মোদি সরকারের ‘স্বদেশ দর্শন’-সহ একাধিক প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি, প্রকাশ্যে CAG রিপোর্ট

কেন্দ্রের মোদি সরকার(Modi Govt) ও ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যগুলিতে একের পর এক দুর্নীতির বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে আসছে সিএজি(CAG) রিপোর্টে। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের(Loksabha Election) আগে রাম মন্দির এবং উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার উন্নয়ন অন্যতম বড় হাতিয়ার হতে চলেছে বিজেপির(BJP) জন্য। এরই মাঝে কেন্দ্রীয় সরকারের “স্বদেশ দর্শন” প্রকল্পের অন্তর্গত অযোধ্যা শহরেরর উন্নয়নে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে জানাল সিএজি। যার মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার স্বার্থে ব্যাপক হারে দুর্নীতি।

২০১৫’র জানুয়ারি থেকে ২০২২ এর মার্চ পর্যন্ত সময়ে স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের অডিট রিপোর্ট তৈরি করেছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি। সেখানে উঠে এসেছে ব্যাপক দুর্নীতি। তবে শুধু অযোধ্যাই নয়, বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের বহুল প্রচারিত দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রেও ব্যাপক দুর্নীতি তুলে ধরেছে সিএজি। অডিটে উঠে আসা পর্যবেক্ষণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে উত্তরপ্রদেশের পর্যটন ও সেচ দপ্তরও। যে বিভাগ কাজের দায়িত্বে ছিল, তাদেরকে বলা হয়েছে অতিরিক্ত টাকা উদ্ধার করতে হবে।

সিএজি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ৬টি রাজ্যের ৬টি প্রকল্পে যুক্ত ঠিকাদারদের বেআইনিভাবে ১৯.৭৩ কোটি টাকার সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ৬টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে অযোধ্যা শহরের আধুনিকিকরণও। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “কাজের দায়িত্বে থাকা সংস্থা উত্তরপ্রদেশ রাজকীয় নির্মাণ নিগমের চুক্তিমূল্য ৬২.১৭ কোটি টাকার ৫ শতাংশ হারে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দেওয়ার কথা ছিল নিয়ম অনুযায়ী। অর্থাৎ পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দেওয়ার কথা ছিল ৩.১১ কোটি টাকা। যদিও কোনও কারণ না দেখিয়ে ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে চুক্তি নবীকরণের সময় পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে অনেক কম ১.৮৬ কোটি টাকা।” রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ” গুপ্তার ঘাট এলাকাকে ১৫৪টি সমান পরিমাণে প্লটে ভাগ করে সেখানে নানান কাজ করা হয়েছে। যদিও ঠিকাদারদের বরাত দেওয়ার সময় তাঁদের দেওয়া দরপত্র খতিয়ে না দেখে সমান অঙ্কের প্লটে একাধিক ঠিকাদারকে ভিন্ন অঙ্কের কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্ষতি হয়েছে ১৯.১৩ লক্ষ টাকা।” সিএজি রিপোর্ট অনুযায়ী, ” কাজের বরাত দেওয়ার সময় রাজ্য সরকারের তরফে তিন ঠিকাদারের জিএসটি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। ফলে সেই ঠিকাদাররা আর জিএসটি নিতে পারেন না। যদিও তিন ঠিকাদারের একজনকে জিএসটি রেজিস্ট্রেশন বাবদ দেওয়া হয়েছে ১৯.৫৭ লক্ষ টাকা।”

অযোধ্যা উন্নয়নে অতিরিক্ত খরচের কথাও তুলে ধরেছে সিএজি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাজের একবারে শুরুতে রাজ্য সরকারের তরফে নজরদারির জন্য একটি কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে ২ বছর পর নজরদারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লি-গুরুগ্রাম সংযোগকারী ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়ক যানজটমুক্ত করতে ১৪ লেনের রাস্তা তৈরিতে কিলোমিটার প্রতি ১৮.২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে অর্থনৈতিক বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি। যদিও কিলোমিটার প্রতি ২৫০.৭৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সিএজি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, সারা দেশেই “ভারতমালা” প্রকল্পে রাস্তা তৈরিতে অনুমোদিত অর্থের থেকে ৫৮ শতাংশ বেশি খরচ করা হয়েছে।

রিপোর্ট সামনে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই ফুঁসে উঠেছেন বিরোধীরা । তৃণমূল কংগ্রেসও তাদের সামাজিক মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তৃণমূলের সামাজিক মাধ্যমে বলা হয়েছে , “দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের খরচ ১৪ গুণ বেড়ে হয়েছে ২৫০.৭৭ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটার। এই টাকা ভারতমালাকে দেওয়ার জন্য অন্যান্য প্রকল্প থেকে ১.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে দরদাতাদের নির্বাচন করা হয়েছে। তৃণমূলের কটাক্ষ , নিউ ইন্ডিয়ার প্রতি ভারতের পদক্ষেপ কি দুর্নীতিতে ভরা হবে? সিএজি রিপোর্ট নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, “বিজেপির দুর্নীতি এবং লুঠ দেশকে জাতীয় স়ড়ক থেকে নরকে নিয়ে যাচ্ছে। মোদি সরকারের সমালোচনা করে ভারতমালা নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে সিএজি। প্রধানমন্ত্রীজী, বিরোধীদের দিকে দুর্নীতির আঙুল তোলার আগে নিজের দিকে দেখা দরকার। কারণ, আপনি নিজেই বিষয়টি দেখছেন।”
আরো যে পাঁচটি প্রকল্পের দুর্নীতির কথা তুলে ধরেছে সিএজি সেগুলি হল , সিঙ্কেরিম-আগুয়ারা জেল । গোয়া হিমালয়ান সার্কিট, হিমাচল প্রদেশ হেরিটেজ সার্কিট, তেলেঙ্গানা,রংপো-সিংটাম এর উন্নয়ন এবং মধ্য প্রদেশের বৌদ্ধ সার্কিট উন্নয়ন।

Previous articleঅভিন্ন দেওয়ানি বিধি আটকে দেব: কেন্দ্রকে তুলো.ধনা মমতার, যোগ দেবেন দিল্লির ধর্নায়
Next articleLAC-তে শান্তি ফেরাতে লাদাখের চুসুল সীমান্তে ১৯ তম বৈঠক সম্পন্ন ভারত ও চিন সেনার