নজরুলগীতির বি.কৃতি! রহমানের বি.রুদ্ধে একসুরে ক.ড়া নি.ন্দা দুই বাংলার

মাজের বিভিন্ন মহলের মানুষ এমন সৃষ্টিকে মন থেকে মানতে নারাজ। এপার বাংলা হোক বা ওপার বাংলা সমস্ত বিশিষ্টরাই এমন গানের সমালোচনায় সরব। অনেকে লিখেছেন, গানটিকে এভাবে বদলে ফেলার কোনও প্রয়োজন ছিল না।

সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘পিপ্পা’। প্রকাশ্যে এসেছে এই ছবিতে, এ আর রহমান-এর (A R Rahman) কম্পোজ করা একটি গান। কিন্তু সেই গান মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই রীতিমতো চটেছেন অনুরাগীরা। কাজী নজরুল ইসলামের (Nazrul Islam) বিখ্যাত গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটিকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন রহমান। আর সেখানেই যত সমস্যা। জনপ্রিয় এই গানটিকে এমনভাবে বদলে ফেলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই কটাক্ষ করেছেন সঙ্গীতশিল্পীকে। সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষ এমন সৃষ্টিকে মন থেকে মানতে নারাজ। এপার বাংলা হোক বা ওপার বাংলা সমস্ত বিশিষ্টরাই এমন গানের সমালোচনায় সরব। অনেকে লিখেছেন, গানটিকে এভাবে বদলে ফেলার কোনও প্রয়োজন ছিল না। অনেকে তো আবার সরাসরি বলেছেন, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছেন রহমান। ইতিহাস না জেনেই তিনি গানটিকে বিকৃত করেছেন।

পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী (সঙ্গীত শিল্পী)

গানটার মর্ম, মূল গায়কী সঙ্গীত পরিচালক এবং গায়করা কেউই অনুধাবন করতে পারেননি। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবো। এত বড় সাহস কী করে হল একজন শিল্পীর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো একজন কবির সৃষ্টিকে এ ভাবে বিকৃত করার। বাঙালি হিসাবে সঙ্গীত জগতের মানুষ হিসাবে আমি এর বিচার চাই।

জয় গোস্বামী (কবি)

কারার ওই লৌহ কপাট, যে সামাজিক পরিস্থিতিতে লেখা হয়েছিল, এবং এই গান একটি পরাধীন দেশে জন মানষে যে উদ্দীপনা তৈরি করেছিল, সেটা অনুভব করার মতন মন, যে নজরুলের অনেক পরে কাজ করছেন, একজন প্রতিভাবান সুরস্রষ্টার ও তার মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। এ আর রহমান নিজে আরো নতুন নতুন কাজ করুন। নজরুল ইসলাম যে কাজ করে গিয়েছেন বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কাজ করে গিয়েছেন, সেই কাজের মধ্যে তিনি নিজের অনুপ্রবেশ করছেন কেন?

গৌতম সেনগুপ্ত (প্রাক্তন ডিজি, এএসআই, ঐতিহাসিক)

কারার ওই লৌহকপাট গান, সুরটি বাঙালি জাতির বিশেষ যে সাহসিকতার গুণ তাই তুলে ধরেছিল। কিন্তু এ আর রহমানের সুরে এই নতুন গান আর চারটি আবোল তাবোল গানের মতোই হয়েছে। অপমান হয়েছে নজরুলের কথার। নজরুলের ওই কথায় এই গান মোটেই মানাচ্ছে না। দ্রুত এই গান সরিয়ে ফেলা উচিত।

অরিন্দম শীল (চিত্র পরিচালক)

আমি গানটা শুনেছি। আমার মনে হয়েছে লিরিক্স না বুঝে সুর দেওয়া হয়েছে। রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, এই গানে আমার আপত্তি রইল।

প্রচেত গুপ্ত (সাহিত্যিক)

রহমান অপরাধ করেছেন। আমি মনে করি নজরুলের এই গান কেবল বাংলার আবেগের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নয়, এই গানটির যা রিদম, যে ভাষা, যেভাবে সমবেত কোরাসে হওয়া হয়, তা আন্তর্জাতিক। রহমান বড় শিল্পী হতেই পারেন, কিন্তু বড় শিল্পী হলেই সব বদলে দেওয়ার লাইসেন্স ওনাকে কে দিয়েছে?

পণ্ডিত তন্ময় বসু (সঙ্গীত শিল্পী)

অত্যন্ত আপত্তিকর। তীব্র প্রতিবাদ জানাই। উনি যেই হোন না কেন,এটা করতে পারেন না। রবীন্দ্রনাথ আর নজরুল বাংলা আর বাঙালির আবেগ, সাংস্কৃতিক মেরুদন্ড। সেটায় যে কেউ আঘাত করতে পারেন না।

সুদেষ্ণা রায় (চিত্র পরিচালক)

এক্সপেরিমেন্টেশন করা যেতে পারে, সেটা যদি বিকৃতির পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাকে এক্সপেরিমেন্টেশন বলে না। বিকৃত একটি এরেঞ্জমেন্ট হয়েছে। গানের সারাংশ গানের সারাৎসার সবকিছুই লঙ্ঘিত হয়েছে। এটা আশা করা যায় না, এমন ধরনের এক ঐতিহাসিক গানকে, এভাবে বিকৃত করে তোলা যায়।

গৌতম হালদার (নাট্যব্যক্তিত্ব)

রহমান বড় মানুষ যখন, তখন নিজে একটা এমন কম্পোজিশন বানিয়ে দেখান। সেটাই তো ভালো হত। নজরুল কত বড় সেটা উনি জানেন না, আসলে উপলব্ধি করতেই পারেননি। তাই এই অদ্ভুত ও পীড়াদায়ক বিনির্মাণ হয়েছে।

অভীক মজুমদার (অধ্যাপক)

‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটির গীতিকার এবং সুরকার কাজী নজরুল ইসলাম। সুতরাং এই গানটির নিজস্ব একটি অবয়ব আছে। সেই গানের সঙ্গে একটা সময়, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আবেগ জড়িত। এ আর রহমানের সেই সংস্কৃতির ইতিহাস এবং স্মৃতির উত্তুঙ্গ মুহূর্ত সম্পর্কে কতটুকু জানেন? তিনি নিজে একটি দেশাত্মবোধক গান লিখে বরং সুর দিন।

সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী (প্রাক্তন উপাচার্য রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)

যখন আমরা নজরুল বা রবীন্দ্রনাথের মতো ব্যক্তিত্বরা যারা রচনা করেছেন গান এবং সুর দিয়েছেন সেই গানগুলোকে যখন আমরা ব্যবহার করি বা গাই বা প্রয়োগ করি চলচিত্রে তখন বোধয় আমাদের আরও বেশি সচেতন থাকাটাই জরুরি। এটা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত এটা না করলেই ভালো হতো।

ওমপ্রকাশ মিশ (প্রাক্তন উপাচার্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়)

স্বনামধন্য শিল্পীদের শিল্পীদের রচনা নিয়ে এই ধরণের রিমিক্স করার প্রবণতা অত্যন্ত আপত্তিজনক। আর আর রহমান খুবই গুণী মানুষ। তাঁর উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে ভালো করে বুঝে তারপর এই ক্ষেত্রে ঢোকা উচিত।

সনাতন দিন্দা (চিত্রশিল্পী)

এ আর রহমান মানে ওয়ার্ল্ড মিউজিক। তাঁকে আমি খুব সম্মান করি। কিন্তু আজ উনি যা করেছেন তাতে আমি মর্মাহত। কারার ওই লৌহ কপাট গানটার মধ্যে যে জোশটা ছিল সেটাকে গ্রাম বাংলার পল্লীগীতির মতন করে ফেললেন।

শিলাজিৎ (সঙ্গীত শিল্পী)

অন্য প্রদেশের মানুষরা এই গানের মর্ম বুঝবে না। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তো বুঝি এই গানের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, আর তা নষ্ট হয়েছে। আদলে না রহমান, না যারা গিয়েছে, কেউই কিস্যু বুঝে উঠতে পারেনি এই গানের মোটিভেশনাল স্পিরিটটা। সেটাই তো গানটির আসল ক্যারিশমা।

সৈকত মিত্র (সঙ্গীত শিল্পী)

