খরচে রাশ টেনে এবার ‘দুর্গা’দের বিয়ে দেবে তৌসিফ, সাকিল, নবাবউদ্দিনরা !

ধর্ম নিয়ে টানাপোড়েনকে গুরুত্ব না দিয়ে তৌসিফদের গলায় সম্প্রীতির সুর

মহম্মদ তৌসিফ রহমান, শাকিল রফিক, সৈয়দ নবাবউদ্দিনদের হাত ধরে ১৮ বছর পর দুর্গাপুজো ফিরে এল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরের গলির মুখে। উল্লেখ্য, ১৮ বছর আগে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যায়। পুজোর উদ্যোক্তরা অন্যত্র চলে যাওয়ায় বা বয়েসের জেরে সক্রিয় না থাকতে পারায় বন্ধ হয় সেই পুজো। তবে নস্টালজিয়ার টানে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই পুজো ফের চালু করলেন তৌসিফ, শাকিল, নবাবউদ্দিনরা।

ধর্ম নিয়ে টানাপোড়েনকে গুরুত্ব না দিয়ে তৌসিফদের গলায় সম্প্রীতির সুর।বন্ধ হওয়া পুজো বিগত দুবছর আগে চালু হয়েছিল। এবার তার তিন বছরে পা। আর এবার এই তরুণরা আরও একধাপ এগিয়ে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুজোর খরচ থেকে যে টাকা বাঁচবে, তা দিয়ে দুস্থ মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হবে।
কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মূলত অবাঙালি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। বাঙালি হিন্দু পরিবার হাতেগোনা। ২০১৩ সালে শেষ পুজো হয়েছিল।তারপর ২০২১ সালে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের এই পুজো ফের চালু করার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংখ্যালঘুরাই। খুঁটিপুজো থেকে মণ্ডপ সাজানো, প্রতিমা নিয়ে আসা সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এলাকার মুসিলমরাই।
উদ্যোক্তাদের অন্যতম তৌসিফ রহমান বলেছেন, উত্‍সব পালন করতে তো অসুবিধা নেই। আমরা যেখানে থাকি, তার সংস্কৃতিকে আপন করে নেব না? উত্‍সব পালনে ধর্ম আমাদের আটকায় না। সম্প্রীতির পুজো দেখতে গত বছর থেকে বিদেশিরাও এই মণ্ডপে আসছেন। এবার পুজোর বাজেট ও জৌলুস দুই বেড়েছে। প্রতিমাও থাকছে আগের তুলনায় বেশ বড়।
পুজোর জন‌্য কোনও চাঁদা সংগ্রহ করা হয় না। পুরো খরচ এলাকার সংখ‌্যালঘুরাই বহন করেন। কুমোরটুলিতে সংখ‌্যালঘুরা গিয়ে প্রতিমা নিয়ে আসেন। পুরোহিত দিয়ে সন্ধিপুজো, কলাবউ স্নান, অঞ্জলি, ভোগ সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম মেনে করা হয়। ব্রাহ্মণ এনে ভোগ রান্না হয়। একসঙ্গে সেই ভোগ খাই। ইদের মতো এখন পুজোয়ও সবাই মিলে আনন্দ করি। বিসর্জনেও আমরা সকলে যাই। সম্প্রতির পাশাপাশি সমাজসেবাতেও রয়েছে এই সংখ‌্যালঘু পুজো কমিটি। গত বছর পুজোর বাজেট থেকে দুস্থ চার বাচ্চাকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছিল। এবার দুস্থ মেয়েদের বিয়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন আয়োজকরা।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবছর তিনজনের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। এ ক্ষেত্রেও কোনও ধর্ম দেখা হবে না। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান কিংবা আদিবাসী সম্প্রদায় যে কেউ আমাদের কাছে আবেদন করতে পারেন। এছাড়া পুজোর দিনগুলিতে মধ‌্যহ্নভোজের আয়োজন থাকছে।সেখানেও দরাজ এই পুজো কমিটি।কারণ,স্থানীয়দের সঙ্গে দর্শক, পথচারী, ভবঘুরে সকলের জন‌্য লাঞ্চের ব‌্যবস্থা থাকছে। তবে শুধু মণ্ডপ তৈরি করে লাইটিং নয়, পুজো পালনে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, তার জন্যই পুরোহিতের পরামর্শ নেন তাঁরা। পুরোহিতের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেই হবে পুজো।

Previous articleপ্যারিসে লিপলকে মজে তৃণমূলের পরিচিত যুবনেতা!তোল*পাড় নেটদুনিয়া
Next articleরুমেলি এন্ড রিদম ডান্স ইনস্টিটিউটের ‘আমরা আলোর পথযাত্রী’ নজর কাড়ল