ঢোকা থেকে বেরোনো, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে ছত্রে ছত্রে র্যাগিংয়ের পাঠ। বছরের পর বছর একদল বাম-অতিবাম উৎশৃঙ্খল মেধাবীরা অপসংস্কৃতির র্যাগিংকে নিজেদের সাংস্কৃতিক পীঠস্থান বানিয়ে ফেলেছিল মেইন হস্টেলকে। হস্টেলে নবাগত ছাত্ররা বিড়াল হয়ে ঢুকবে আর হস্টেল জীবন শেষে তারাই বাঘ হয়ে বেরোবে। এই কালচার রপ্ত করানো হয় হস্টেলে।

আরও পড়ুনঃ “নৃ.শংস-অ.ত্যাচারী বাম-অতিবাম ছাত্র সংসদ”, যাদবপুরে মৃ.ত পড়ুয়ার পরিবারের পাশে টিএমসিপি

হস্টেলের দেওয়ালে দেওয়ালে বিভিন্ন কার্টুন, লেখায়, ছবিতে সেই বার্তাই স্পষ্ট করে থেকেছে আবাসিকরা। বিশেষ করে এ-২ ব্লকে তো তোলাবাজ ছাত্রদের মুক্তাঞ্চল। এই ব্লকে তিনতলা থেকে চারতলায় ওঠার সিঁড়ির দেওয়ালে কার্টুন এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বিড়াল ও বাঘের বিষয়টি। ভয়ার্ত বিড়ালের ছবির গা ঘেঁসে একটা তির চিহ্ন। সেখানে লেখা ‘হস্টেল লাইফ’। তির চিহ্নের শেষ প্রান্তে শিকারের গন্ধে হিংস্র হয়ে ওঠা বাঘের ছবি।

আর বিড়াল থেকে বাঘ হয়ে ওঠা কীভাবে সম্ভব? ছড়িয়ে রয়েছে সেই দাওয়াইয়ের নমুনা।তিনতলার ৬৫ নম্বর রুমের দরজার উপরে লেখা ‘দাদা আসব’। বোঝাই যায়, এই রুমগুলিতে নবাগতদের তথাকথিত ‘ইন্ট্রো’ নেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই রুমেও নিহত ছাত্রকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পাশেই সেই ৬৮ নম্বর রুম, যেখানে গেস্ট থাকছিলেন ওই ছাত্র। সেখানে দরজার উপর লেখা ‘পাবজি হাউজ’। চারতলায় উঠতেই সেই বহুচর্চিত ১০৪ নম্বর রুম! পুলিশের দাবি, এখানেই নাবালক ছাত্রের বয়ানে লেখা হয়েছিল চিঠি। হস্টেলের কোথাও লেখা রয়েছে, ‘রাত ১২টার পর প্রবেশ করুন’। এখানেই ৯ আগস্ট রাতে বর্তমান ও প্ৰাক্তনীদের নির্মম অত্যাচারে অকালে ঝরে পড়েছিল গ্রাম থেকে আসা এক ছাত্রের স্বপ্ন!


চারতলার আরও একটি দেওয়াল লিখনও বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। লাল রঙে আঁকা একটি শিকল ভাঙতে এগিয়ে আসছে একটি বলিষ্ঠ হাত। পাশে লেখা, ‘ইন্টার্যাকশন ইজ অ্যান আর্ট, আর ইউ দ্য আর্টিস্ট?’ এই ‘ইন্টার্যাকশন’ কি বহুল চর্চিত ‘ইন্ট্রো’? তা কি আসলে একটি শিল্প? যে শিল্প রপ্ত করে এক-একজন হয়ে ওঠেন র্যাগার অথবা ‘বাঘ’? এই চিহ্নগুলি জানান দিচ্ছে, যাদবপুরের মেইন হস্টেল হয়ে উঠেছিল র্যাগিংয়ের পাঠশালা! র্যাগিংকে কার্যত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল ধৃত পড়ুয়ারা। যে শিল্প মানুষ হতে নয়, বরং নখ-দাঁত বের করা হিংস্র জানোয়ার হতে শেখায়।
