স্বপ্নদীপের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা, নির্মমভাবে অত্যাচার! চাঞ্চল্যকর দাবি পরিবারের

র‌্যাগিংয়ের সমস্ত অ্যাকশন ভিডিও মোবাইলে বন্দি করে রাখতো স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত প্ৰাক্তনী সৌরভ চৌধুরী। সেই ছবি দেখিয়ে কার্যত ব্ল্যাকমেইল করা হতো নবাগত পড়ুয়াদের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের র‌্যাগিংয়ের সমস্ত অ্যাকশন ভিডিও মোবাইলে বন্দি করে রাখতো স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর ঘটনায় ধৃত প্ৰাক্তনী সৌরভ চৌধুরী। সেই ছবি দেখিয়ে কার্যত ব্ল্যাকমেইল করা হতো নবাগত পড়ুয়াদের। বলা হতো ওই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হবে। এমনই ভয় দেখিয়ে ধৃত সৌরভ ছাত্রদের বিভিন্ন ধরনের ফাইফরমাস খাটাতো, এমনই বিস্ফোরক তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরই এই ভিডিও সৌরভ ও তাঁর সহযোগীরা মোবাইল থেকে ডিলিট করেছে বলেই জানতে পেরেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, সৌরভ, মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তর মোবাইল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে, যাতে সেখান থেকে এই মুছে দেওয়া তথ্য উঠে আসে।

আরও পড়ুনঃ যাদবপুরে ছাত্র মৃ*ত্যুতে নয়া মোড়, ডায়েরির চিঠি নিয়ে বাড়ছে র*হস্য

এদিকে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। খুনের অভিযোগে তদন্ত আগেই শুরু হয়েছে। স্বপ্নদীপের অপমৃত্যুতে এবার পকসো আইনে মামলা! সোমবার আদালতে আর্জি জানাতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। কারণ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত পড়ুয়ার বয়স এখনও আঠেরো হয়নি। সে নাবালক।

অন্যদিকে, কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনও। গতকাল, রবিবার রানাঘাটে স্বপ্নদীপের মামার বাড়িতে গিয়ে, বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের উপদেষ্টা অনন্য চক্রবর্তী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সামনে কান্নার ভেঙে পড়েন মৃতের মা। শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটে ছ্য়াঁকা পাওয়া গিয়েছে। নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে, যেটা বাবা-মা বললেন। যখন বডিতে ঘি মাখানো হচ্ছিল, সেই সময়ে ওরা দেখেছেন। এটা অমার্জনীয়, কোনও মার্জনা হয় না। আমি খুব কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা ছেড়ে দেব না। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব’।


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম বর্ষের বিভিন্ন ছাত্রদেরকে জোর করে চাপ দিয়ে নানা ধরনের কুৎসিত কাজ করতো সৌরভের মতো সিনিয়ররা। মানসিক চাপ তৈরি করা হতো। বিবস্ত্র করে সেই ছবি মোবাইলে বন্দি করে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। তদন্তে উঠে এসেছে, প্রথম বর্ষের ছাত্রদের গাঁজা কাটতে বলতেন অভিযুক্তরা। কেউ কাটতে না পারলে, তাঁকে হাতের উপর দিয়ে ছুরি চালিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হতো। তাঁদের দিয়ে গাঁজার কলকে ভরার কাজও করাতেন সৌরভ। কেউ মদ বা অন্য কোনও নেশার দ্রব্য গ্রহণ করতে না চাইলে তিন-চারজন একসঙ্গে ধরে সংশ্লিষ্ট ছাত্রকে জোর করে তা খাইয়ে দিতেন। এমনকী মদের খরচের জন্য বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলতেন অভিযুক্তরা। গোটা বিষয়টি তাঁরা ভিডিও করে রাখতেন। সিনিয়রদের ঘর পরিষ্কার, জলের বোতল নিয়ে আসার কাজ করতে হতো নতুন ছাত্রদের। সিনিয়রদের অর্ডার মতো মাঝরাতে দোকানে গিয়ে খাবার না পেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের উপর মানসিক নির্যাতন করা হতো। এই সমস্ত ভিডিও পাঠানো হতো সৌরভের ফোনে। বিভিন্ন ছাত্রের নামে আলাদা আলাদা করে ফোল্ডার করে রাখা ছিল। কেউ কিছু করতে না চাইলে ছবি ভাইরাল করার হুমকি দিতেন সৌরভ সহ অন্য সিনিয়ররা। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, দিনের পর দিন সৌরভ হস্টেলে থেকে গেলেও সুপার বা ডিন অব স্টুডেন্টস কেন বিষয়টি জানতে পারলেন না? নাকি জেনেবুঝে চুপ করে বসেছিলেন?

Previous articleআজ শ্রাবণ শিবরাত্রি, কখন দেবেন পুজো? জেনে নিন
Next articleফের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে বিপত্তি! স্টেশনে ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ট্রেন