Tuesday, August 26, 2025

বর্ধমানের তালিত গ্রামের ‘দালান মা’ পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসেই পুজো নেন

Date:

বর্ধমানের তালিত গ্রামের ভট্টাচার্য্য পরিবারের ‘দালান মা’ পঞ্চমুণ্ডি আসনের ওপরে বসেই পুজো নেন। জয়দুর্গা মন্দিরে ভট্টাচার্য্য পরিবারের এই দালান মাকে ঘিরে রয়েছে অনেক গল্পও।পরিবারের সদস্য প্রসূন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, বছর দশেক আগে দেবীর পাটাতনকে ১৬ জন মিলে সরানোর চেষ্টা করেও পারেনি। কিন্তু পরের দিন ৬ জন মিলেই তা সম্ভব করেছে। এমনকি বর্তমানে যিনি ঠাকুর গড়েন সেই পরিবারের এক সদস্য রাত্রি ১২টা নাগাদ প্রতিমার রংয়ের কাজ করতে এলে তিনি অজানা কারও বাধা পান। কাজ না করেই তাঁকে চলে যেতে হয় সেই রাত্রে।

প্রসূনবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বসূরীদের কাছ থেকে দেবীর এই ধরণের অনেক অলৌকিক গল্প তাঁরা শুনেছেন। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্য তথা পুজোর পুরোহিত অবনীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো এই পুজো। এই পরিবারের পূর্ব পুরুষ কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্যের হাত দিয়ে এই পুজোর প্রচলন শুরু হয়। এই তালিত গ্রামেই রয়েছে দেবী সিদ্ধেশ্বরী। কথিত আছে এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে এসেছিলেন সাধক কমলাকান্ত এবং সারদামণি দেবী। সাধক কমলাকান্ত এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে বসেই সাধনাও করেছিলেন বলে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে।
অবনীবাবু জানিয়েছেন, পরিবারের এক সদস্যের নাম দুর্গাপ্রসন্ন বলে দেবীকে এখানে দালান মা নামেই ডাকা হয়। দালান মা-নামেই দেবী পরিচিত। তিনি জানিয়েছেন, ষষ্ঠীর দিন নবপত্রিকাকে ভট্টাচার্য্য পুকুরে স্নান করিয়ে দুর্গামন্দিরে নিয়ে আসার পর হলুদ জল দিয়ে তাঁকে ফের স্নান করানো হয়। আগে8 মোষবলি হলেও করোনার সময় থেকে মোষবলি বন্ধ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দালান মায়ের পুজোও চণ্ডী পাঠ হয় না। হয়না কুমারী পুজোও। যেহেতু মায়ের বেদি পঞ্চমুণ্ডি আসনের ওপর রয়েছে তাই সম্পূর্ণ তান্ত্রিক মতে পুজো হয়। দেবীকে বলির মাংস তথা মহাপ্রসাদ দেওয়া হয়। দেবীর ভোগে আবশ্যিকভাবে দেওয়া হয় মাগুর মাছ। আগে ভট্টাচার্য্য পুকুর থেকেই এই মাগুর মাছ ধরা হত, কিন্তু এখন সেখানে না পাওয়া যাওয়ায় বাজার থেকে কিনে আনা হয়।
অবনীবাবু আরও জানিয়েছেন, দালান মায়ের পুজোর নৈবেদ্যতে কোনেও মহিলা থাকেন না। পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই নৈবেদ্য তৈরী করেন। অন্যদিকে, দেবীর ভোগ প্রস্তুত করেন পরিবারের দীক্ষাপ্রাপ্ত মহিলারা। আগে পুজোর সময় যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হত। এখন তা বন্ধ হলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ভট্টাচার্য্য পরিবারের সদস্য প্রসূন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের এই দালান মা-এর পুজো যে অনেক প্রাচীন তার প্রমাণ হিসাবে তাঁদের পরিবারে রয়েছে ইলতুতমিসের আমলের (১২১১-১২৩৬ খ্রীষ্টাব্দ) একটি রূপোর কয়েন। কনকাঞ্জলির সময় ওই কয়েনকে এখনও ব্যবহার করা হয়। অবনীবাবু জানিয়েছেন, দালান মায়ের ডানদিকেই মন্দির লাগোয়া রয়েছে শিবমন্দির। এর থেকে তাঁদের অনুমান এই স্থানের একটা মাহাত্ম্য রয়েছে। তবে যেহেতু দালান মা পঞ্চমুণ্ডির আসনের ওপরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন তাই ওই পঞ্চমুণ্ডির আসনে কারা সাধনা করেছেন সে সম্পর্কে কোনও ইতিহাস জানা যায় না। শুধুমাত্র পুর্বপুরুষদের নির্দেশ অনুযায়ীই ওই বেদিতে কেউই ওঠেন না।

Related articles

দুদিন ছুটি বৃষ্টির! তবুও থাকছে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস

বঙ্গোপসাগরে ফের তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত। তার জেরে ফের ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। যার প্রভাব ওড়িশা ও বাংলার...

অনেক প্রেরণা তাঁরই: জন্মদিবসে মাদার টেরেসাকে স্মরণ মুখ্যমন্ত্রীর

তিনি যত না ছিলেন ম্যাসিডোনিয়ার তার থেকেও বেশি ছিলেন ভারতের, এই বাংলার। যাঁদের বেঁচে থাকার কোনও আশাই ছিল...

সবার ভালোবাসা লালবাগচা রাজাকে, মুম্বইয়ের গণেশ পুজোয় টক্কর দিতে তৈরি অন্যরাও

মুম্বইয়ের লালবাগের রাজাকে (Lalbaugcha Raja) কে না চেনে। সারাবছর আখ্খা মুম্বইকর অপেক্ষা করেন তাঁর ঝলক দর্শনের জন্য। এবছরও...

প্রাথমিক টেট-এর তথ্য ফাঁস হয়নি, বিভ্রান্তি কাটিয়ে জানালো পর্ষদ

নতুন জালিয়াতির বিরুদ্ধে কড়া রাজ্যের শিক্ষা দফতর। প্রাথমিক টেট-এর (Primary TET) তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে নতুন করে বিভ্রান্তি...
Exit mobile version