সফল সফর, আসছে বিনিয়োগ: শহরে ফিরে বললেন মমতা

রাজ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যে স্পেন-দুবাইয়ে ১১ দিনের সফর সেরে কলকাতায় ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শনিবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, “বিদেশ সফর সফল। বাংলার জন্য অনেকটা কাজ করতে পেরেছি। বড় বড় চুক্তিও হয়েছে।” পাশাপাশি বলেন, “মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং দুবাইতে আমরা বাণিজ্য সম্মেলন করেছি। ফিকি এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স সবটা আয়োজন করেছিল। এত সফল কর্মসূচি আমি খুব কম দেখেছি।” বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে মাথায় রেখে রাজ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত ইতিবাচক হয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

গত ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতা বিমানবন্দর থেকে দুবাই রওনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ-বার্সেলোনা হয়ে ফের দুবাইতে শিল্প বৈঠক। প্রায় পাঁচ বছর পর ১১ দিনের এই বিদেশ সফরে বিদেশি শিল্পপতিদের বাংলার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি সম্পন্ন হয়েছে একের পর এক মউ স্বাক্ষর হয়েছে। শুধুমাত্র শিল্প বা লগ্নি আনার বৈঠকই নয়, ফুটবল এবং বইমেলাও মমতার এই সফরে বিশেষ জায়গা পেয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর দুবাই হয়ে ১৩ তারিখ স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর সফর-দলে ছিলেন কলকাতা বইমেলার আয়োজক সংগঠন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের দুই কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এবং সুধাংশুশেখর দে। বইয়ের প্রচার, প্রসার, দু’দেশের সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে চিন্তাভাবনা আদানপ্রদান বিষয়ক ‘মউ’ স্বাক্ষর হয়েছে মাদ্রিদে। এই মাদ্রিদেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে লা লিগার সঙ্গে রাজ্য সরকারের মউ স্বাক্ষর। তবে এখানে ছিল আরও বড় চমক। সকলকে অবাক করে ‘মহারাজ’ ঘোষণা করেন শালবনীতে তাঁর ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার কথা। মাদ্রিদ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লা লিগাকে অ্যাকাডেমি করার জন্য যাদবপুর-সন্তোষপুরের কিশোরভারতী স্টেডিয়াম দেওয়া হবে। এই সফরে প্রথম বাণিজ্য সম্মেলনটি হয় মাদ্রিদেও। দ্বিতীয় শিল্প সম্মেলন হয় বার্সেলোনায়। দুই শিল্প সম্মেলন থেকে আসে বাংলায় একাধিক বিনিয়োগের প্রস্তাব। রেলওয়ানের কর্ণধার কমলকুমার মিত্তল ঘোষণা করেন, শিলিগুড়িতে ইথানল তৈরির কারখানা তৈরিতে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন তিনি। কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে দৈনিক দু’লক্ষ লিটার। এ ছাড়াও নিউ জলপাইগুড়িতে একটি নতুন আধুনিক কংক্রিট স্লিপার তৈরির কারখানার জন্য ১০০ কোটি বিনিয়োগ করা হবে।

বার্সেলোনা থেকে দুবাই পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রতিনিধিদল। দুবাইয়ের সমুদ্র বন্দর পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বাংলার বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যের আধিকারিকদের। মরুশহরের বাণিজ্য সম্মেলনের মূল চমক ছিল লুলু শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে মমতার বৈঠক। নিউটাউনে একটি শপিংমল নির্মাণ করবে বলে কথা দিয়েছে লুলু গোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় আমিরশাহীর বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বন আহমেদ আল জেয়াউদির। সবমিলিয়ে দীর্ঘ ১১ দিনের এই বিদেশ সফরে বঙ্গে লগ্নি আনার সমস্ত পথ পরিস্কার করার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী যেখানেই গিয়েছেন মিশে গিয়েছেন মানুষের সঙ্গে। তিন শহরেই প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী। দুবাইয়ে প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে রীতিমতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসে। পরিবেশিত হয় রাজ্য সঙ্গীত ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’। সব মিলিয়ে লগ্নির পাশাপাশি একাধিক সমঝোতা ও আসন্ন বিজিবিএসে একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে শহরে ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।