গানের পুনর্নির্মাণ বা বিনির্মাণের বিপক্ষে নই আমি। কিন্তু সেই মূল সঙ্গীতের ভাবনা নষ্ট হলে পুরো সৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যায়। এ আর রহমান বড় শিল্পী, তিনি অনেক খ্যাতি এবং সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু তিনি বড় সুরকার হলেও এই গানটার মূল ভাব ও গায়কী ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। আরও গবেষণার প্রয়োজন ছিল।

রাঘব চট্টোপাধ্যায় (সঙ্গীত শিল্পী)

এই গানটি আপনার একান্ত সম্পত্তি নয় মিস্টার রহমান! বাংলা ও বাঙালির আবেগ নিয়ে আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন না। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই গান ছিল বিপ্লবীদের প্রেরণা, উৎসাহ। তাকে রাতারাতি ভেঙ্গে নতুন করে গড়া যায় না।

অভি চক্রবর্তী (নাট্য ব্যক্তিত্ব)

কারার ওই লৌহকপাটের মতো কালজয়ী নজরুলগীতির অর্থ না বুঝে, প্রেক্ষিত না বুঝে, দৃষ্টিভঙ্গি না বুঝে, প্রাথমিক আত্মাটাই না বুঝে যেভাবে সুর বদলে গাইয়ে দিলেন রহমান সাহেব তাতে সাধারণ বাঙালি হিসেবে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

উল্লাস মল্লিক (সাহিত্যিক)

এতো জঘন্য! বসে শোনা যাচ্ছে না। এ আর রহমানের মতো এমন বড় মাপের সুরকারের কাছ থেকে এটি আশা করা যায় না। আমার মনে হয় ইতিহাসকে ইতিহাসের মতই রাখা উচিত। বিকৃত করা উচিত নয়।

রুনা লায়লা (সঙ্গীত শিল্পী)

সম্পূর্ণ গান ভিন্ন সুরে রিমেক করা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলা গানটা অতোটা বোঝে না সে।কোনও সন্দেহ নেই যে এ আর রহমান বড় মাপের সুরকার। তবে নজরুল ইসলামের গান সবার জন্য নয়। একটু ভেবে চিন্তে হাত দেওয়া উচিত।

ফিরদৌস আরা (সঙ্গীত শিল্পী)

নজরুল ইসলাম ছিলেন তারুণ্যের কবি। আর নতুনের কাজ তো নতুন কিছুই হবে। সেক্ষেত্রে যদি ফিউশন হয় তাহলেও কোনও অসুবিধে ছিল না। এটি একটি বিপ্লবী গান। কিন্তু বদলে গেল সুর। আর সেখানেই আমার আপত্তি।

সুজিত মুস্তাফা (সঙ্গীত শিল্পী)

একজন শ্রোতা হিসাবে আমার ক্ষোভ জানাচ্ছি। এরকম একটা বিষয় ঘটুক, কখনোই চাইনি। এটি নজরুলের নিজের সুর করা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। এই গানে এভাবে হাত দেওয়া মানে ক্রিয়েটরদের মরাল রাইটের আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

লুৎফুর নাহার পাখি (সঙ্গীত শিল্পী)

কাজী নজরুল ইসলামের এমন একটি গানের আত্মাকে ধ্বংস করা হয়েছে। যে গান আমাদের দেশের স্বাধীনতার মতো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, যা শুনলে আমাদের মহান বিপ্লবীদের প্রতি মাথানত হয়ে আসে। তা নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। এ আর রহমানের মতো শিল্পীর কাছ থেকে এটা আশা করিনি। একজন শ্রোতা হিসেবে,শিল্পী হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানালাম।

অরুণা বিশ্বাস (চিত্র পরিচালক)

এ আর রহমান আপনি ক্ষমা চাইবেন সমগ্র বাঙালির কাছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যে গান বাঙালিকে আন্দোলিত করেছিল সে গানের অমর্যাদায় আপনি ক্ষমাহীন।

 

 

 

 

Previous articleদীপাবলির মাঝেই মর্মা.ন্তিক দুর্ঘ.টনা, হায়দরাবাদে বহুতলে আ.গুন লেগে মৃ.ত ৯
Next articleপ্যালেস্টাইনপন্থী মিছিলে পুলিশি বিশৃঙ্খলা, স্বরাষ্ট্র সচিবকে বরখাস্ত করলেন ঋষি সুনক