‘যে পথে হলো না যাওয়া’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

দাঁড়াও পথিকবর ।‌ হলুদ পাতায় ঢাকা পথের বাঁকে এসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও । সময় কম । সাহসী হও । সামনে হাতছানি দেয় দু’টি পথ । বেছে নাও এর একটি ।

এদিকে নাকি ওদিকে ? এই পথে নাকি ওই পথে ! কোন পথে কপাল মন্দ ? কোন পথে চিচিং ফাঁক ?
দু’টি পথ গেছে দু’দিকে বেঁকে । দু’টিই অজানা , অচেনা । তবু একলা পথিককে বেছে নিতে হয় যে কোনো একটি পথ , যেটিকে অপেক্ষাকৃত শ্রেয় মনে হয় ।

পথের শেষ কোথায় , কী আছে শেষে , এত কামনা এত সাধনা কোথায় মেশে , এমন জিজ্ঞাসা রয়েছে রবি ঠাকুরের গানে । পথ বেছে নেওয়া কি সহজ কাজ ? আমাদের এই বস্তুবিশ্বে চৌরাস্তা কিংবা তেমাথার মোড় তো দূরের কথা , মাত্র দু’টি পথের একটি বেছে নিতেই পথিকের কালঘাম ছুটে যায় । শেষ পর্যন্ত ঘিরে থাকে অজস্র দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংশয় । অনিবার্য যে প্রশ্নটি ধেয়ে আসে তা হলো , ‘কোন পথে সাফল্য অর্জন সুনিশ্চিত ‘ ? আর , কে না জানে যে , ধনসম্পদ , খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠাকেই ‘ সাফল্য ‘ বলে একবাক্যে স্বীকার করে নেয় নাগরিক সমাজ । যদিও পথ নিয়ে পথিকের নানা মত । আবার ‘ যত মত তত পথ ‘ । তাহলে আসুন , এই মুহূর্তে আরেকবার পড়ে নেওয়া যাক রবার্ট ফ্রস্টের অবিস্মরণীয় কবিতা ‘ দ্য রোড নট টেকেন ‘
( The road not taken ) ।

‘ পথটি দু’ভাগে বিভক্ত হলো এই বনের মধ্যে এসে । একসাথে দুটি পথে যাওয়া হবে না ভেবে মনখারাপ হয় আমার । কোন পথে যাই ভাবতে ভাবতে থমকে দাঁড়াই শেষে । আর দেখতে থাকি পথের শেষটা যতদূর দেখা যায় । দেখি পথটি বাঁক নিয়েছে যেখানে ঝোপঝাড় । ‘

‘ এবার একইভাবে তাকাই অন্য পথটির দিকে ।‌ এই পথটিতে পথিকদের পায়ের ছাপ অপেক্ষাকৃত কম ।‌ নরম সবুজ ঘাসে ঢাকা ছাপগুলি । কম যাতায়াত হয়েছে এই পথে । ‘
‘ দুটি পথেই ভোরের আলো ছড়ায় একইভাবে । পায়ের চাপে , রোদের তাপে এখনও ধূসর হয় নি সবুজ পাতারা । আহা , প্রথম পথটিতে নাহয় আরেকদিন যাওয়া যাবে । এ পথ গেছে কোনদিকে তা ঠিকঠাক জেনে নিতে হবে । আদৌ ওই পথে আমার যাওয়া হয় কিনা কে জানে ! ‘

‘ দীর্ঘশ্বাস ফেলি আমি । এই সিদ্ধান্তই আমাকে নিতে হয় অবশেষে , এই পৃথিবীর কোথাও রয়েছে একটি পথ , যুগ-যুগান্তরের , দুটি ভাগে ভাগ হয়েছে একটি বনের মাঝে এসে , যে পথে মানুষের পদচিহ্ন পড়েছে কম , আমি সেই পথ নিই বেছে । আর এভাবেই সূচনা হয় একটি পার্থক্যের । ‘

মত ও পথ নির্বাচনে সংশয় মানুষের মনের চিরকালীন দ্বন্দ্ব । জীবনের অনেকটা পথ অতিক্রম করে আসার পর কেউ হয়তো উপলব্ধি করেন পথ নির্বাচনে বড়ো ভুল হয়ে গেছে । কিন্তু আর তো ফেরার পথ নেই । সময়ও পেরিয়ে গেছে বিস্তর । তখন মনে হয় পথ নির্বাচনের দ্বিতীয় সুযোগ যদি আরও একবার পাওয়া যায় তাহলে ভুলের পুনরাবৃত্তি আর হবে না নিশ্চয় । কিন্তু সে সুযোগ আর মেলে না ।

পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে , পথ বেছে নেওয়ার প্রাক্কালে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন অধিকাংশ মানুষ । প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন দু’মাথার মোড়ে এসে দাঁড়ানোর ঘটনাক্রম অবশ্যম্ভাবী । শিক্ষায় , জীবিকা নির্বাচনে , বিবাহে , রাজনৈতিক মতাদর্শ বেছে নেওয়া এবং পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে একাধিক মত ও পথের মধ্যে কোনো একটি বেছে নিতেই হয় । সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরে সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে সমস্যা নেই । কিন্তু উল্টোটা হলে , অর্থাৎ কোনো গণ্ডগোল বাধলে সেই দ্বিতীয় মত ও পথের কথা মনে পড়ে যাকে বর্জন করা হয়েছে ।

কবি রবার্ট ফ্রস্টের সেই ছেড়ে আসা ফেলে আসা পথটি , একটি পথ বেছে নিতে গিয়ে যে পথটি তিনি বর্জন করেছিলেন ‘ আরেকদিন যাওয়া যাবে ‘ ভেবে , তেমন ঘটনা বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই ঘটে । আর তখনই , ‘ হতে পারতো ‘ , ‘ হলেও হতে পারতো ‘ , ‘ এটা হলে ওটা হতো ‘ , ‘ ওটা হলে সেটা হতে পারতো ‘ ইত্যাদি প্রভৃতি দীর্ঘশ্বাসমিশ্রিত হাহাকার ।

এই যাত্রাপথ বেছে নিয়ে , এই পথে দীর্ঘদূর হেঁটেও যা কিছু পাওয়া গেল না , হাতের নাগালে এলো না , সে সব হয়তো অপেক্ষা করেছিলো ওই তথাকথিত দুয়োরানি পথের বাঁকে , অবহেলায় যে পথটিতে পায়ের চিহ্ন এঁকে দিতে মন চায় নি , ফেলে আসা যে পথটিতে আর কোনোদিনই হাঁটার সুযোগ পাওয়া যাবে না ।
‘ তখন কেঁদেও পাবে নাকো তারে
বর্ষার অজস্র জলাধারে । ‘

আরও পড়ুন- বিশ্বের আরও একটি দেশে ফের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর

Previous articleবিশ্বের আরও একটি দেশে ফের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর
Next articleBreakfast news : ব্রেকফাস্ট নিউজ