যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্ট্রো’ আদতে কী?

পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য থেকে শুরু করে বাবা-মায়ের যৌন মিলনের কাল্পনিক বর্ণনা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত ছাত্রদের এইসকল প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এটাই নাকি ‘ইন্ট্রো’। হস্টেলে থাকতে গেলে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পাশ করতেই হবে। তাই যাদবপুরের পড়ুয়াদের কাছে ‘ইন্ট্রো’ শব্দটা বেশ ভয়াবহ।

আরও পড়ুনঃযাদবপুরকাণ্ডে খুব তাড়াতাড়িই রহস্যের কিনারা করা হবে: পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল

বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর পর থেকে  ‘ইন্ট্রো’ নামক শব্দটা বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, ‘ইন্ট্রো’ শব্দটা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া পড়ুয়া বা আবাসিকদের কাছে স্রেফ ইংরেজি শব্দ ‘ইন্ট্রোডাকশন’-র (পরিচিতি) সংক্ষিপ্ত রূপ নয়। ওই একটা শব্দ তাঁদের কাছে বিভীষিকা। ওই একটা শব্দ কত প্রতিভার ফুলকে বিকশিত হতে হয়নি, কত পড়ুয়ার স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই।কী এই ‘ইন্ট্রো’?

ইন্ট্রো নিয়ে মুখ খুলেছেন যাদবপুরের এক স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া। ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন, যাদবপুরে ভর্তি হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে রোজ বাড়ি থেকে যাতায়াত করতেন ।গত বছর হস্টেলে থাকার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু সেটা যে আদতে ‘সুযোগ’ নয়, বরং বিভাষিকা, তা বুঝতে একটা রাতই যথেষ্ট ছিল তাঁর। কী হয়েছিল সেই রাতে?

ওই পড়ুয়া জানান, হস্টেলে আসার পর খাওয়া-দাওয়া মিটলে ‘ইন্ট্রো’-র জন্য ডাক পড়েছিল। ‘ইন্ট্রো’ বিষয়টা কী, তা বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছিল ওই পড়ুয়ার এক সিনিয়র তথা পড়ুয়াটির রুমমেটকে। যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যাদবপুরে পড়াশোনা করেন।’ইন্ট্রো’-র নামে ওই দাদা যা বলেছিলেন তাতে হাড়হিম হয়ে গিয়েছিল পড়ুয়ার।কী এই ‘ইন্ট্রো’?
১) প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা ১১ টা বা ১২ টা ছুঁলে হস্টেলের প্রতিটি দরজায় ধাক্কা দিতে হয়।সেইসময় নামমাত্র পোশাক পরতে হয়।(স্বপ্নদীপের নিথর দেহও নগ্ন অবস্থাতেই পাওয়া গিয়েছিল)
২) সিনিয়ররা দরজা খোলার পর গড়গড় করে কয়েকটি বিষয় মুখস্থ বলতে হয়। কী কী বলতে হবে, সেটার একটা নির্দিষ্ট ‘ফর্ম্যাটও’ আছে।
৩) নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখ, বাবা-মায়ের যৌনমিলনের তারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে হয়।
৪) নিজের শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিতে হয়।
৫)ক্লাসের সব মেয়েদের (‘মামনি’ হিসেবে বলা হত) বিষয়ে খুঁটিনাঁটি তথ্য দিতে হয় সিনিয়রদের।
৬) সপ্তাহে একদিন সিনিয়রদের জল ভরে দিতে হবে।
৭) একেবারে ছোট-ছোট চুল কাটতে হবে (স্বপ্নদীপের বাবারও অভিযোগ যে ছেলেকে চুল কাটতে জোরজুলুম করা হয়েছিল)।
৮)’ইন্ট্রো’-র সময় মুখ ফসকে ইংরেজি শব্দ বেরিয়ে গেলেই করা হয় শারীরিক অত্যাচার। দরজার খিল দিয়ে হাঁটুতে মারা হয়। নয়তো কান ধরে ওঠবোস করার নিদান দেয় সিনিয়ররা।
৯)প্রতিদিনের ‘ইন্ট্রো’-র মেয়াদ হয় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। রাত ২ টো ৩০ মিনিট চলে ‘ইন্ট্রো’। সঙ্গে আরও নানারকমভাবে হেনস্থা করা হয়।
ইন্ট্রো’-র নামে তথাকথিত’মেধাবী’ ছাত্রদের অত্যাচারের বহর সেখানেই শেষ হয় না বলে ওই পড়ুয়া জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, এক সিনিয়র দাদার থেকে থেকে জানতে পেরেছিলেন যে যতদিন না হস্টেলের প্রতিটি পড়ুয়া নিমেষের মধ্যে নিজের পুরুষাঙ্গের আকৃতি তথা দৈর্ঘ্য বলতে পারছেন, ততদিন ‘ইন্ট্রো’ চলতে থাকবে।

স্বপ্নদীপকে এইসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল কিনা, র‍্যাগিংই তাঁর প্রাণ কেড়েছে কিনা, তা যদিও তদন্ত সাপেক্ষ।তবে, শুক্রবার রাতে যে সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ, স্বপ্নদীপের বাবার দায়ের করা এফআইআরে তার নাম ছিল। তার নেতৃত্বেই ছেলেকে অত্যাচারিত হতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন স্বপ্নদীপের পরিবার।

Previous articleসিঙ্গাপুরে চ্যারিটেবল পোলো খেলায় মাতলেন ব্রিটিশ যুবরাজ! সঙ্গে বঙ্গতনয় প্রসূন মুখোপাধ্যায়
Next articleমণিপুরে নজর নেই! স্বাধীনতা দিবসের আগে দেশবাসীকে ডিপি বদলানোর আর্জি মোদির