জয়িতা মৌলিক

বৃষ্টি মুখর বিকেলে আলিপুর আদালত চত্বরের লকআপে বিরল দৃশ্য। পুরনো সহযোদ্ধার সঙ্গে দেখা করলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Shobhan Chatterjee)। শনিবার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee)। তবে, সঙ্গে থাকলেও পার্থর সামনে যাননি শোভন-বান্ধবী বৈশাখী। আর তা নিয়ে ‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদে’র কাছে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। স্পষ্ট জানালেন, তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে শোভনের দূরত্ব তৈরির একমাত্র ‘ষড়যন্ত্রকারী’ পার্থ। কোনও দিন তাঁকে ক্ষমা করতে পারবেন না বৈশাখী। শুধু তাই নয়, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার যে ক্ষতি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী করেছেন, বৈশাখীর কথায়, “তার জন্য কোনও শাস্তিই যথেষ্ট নয়।“
এদিন সকালে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। সে সময় অন্য মামলায় আদালতে গিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় (Boishakhi Banerjee)। সেখানেই তাঁরা জানতে পারেন পার্থকে শুনানির জন্য আদালতে হাজির করানো হয়েছে। গাড়িতে উঠেও নেমে আসেন শোভন। বলেন, ‘‘একটু দেখা করে আসি।’’ যদিও প্রাক্তন সতীর্থের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। শোভন জানান, ‘‘দূর থেকে দেখলাম। দেখা করার মতো পরিবেশ, পরিস্থিতি নেই।’’ তবে, শোভন গেলেও পার্থর সঙ্গে দেখা করতে যাননি একসময়ের পার্থ-ঘনিষ্ট বলে পরিচিত বৈশাখী। তাঁকে বাইরে রেখেই ভিতরে যান শোভন।

শোভন-পার্থ দুজনেই বেহলার পূর্ব-পশ্চিমের বিধায়ক ছিলেন একসময়। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় বিতর্ক হতে পারে জানতেন প্রাক্তন মেয়র। তাহলে কেন গেলেন? শোভনের মতে, ‘‘কেউ যদি ব্যাখ্যা করে, দেখা করা অপরাধ, ৪৫ বছরের সম্পর্ক যাঁর সঙ্গে তাঁর সঙ্গে দেখা না করাও আমার কাছে অপরাধ।’’ পার্থ সম্পর্কে শোভনের মত, ‘‘নিশ্চয়ই অভিযুক্ত। কিন্তু অভিযুক্ত আর দোষী প্রমাণিত হওয়ার মধ্যে ফারাক রয়েছে।’’ পার্থকে পরিস্থিতির শিকার, বলে দাবি করে শোভন বলেন, ‘‘পার্থদা পরিস্থিতির শিকার তো বটেই! আমাকেও তো গ্রেফতার করা হয়েছিল। এত দিন একসঙ্গে ছিলাম। না দেখা করে চলে গেলে মনে হত, এখান থেকে চলে গেলাম!’’

কিন্তু যিনি সব জায়গায় শোভনের সঙ্গে যান, সেই বৈশাখী বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন কেন! উত্তরে ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’কে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিলেন শোভন-বান্ধবী। তাঁর অভিযোগ, শোভনের সঙ্গে দলনেত্রীর দূরত্ব তৈরির ‘মূল চক্রী’ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দিনের পর দিন তিনি তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে গিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নামে ‘মিথ্যে কথা’ বলেন। “শোভনের মন বড়, তিনি ক্ষমা করে দিতে পারেন, আমি পারব না। শোভনের অনেক অনিষ্ট হয়েছে। আজ শোভন যে রাজনীতি ছাড়া তার জন্য দায়ী পার্থ“- সাফ জানালেন বৈশাখী। “আমার হৃদয় অত বড় নয়, যে সব ভুলে মাফ করে দেব“- শোভন-বান্ধবীর সাফ জবাব।

তাহলে কি শুধুই ব্যক্তিগত শত্রুতা? কিন্তু একসময় তো পার্থ-ঘনিষ্ট বলেই পরিচিতি ছিল বৈশাখীর! তিনি নিজেই বলেন, “একসময় আমায় খুব সাহায্য করেছেন পার্থদা। তখন মনে হত, তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা। সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন।“ কিন্তু পরে ভুল ভাঙে। বৈশাখীর কথায়, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার পার্থ যে ক্ষতি করেছেন তা মেনে নিতে পারেন না প্রাক্তন অধ্যক্ষ। তাঁর মতে, এতে শুধু এখন নয়, আগামী কয়েক প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য কোনও শাস্তিই যথেষ্ট নয়- তীব্র আক্রমণ বৈশাখীর। তাঁর মতে, “নিয়োগ কাণ্ডে একা দায়ী পার্থ। তিনি অর্ধেক শিক্ষা দফতর নিয়ে জেলে গিয়েছেন। আসল দায়ী পার্থই। আর তাঁর কাজের জন্য দলের মুখেও কাদা লেপে গিয়েছে।“ সেই কারণে শনিবারের বারবেলায় আদালতে পার্থ ভিতরে আছে জেনেও দেখা করার জন্য মন থেকে সায় পাননি বৈশাখী। কালো কাচের গাড়ির আড়ালে বসে কি মনে মনে বন্ধু শোভনের উদারতার জন্য ভর্ৎসনা করছিলেন! তা অবশ্য খোলসা করেননি। শুধু বলেন, “শোভন খুব ক্ষমাশীল, আমি নই।“

আরও পড়ুন- শিল্পপতি নরেশ গোয়েলকে ৯ দিনের ED হেফাজতে পাঠাল আদালত
