রক্তবীজ: টানটান রহস্য আর জমজমাট অভিনয়, এই ছবি পুজোর Must Watch

 

জয়িতা মৌলিক

 

নতুন জামা, পেটপুরে ভুরিভোজ এবং নতুন সিনেমা- এইসবের হাত ধরেই বাঙালির দুর্গাপুজো। আর সেই ফিল্মেও যদি থাকে পুজোর ফ্লেভার, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এবারের পুজো রিলিজগুলির মধ্যে এই কথা বলা যায় নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘রক্তবীজ’ নিয়ে। একেবারে পুজোর টাইমলাইনে তৈরি উইন্ডোজ ও সঞ্জয় আগরওয়ালের প্রযোজনায় তৈরি এই ছবি মুক্তি পেয়েছে পঞ্চমীতেই।

নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘বেলা শুরু’, ‘হামি’- এই ধরনের ছবিই দেখে অভ্যস্ত দর্শকের কাছে ‘রক্তবীজ’ এক বিশাল বড় চমক। শুধু থ্রিলার নয়, এই ছবির বাঁকে বাঁকে রয়েছে ছক ভাঙার গল্প। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি হয়েছে অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র। বাংলায় দেশের বাড়িতে তিনি আসেন। সেখানে বাড়ির পুজোয় চণ্ডীপাঠ করেন। সঙ্গে থাকেন তাঁর দিদি। এই কটা দিন ছেলেবেলায় ফিরে যান দুই পক্ককেশ ভাই-বোন। কিন্তু এটা তো সেই পরিবারের সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প নয়। এটা থ্রিলার। আর সেখানে টার্গেট স্বয়ং রাষ্ট্রপতি। কারণ, এক সন্ত্রাসবাদীর ফাঁসির সাজা তিনি মাফ করেননি। সেই জঙ্গিগোষ্ঠী এবার অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়কেই টার্গেট করেছে। তাঁকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই দুঁদে পুলিশ অফিসার। পঙ্কজ সিনহা ও সংযুক্তা মিত্র- তাঁদের কাঁধেই এই গুরুভার। রাজ্য ও কেন্দ্রের পুলিশের মধ্যে যে দড়ি টানাটানি তা তো রয়েছেই। কিন্তু পাশাপাশি রয়েছে অনুচ্চারিত প্রেম। ঠিক পুজোর আবহে যেমনটি হয় আরকি। একটু খুনসুটি, একটু ভালো লাগা। সব মিলিয়ে এককথায় পুজোর জমজমাট ছবি।

এবার আসি অভিনয়ে। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় আর অনুসূয়া মজুমদার- দিদি আর ভাইয়ের চরিত্রে এই দুজন ঠিক অভিনয় করেননি, যেন ওই চরিত্র দুটোই তাঁরা। পোড় খাওয়ার রাজনীতিবিদ, ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করা দিল্লির আভিজাত্য- সবই ফুটে উঠেছে বিদেশে লেখাপড়া করা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে ইনি ভোলেননি মাটির টান। অনুসূয়া মজুমদার যে কোনও চরিত্রে নিজেকে এমনভাবে ঢেলে দেন, সেই চরিত্র থেকে তাঁকে আলাদা করা যায় না।

আরও পড়ুন: “মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে চাই, কিন্তু…” পাইলটকে ইঙ্গিত গেহলটের

চমকে দিয়েছেন মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) আর আবীর চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)। আবীরকে ব্যোমকেশে গোয়েন্দা চরিত্র দেখা গিয়েছে ঠিকই, তবে পুলিশের চরিত্রে আবির অসাধারণ। দিল্লির রাজপথ ধরে তিনি যখন জগিং করতে করতে ছুটে আসছেন, তখনই স্যালুট ঠোকার মুহূর্ত তৈরি হয়ে যায়। আর একদিকে মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) রাজ্য পুলিশের দক্ষ অফিসার। যার কথায় আর কাজে নিজেকে প্রমাণ করার অদম্য চেষ্টা। দিল্লি থেকে আসা পঙ্কজ সিনহার সঙ্গে সংযুক্তা মিত্রর একটা টক্কর থাকে ছবির শুরুতে। আর সেই পথ ধরেই এগিয়েছে তাঁদের চরিত্রের রসায়ন। হালকা প্রেমের ছোঁয়া। সে প্রেম খুব একটা প্রকাশ্যে আসেনি কিন্তু রসায়ন জমে গিয়েছে। এর আগে আবির-মিমি এক ছবিতে থাকলেও জুটি বেঁধেছেন এই প্রথম। পরিচালকরা এবার মিমি-আবিরের জুটি নিয়ে ভাববেন।

রক্তবীজ-এর টানটান অ্যাকশন, বিস্ফোরণ এই সব কিছুর মধ্যেও একটু রিলিফ দিয়েছেন স্থানীয় থানার ওসি নিত্যানন্দ পুততুন্ড। সেই ভূমিকায় সাবলীল অভিনয় করেছেন কাঞ্চন মল্লিক। আর তার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন সাংবাদিক ভাস্কর হিসেবে অম্বরিশ ভট্টাচার্য। তবে আলাদা করে দেবাশিস মণ্ডল, দেবলীনা কুমার, সত্যম ভট্টাচার্য প্রত্যেকে নজর কেড়েছেন। এককথায় থ্রিলার এবং চরিত্রায়ন যদি এই ছবির USP হয়, তাহলে অভিনয় হচ্ছে কেকের মাথার সেই চেরিটার মতো, যেটা না দিলে ছবিটা অসম্পূর্ণ হয়ে যেত।

নন্দিতা, শিবপ্রসাদ ও জিনিয়া সেনের লেখা গল্পে টানটান রহস্য। জিনিয়া ও শর্বরী ঘোষালের লেখা সংলাপে একেবারে দশমী পর্যন্ত বজায় থেকেছে রহস্য। কী হল শেষে! সেটা তো বলাই যাবে না। গল্পটাও আর বলব না। কারণ, পুজোর আবহে রক্তবীজ না দেখলে শুধু মিস হবে তাই নয়, পুজোটাও পুরোপুরি উপভোগ করা যাবে না।

Previous article‘র.ক্তবীজ’ জুড়ে প্রতিমুহূর্তে র.হস্য, সৃজিতের প্রথম কপ ইউনিভার্সে মজল দর্শক
Next articleউৎসবের মরসুমে আরও জোরে ফাটানো যাবে শব্দবা.জি! বড় ছাড় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের