Wednesday, November 5, 2025
উৎপল সিনহা

সদ্য ডুরাণ্ড কাপ জিতেছে মোহনবাগান । ইস্টবেঙ্গল হেরেছে এক গোলে । এই ডুরাণ্ডেই গ্রূপ পর্বে ইস্টবেঙ্গল এক গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে । কিন্তু যুবভারতীতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট লড়াই করে পরাজিত হওয়ার পরেও অনেকে বলছেন গো-হারা হেরেছে ইস্টবেঙ্গল ! কেন ? যদিও একথা ঠিক যে , মোহনবাগানের একজন খেলোয়াড় লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পরে প্রায় আধঘণ্টা দশজনে খেলতে হয়েছে মোহনবাগানকে এবং ওই সময়েই তারা বহুমূল্য গোলটি করেছে । কিন্তু তাই বলে ইস্টবেঙ্গলের এই পরাজয়কে গো-হারা বলা যায় কি ?

তাহলে তো ‘ গো-হারা ‘ শব্দটি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই হয় । শব্দটির উৎপত্তি , অর্থ ও তাৎপর্যের যথাসম্ভব অনুসন্ধান করা তো যেতেই পারে ।
‘ গো ‘ বিশেষ্য পদ । গরু , গো-জাতি , পশু , স্বর্গ , রশ্মি , চন্দ্র , চক্ষু , গোচর , পৃথিবী ইত্যাদি নানান অর্থের আধার । আবার বাক , নেত্র , দিক , বজ্র , সূর্য , নদী , জল ইত্যাদি বহুবিধ অর্থবাচক শব্দ ‘ গো ‘। শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনামের অন্যতম দুটি নাম ‘ গোপাল ‘ ও ‘ গোবিন্দ ‘ । তিনিই গো-রক্ষক ও পালক । ‘ পাল ‘ অর্থ পালক এবং ‘:বিন্দ ‘ অর্থ অন্বেষণকারী ও রক্ষক । আবার ‘ গবাদি ‘ ( বিশেষণ )

গরু ও গরুর মতো গৃহপালিত পশু । গো + আদি = গবাদি , বহুব্রীহি সমাস । ‘ গো ‘ শব্দটি কিন্তু খুব সহজ সরল একমুখী ও একার্থবাচক শব্দ নয় । এর ব্যাপ্তি অসামান্য । জ্ঞান , ঐশ্বর্য , ধনু , গাভী ইত্যাদির সঙ্গে এই শব্দটি ষাঁড় ( বৃষ ), নিরেট বোকা , মূর্খ ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয় ।

‘ গোবর ‘ বলতে আমরা গরুর বিষ্ঠাকে বুঝি , কিন্তু ‘ গো ‘ শব্দটি যখন বাচ্যার্থের সীমা অতিক্রম করার ক্ষমতা ধরে তখন ‘ বর ‘ শব্দের অর্থও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । ‘ বর ‘ শব্দের অর্থ ‘ শ্রেষ্ঠ ‘ । এভাবে দেখলে গোবরকে আর তুচ্ছ ভাবার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না । আবার , গরুর ন্যায় বুদ্ধিহীন বা বোধশক্তিতে ক্ষীণ এবং ষাঁড়ের মতো বিচারবুদ্ধিহীন বোঝাতেও ‘ গো ‘ শব্দের শরণাপন্ন হতে হয় আমাদের ।

আসুন , এই লেখায় সাময়িক বিরতি ( হাফ-টাইম ) দিয়ে আমরা ডুরাণ্ড ফাইনাল নিয়ে আবার একটু আলোচনা করে নিই । এই ম্যাচে বল নিয়ন্ত্রণে প্রাধান্য ছিল ইস্টবেঙ্গলের । গোলমুখী শটের সংখ্যাতেও এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল । হ্যাঁ , ভীষণ দৃষ্টিকটু একটা কাণ্ড মাঝমাঠে অবশ্যই ঘটিয়েছে ইস্টবেঙ্গল । তাদের এক ফুটবলার মোহনবাগানের এক খেলোয়াড়ের প্যান্ট টেনে ধরে একেবারে ঝুলে প’ড়ে মাটিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন যতক্ষণ না মোহনবাগানের খেলোয়াড়টি মাটিতে পড়ে যান এবং এই কাজটিতে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়টি একশো শতাংশ সফল হন । এতসব ঘটনার পরেও দশজনের মোহনবাগানের কাছে ইস্টবেঙ্গল পরাজিত হওয়ায় হয়তো ‘ গো-হারা ‘ শব্দটি ব্যবহার করছেন সমর্থকদের একাংশ ।

গো-হারা বলতে সাধারণত শোচনীয় পরাজয়কে বোঝানো হয় । আবার গরুর মতো নীরবে মুখ বুজে বিনা প্রতিবাদে সব কিছু মেনে নেওয়া ও কষ্ট সহ্য করাকেও পরাজয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয় । গো-হারা শব্দটির উৎস-সন্ধান করতে গিয়ে একটা মজার গল্প পাওয়া যায়।

