তিস্তায় ভেসে আসা আরও দেহ উদ্ধার, বিকল্প রাস্তায় সিকিমে আটকে থাকা পর্যটকদের ঘরে ফেরানোর ভাবনা

সিকিমের বিপর্যয়ে প্রাণ কেড়েছে বহু মানুষের। নিখোঁজ সেনা জওয়ান। তিস্তার জলের তোড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙেছে নদীর দুকূল। ঘরবাড়ির পাশাপাশি জলের তলায় ডুবে গিয়েছে ১০ নম্বের জাতীয় সড়কও। ফলে সিকিমের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে গোট দেশ। ।যদিও বৃহস্পতিবার খানিকটা শান্ত হয়েছে তিস্তা। সমতলের তিস্তায় লাল-হলুদ সব সর্তকতা উঠেছে। আপাতত বিপদসীমার নীচ দিয়েই বইছে নদী। পাহাড় জুড়ে জল কিছুটা কমতেই তিস্তার অববাহিকা এবং উত্তরবঙ্গের সমতলের একাংশ জুড়ে বৃহস্পতিবার দিনভর উদ্ধার হল মৃতদেহ। কোনওটি সেনা জওয়ানের, কোনও সাধারণ মানুষের। কোনওটি উদ্ধার হল জলপাইগুড়ি থেকে, কোনওটি আবার কোচবিহার থেকে।

আরও পড়ুনঃ জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে, ধর্ণার দ্বিতীয় দিনে বললেন অভিষেক
সিকিমের এই বিপর্যয়ের জেরে আটকে পড়েছে বহু মানুষ। তাদের উদ্ধারকাজে ইতিমধ্যেই হাত লাগিয়েছে প্রশাসন। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও কালিম্পং এবং দার্জিলিং হয়ে সিকিমে যাওয়া যায়। মূলত ছোট গাড়িই যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। পূর্ব সিকিমের গ্যাংকট থেকে পেডং, আলগাড়া হয়ে লাভা, গরুবাথান। সেখান থেকে গজলডোবা পর্যন্ত যাওয়া যায়। পশ্চিম সিকিমের নামচি, রাবাংলা, পেলিং রুটের পর্যটকেরা দার্জিলিঙের সিংলা বাজার দিয়ে সমতলে আসতে পারেন।
উত্তরবঙ্গের পর্যটন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে সিকিম সরকারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, উত্তর সিকিমেও পর্যটকেরা সুরক্ষিত রয়েছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে শুক্রবার থেকে উদ্ধারকাজ তারা শুরু করবে।’’ তিনি জানান, পর্যটকদের পরিজনেরাও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তাঁদের ছবি, মোবাইল নম্বর সিকিমের আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিপর্যস্ত এলাকার রাস্তা ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে। হেলিকপ্টারেও উদ্ধারকাজ করা হবে। জখম, বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিয়ে উদ্ধার শুরু হবে।
বাংলাদেশে ভেসে যাওয়া একটি দেহ উদ্ধার করে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছে বিজিবি। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তাপার থেকেও বেশ কয়েকটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। ময়নাগুড়ি এবং ক্রান্তি থেকেও মিলেছে দেহ উদ্ধারের খবর। বৃহস্পতিবার অবশ্য সেনার তরফে ২২ জনের দেহ উদ্ধারের খবর মিলেছে। সেনা জানিয়েছে, ১৫টি দেহ মিলেছে জলপাইগুড়ি থেকে। কোচবিহার এবং শিলিগুড়ি থেকে যথাক্রমে তিনটি এবং চারটি করে দেহ মিলেছে। উদ্ধার হওয়া ২২ জনের মধ্যে চার জন সেনা জওয়ান এবং সাধারণ নাগরিক। এক জনের দেহাংশ উদ্ধারের খবরও দিয়েছে সেনা।
বৃহস্পতিবার তিস্তা কিছুটা শান্ত থাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করা গিয়েছিল। বৃষ্টি ও আবহাওয়া ভাল হলেই সেনা হেলিকপ্টারে সিকিম থেকে পর্যটকদের উড়িয়ে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছনোর কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন প্রান্তে আটক পর্যটকদের দফায় দফায় হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে মঙ্গনে এনে সেখান থেকে গ্যাংটকে ফেরানোর ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতীয় সেনার ত্রিশক্তি কোর উত্তর সিকিমের চুংথাং, লাচুং এবং লাচেন এলাকায় আটকে পড়া ১৪৭১ জন নাগরিক ও পর্যটকদের মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপন করার কাজও শুরু করেছে।