কেন্দ্রীয় বঞ্চ.নার বিরুদ্ধে সরব! বাংলার ন্যায্য দাবি আদায়ে সবাইকে সামিল হওয়ার বার্তা তৃণমূলের  

তবে অভিষেক বৃহস্পতিবারই ধর্না মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়েছেন,  যতক্ষণ না রাজ্যপাল দেখা করে রাজ্যের প্রাপ্য আদায়ে পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ততক্ষণ এই ধর্না চলবে।

বাংলার বঞ্চিতদের প্রাপ্য আদায়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ করুন রাজ্যপাল (Governor)। এই দাবিতেই বৃহস্পতিবার থেকে রাজভবনের (Rajbhawan) সামনে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ধর্না। রাজভবনের উত্তর গেটের সামনে ধর্না মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন অভিষেক সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে অভিষেক বৃহস্পতিবারই ধর্না মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়েছেন,  যতক্ষণ না রাজ্যপাল দেখা করে রাজ্যের প্রাপ্য আদায়ে পদক্ষেপ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ততক্ষণ এই ধর্না চলবে। শুক্রবার সেই ধর্নার দ্বিতীয় দিনে ফের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব তৃণমূল নেতৃত্ব।

এদিনের ধর্না মঞ্চ থেকে বাংলা থেকে বিজেপিকে নিশ্চিহ্ন করার ডাক দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি তথা দলের মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি এদিন বারবার মনে করিয়ে দেন, এই যুদ্ধ তৃণমূল নিজেদের জন্য করছে না। এটা কোনও ভোট যুদ্ধও নয়। এটা বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুদ্ধ। জয়প্রকাশ এদিন মনে করিয়ে দেন, বিজেপির ‘ধর্মযুদ্ধের’ ইতিহাসের প্রসঙ্গ। পাশাপাশি কীভাবে বাংলার মানুষ কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন এবং এসবের পিছনে কে দায়ী তাও এদিন তুলে ধরেন জয়প্রকাশ। এরপর ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নামেন মোদি, শাহ, নাড্ডা। আর এত লাফালাফি করেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলার মানুষ। এরপরই শুরু হয় মহা নাটক। একাধিক প্রকল্পে কারণ অনুসন্ধানের নামে ধীরে ধীরে বাংলাকে বঞ্চনা শুরু কেন্দ্রের। তবে এদিন শুভেন্দুর আসল স্বরূপ তুলে ধরেন জয়প্রকাশ। তিনি মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্রকে দেওয়া রিপোর্টে শুভেন্দু বাংলার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ সামনে আনেন। আর তারপর সেই পথেই হেঁটেছে মোদি সরকার। আর বাংলার মানুষকে ধীরে ধীরে ভাতে মেরেছে বিজেপি সরকার। পাশাপাশি এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র। তিনি বলেন, মোদির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই সিবিআই, ইডি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব করেও লাভের লাভ কিছুই হবে না বলে জানান জয়প্রকাশ।

রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, এই লড়াই বাংলার মানুষের লড়াই। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম দিল্লি গিয়ে দেখলাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রীতিমতো ভয় পেয়েছে বিজেপি। সেকারণেই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী একবার অভিষেকের সামনাসামনি হননি। এরপরই তিনি মনে করিয়ে দেন, এই লড়াই বকেয়া, পাওনা টাকা আদায়ের লড়াই। গ্রাম বাংলার মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণে রাগে ফুঁসছে। এই লড়াইয়ে সবাই সামিল হন। মন্ত্রী জানান, গ্রামের লাখো লাখো মানুষ এই যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। অভিষেক ডাক দিলেই সবাই ময়দানে নামতে প্রস্তত।

