যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর (Swapnadip Kundu) মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের মাথায়। স্বপ্নদীপ র্যাগিংয়ের শিকার সে ব্যাপারে সকলে মোটামুটি নিশ্চিত। যার জন্যই একজন সুস্থ-স্বাভাবিক ছেলে ঘটনার আগে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। তবে প্রশ্ন, হোস্টেল নাকি ক্যাম্পাস, কোথায় র্যাগিংয়ের শিকার স্বপ্নদীপ? বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

উঠে আসছে একাধিক বয়ান। ক্লাসের মধ্যেই কি লুকিয়ে রয়েছে স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর ‘আমি সমকামী নই’ কথাটির রহস্য? গত, বুধবার হস্টেলে গিয়ে এই কথাটি বলতে বলতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন স্বপ্নদীপ। হস্টেলের বেশ কয়েকজন ছাত্রের বয়ানে উঠে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসেই র্যাগিংয়ের তত্ত্ব। তাঁদের দাবি, র্যাগিং চলাকালীন এক সহপাঠিনীকে ‘প্রেম নিবেদন’ করতে না পারায় তাঁকে সকলের সামনে সমকামী বলা হয়, যা স্বপ্নদীপ মেনে নিতে পারেনি। সেদিন বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের আরও কয়েকজন ছাত্র তার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সেদিন কী হয়েছিল, তা জানতে বৃহস্পতিবার বাংলার প্রথম বর্ষেরই পাঁচ ছাত্রছাত্রীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।

যদিও বাংলা বিভাগের ছাত্রদের পাল্টা অভিযোগ, স্বপ্নদীপ হস্টেলের ‘সিনিয়র’ আবাসিকদের র্যাগিংয়ের শিকার। দুই পক্ষের দু’রকম দাবিই যাচাই করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। হস্টেলের আবাসিকদের দাবি, গত মঙ্গলবার থেকেই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন স্বপ্নদীপ। জিজ্ঞাসা করা হলে আবাসিকদের ছাত্রটি জানান, বাংলা বিভাগে ক্লাসেই কয়েকজন ‘সিনিয়র’ তাঁকে র্যাগিং শুরু করেন। প্রথম বর্ষেরই এক ছাত্রীকে বলেন প্রেম নিবেদন করতে। ছাত্রীও লজ্জায় পড়ে যান। ওই অবস্থায় কিছুতেই সহপাঠিনীকে প্রেম নিবেদন করতে পারছিলেন না স্বপ্নদীপ। তখনই তাঁকে ঘিরে শুরু হয় সিনিয়রদের মশকরা। কয়েকজন স্বপ্নদীপকে ‘সমকামী’ বলতে থাকেন। কয়েকজন বলেন, হস্টেলে গেলে সমকামীদেরই শিকার হতে হবে তাঁকে।

তবে হোস্টেলে হোক কিংবা ক্যাম্পাসে, র্যাগিংয়ের ফলেই এই মর্মান্তিক ঘটনা সে ব্যাপারে পুলিশ কার্যত নিশ্চিত। খুনের মামলা রুজু করে শুরু হয়েছে তদন্ত। ইতিমধ্যে প্রাক্তন এক ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ, তাঁকে আদালতে পেশ করে হেফাজতে চাইবে পুলিশ। তারপর সৌরভের ভূমিকা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হবে।

