এদেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার অন্যতম কারিগড় মুজফ্ফর আহমেদ ওরফে ‘কাকাবাবু’ দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রায়শই বলতেন, “বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়”। অর্থাৎ,ব্যক্তি স্বাধীনতা, সমাজিকতাকে উপেক্ষা করে পার্টির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ। এটাই নাকি কমিউনিষ্ট পার্টির আদর্শ। এখন আদর্শচ্যুত হওয়ার কারণেই নাকি পার্টির ক্ষতি হচ্ছে। তাই কাকাবাবুর ফর্মুলা ফের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে সিপিএম নেতৃত্ব। ফলে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই পরে গিয়েছেন চাপে। ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে শুরু করে লোক-লৌকিকতা, সামাজিকতা, সব শিকিয়ে ওঠার জোগাড়।
সম্প্রতি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি দেশ জুড়ে “ত্রুটি সংশোধন অভিযান” শুরু করেছে। সেই অভিযানের অঙ্গ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি বাংলার জেলায় জেলায় একটি প্রশ্নমালা পাঠিয়েছে। সবমিলিয়ে ৭টি প্রশ্ন রয়েছে। তবে তার মধ্যে দুটি প্রশ্নে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছে নতুন প্রজন্ম। মার্ক্সবাদী নেতাদের ধর্মচর্চা এবং বৈভব পরিত্যাগ নিয়ে প্রশ্নে বিপাকে নতুন প্রজন্ম। বৈভবের প্রশ্নে লেখা রয়েছে, বিবাহ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিলাসবহুল ব্যয় পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকার বিষয়ে জানাতে। এতেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে-চলা অনেক তরুণ সিপিএম নেতাকে। তাঁদের কেউ কেউ দলের সর্ব ক্ষণের কর্মী। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল। এঁদের মধ্যে কারও বিয়ে আগামী ডিসেম্বরে তো কারও আবার ফেব্রুয়ারিতে।
পারিবারিকভাবে আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকায় পরিবারের লোক রীতি-রেওয়াজ মেনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গেই ধুমধাম করে বাড়ির ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে চাইছেন। ভুরিভোজের বিরাট আয়োজন করে।লোক-লৌকিকতা করতে চাইছেন। কিন্তু বাদ সাধছে পার্টির প্রশ্নমালা। অনেকে আড়ম্বর থেকে পিছিয়ে আসছেন, পাছে সদস্য পদ চলে যায়।
আবার অনেকে ‘বিদ্রোহী’ মেজাজও দেখাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, অনেক নেতাকে দেখা যায় দলের কোনও কোনও নেতার বৈভববহুল বিবাহে গিয়ে বিয়ের রেজিস্ট্রি ফর্মে সাক্ষীর সই করতে। তখন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না? সামনেই যাঁদের বিয়ে, তাঁদের অনেককে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মন্ত্র পড়ে শাস্ত্রমতে বিয়ে করতে হবে ‘বাড়ির চাপে’। কেউ কেউ বলছেন ‘সামাজিক চাপ’-এর কথাও। যাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন, তাঁদের অনেকেই বলছেন, এই প্রশ্নমালা তাঁদের মানসিক দোটানায় ফেলে দিয়েছে। বিবাহ তাঁদের কাছে আপাতত এক ‘বিভ্রাট’।