অন্যদিকে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই যুদ্ধে সবাইকে একজোট হওয়ার বার্তা দেন। তিনি সাফ জানান, বিজেপিকে বিশ্বাস করবেন না। ওরা বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চায়। বাংলার মানুষের জন্য শুধু ভালো চায় তৃণমূল। তাই বিজেপির ফাঁদে পা নয়। এরপরই রাজীবের অভিযোগ, আমি বিজেপিতে গিয়ে দেখেছি ওদের আসল চেহারা এবং বাংলার মানুষদের প্রতি ওদের ভাবনা। রাজীব বারবার বলেন, আগামীদিনে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকুন। এছাড়াও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যপাল পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। উনি কীসের রাজ্যপাল? যে রাজ্যপাল সরকারকে নিজের সরকার বলে দাবি করেন তিনিই সরকারের নামে কুকথা বলছেন, তিনি কীসের রাজ্যপাল? তবে এদিন বাংলার বঞ্চনার বিরুদ্ধে সবাইে একজোট হওয়ার বার্তা রাজীবের। তিনি মনে করিয়ে দেন, যারা বাংলাকে বঞ্চনা করেছে তাঁদের রেয়াত করা যাবে না।

তৃণমূলের যুব নেতা সুদীপ রাহা এদিন নাম না করে, ভারতের একজন ভাইপো আছেন, যিনি ক্রিকেটের ব্যাট হাতে ধরেননি শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্রসচিবের ছেলে বলেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে বসেছেন তিনি। আর বাংলার ভরসা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে বাংলার মানুষের জন্য রাত জাগছেন। অভিষেকের নেতৃত্বে বাংলা তৈরি হচ্ছে। এই টাকা কেন্দ্রের নয়, এটা বাংলার মানুষের হকের টাকা। ভুয়ো ১০০ দিনের জবকার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোর করে ২০২১ নির্বাচনের পর থেকে লাগাতার বাংলায় টিম পাঠিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। ১৫৭ কেন্দ্রীয় দল বাংলায় তদন্ত শুরু করেছে। বাংলায় নয়, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে ভুয়ো জবকার্ড পাওয়া যাচ্ছে। রাজভবন অভিযানের দিনই একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হানা প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেন সুদীপ। বিজেপির কাছে সিবিআই, ইডি, এসএফআই, কেন্দ্রীয় সংস্থা, ক্ষমতা সব আছে। কিন্তু আমাদের কাছে মমতা আছে। ওদের কাছে সব থাকলেও মমতা নেই।

 

তৃণমূল নেতা তন্ময় ঘোষ বলেন, অভিষেক যে লড়াইয়ের পথ দেখিয়েছেন আমরা তা দিল্লি থেকে বাংলার রাজপথে ছড়িয়ে দিয়েছি। মোদির বিরুদ্ধে কথা বললেই সিবিআই-ইডি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০২৪কে সামনে রেখে এই লড়াই আরও তীব্রতর হবে। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তবে তন্ময়ের অভিযোগ, কেন বাংলার মানুষের প্রতি কেন্দ্রের এমন আচরণ তার জবাব দিতে হবে মোদি, শাহকে। পাশাপাশি আগামীদিনে বিজেপিকে উৎখাত করার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, আগামীদিনে সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 

পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো পুরুলিয়ার আদিবাসীদের উপর কেন্দ্রীয় অত্যাচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। রাজভবন চলো অভিযানে মানুষের যে ন্যায্য পাওনা, সেই দাবি নিয়েই অভিষেকের নেতৃত্বে দিল্লি অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। আর তা দেখে ভয় পেয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আমরা মানুষের ন্যায্য পাওনার দাবিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে আছি।

 

 

 

Previous articleতিস্তায় ভেসে আসা আরও দেহ উদ্ধার, বিকল্প রাস্তায় সিকিমে আটকে থাকা পর্যটকদের ঘরে ফেরানোর ভাবনা
Next articleরাজ্যের কাজে সুপ্রিম হস্তক্ষেপ নয়, শীর্ষ আদালতের রায়ে ধা.ক্কা মোদির