিভিন্ন বিভাগে লোক বাড়িয়েছেন শিলিগুড়ি পুরনিগম থেকে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।ফলে জুলাই মাসের শেষ লগ্নেও ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি ভাবে অনেকটাই কম।

 

Previous articleচিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, তবে সং.কট পুরোপুরি কাটেনি
Next articleদুঃখিত কন্যা! নাবালিকার ধ.র্ষণ-খু.নের ঘটনায় টুইট কেরালা পুলিশের