এক কৃষকের একমাত্র সম্বল লাল গরুটি হারিয়ে গেছে । সারাদিন তন্ন তন্ন করে খুঁজেও গরু না পেয়ে বেচারা কৃষকের অবস্থা কাহিল ।‌ সন্ধ্যার দিকে দিশেহারা কৃষক তাঁরই বাড়ির সামনের রাস্তায় নিজের বউকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ মা , এদিকে কোনো লাল গরু যেতে দেখেছেন ? ‘

এই হলো গো-হারা অবস্থা ! কৃষকের বউ যখন জানতে চান নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে কেন ‘ মা ‘ ডাকছেন কৃষক , তার উত্তরে কৃষক নাকি বলেন , ‘ গরু হারালে কি কারো মাথার ঠিক থাকে মা , তুমিই বলো ! ‘

হারের পর ইস্টবেঙ্গলকে যথেষ্ট দিশেহারা দেখিয়েছে একথা সত্য । ইস্টবেঙ্গল নামমাত্র গোলে হারলেও তাদের পরাজয়ের বিশালতা বোঝাতেও গো-হারা শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে । এক্ষেত্রে ‘ গো ‘ শব্দটির অর্থ বিশাল আকাশ বা বিরাট নদী ধরে নিতে হবে । অথবা পৃথিবীকেও ধরা যায় । এক পৃথিবীর সমান বিশাল পরাজয় । আসলে গোটা ম্যাচে যথেষ্ট ভালো খেললেও সদ্য ডার্বিহারা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের বোধহয় বড়ো ব্যবধানে ফাইনাল ম্যাচ হারার আশঙ্কা ছিল । তাই ভালো খেললেও ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের আচরণে চাপা একটা উদ্বেগ সারাক্ষণ ধরা পড়েছে । প্যান্ট ধরে ঝুলে পড়াও হয়তো তারই প্রতিফলন । একদিকে দিনকয়েক আগেই ডার্বিহারা মোহনবাগানের আচরণে ফুটে বেরোচ্ছিল আত্মপ্রত্যয় , যার অর্থ ‘ আমরা করবো জয় নিশ্চয় ‘ , আর অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের , এমনকি সমর্থকদের মুখেও ধরা পড়ছিল চাপা আতঙ্ক , এটা সবাই দেখেছে । এই আতঙ্কের অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রায় চার বছর ধরে টানা আট-নয়টা ডার্বি হারার পর হঠাৎ একটা ডার্বি জিতে সেই জয়টা ধরে রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ । সঙ্কটের কল্পনায় ম্রিয়মান না হলেও ইস্টবেঙ্গল পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে কখনও মুক্ত হতে পারে নি গোটা খেলায় । তাই দশজনের মোহনবাগানের কাছে তাদের হারতে হয়েছে । ডার্বি জয়ের আনন্দ মাত্র একমাসও ধরে রাখতে পারলো না তারা । তাই কি এই পরাজয়কে গো-হারা বলা হচ্ছে ? কে জানে !

আরও পড়ুন- সারাদিনের সাসপেন্স মধ্যরাতেও জিইয়ে রাখলেন রাজ্যপাল! কেন্দ্র-রাজ্যের কাছে গেল মুখবন্ধ খাম

 

 

 

Related articles

দিনহাটার সাবেক ছিটমহলে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মিটল অচলাবস্থা, শুরু হল এসআইআর প্রক্রিয়া 

দিনহাটার সাবেক ছিটমহল পোয়াতুরকুঠি ও করলা এলাকায় গিয়ে এসআইআর (Summary Revision of Electoral Roll) নিয়ে বাসিন্দাদের বোঝালেন উত্তরবঙ্গ...

অবাধে কাজ করছে BLO-রা, কমিশনের ব্যাখ্যার পরেও কুৎসা! জবাব তৃণমূলের

অতি দ্রুত এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু। একাধিক সমস্যার মধ্যেও সক্রিয়ভাবে যোগদান বিএলও-দের। বাড়ি বাড়ি ফর্ম ফিলাপের (form fill up)...

মদনমোহন মন্দিরে রাস উৎসবের সূচনা, ভক্তদের ভিড়ে মুখর কোচবিহার

রাজআমলের প্রথা মেনে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে শুরু হল রাস উৎসব। এদিন সন্ধ্যায় দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি ও কোচবিহারের...

বিজেপির এসআইআর ষড়যন্ত্র: ব্য়র্থ করে দিতে স্লোগান মুখ্যমন্ত্রীর

বাংলায় হালে পানি পাচ্ছে না বিজেপি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘আবকি বার ৪০০ পারে’র প্রচার মুখ থুবড়ে পড়েছে।...
Exit mobile version