Saturday, May 3, 2025
উৎপল সিনহা

‘ তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় গাধা , সে উঠে দাঁড়াও ‘ , অধ্যাপক বললেন ।
আসন্ন দোল উৎসবের প্রাক্কালে সবারই মন রঙিন । সেই অবসরে রসিক অধ্যাপক ছাত্রদের বুদ্ধির পরীক্ষা নিচ্ছেন ।
‘ কি হলো , উঠে দাঁড়াও ! ‘
স্তব্ধ ক্লাস । কে আর সাধ করে গাধা হতে চায় । বেশ কিছুক্ষণ পরে একজন উঠে দাঁড়ালো । গোটা ক্লাস জুড়ে হাসির হিল্লোল । অধ্যাপক একগাল হেসে বললেন , ‘ ও , তাহলে তুমিই সেই গাধা !’
ছাত্রটি বিনীত স্বরে বললো , ‘ না স্যার , তা নয় , আসলে আমার মনে হলো আপনি একা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন , আপনার প্রশ্নের পর সেটা মোটেই শোভন দেখাচ্ছিল না , তাই আপনাকে সঙ্গ দেওয়া উচিত ভেবে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। ‘
আবার গোটা ক্লাস জুড়ে তুমুল হাসির হল্লা ।

গাধা নিয়ে গল্পের শেষ নেই ।
এক গাধা পালকের পঞ্চাশটি গাধা । বড় বদমেজাজ সেই মালিকের । পান থেকে চুন খসলেই লাঠির বাড়ি পড়ে গাধাদের পিঠে । লাগাতার মার খেতে খেতে বিপন্ন গাধারা একদিন ঠিক করলো মালিকের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ দেখাবে । তারা নিজেদের মধ্যে অনেক শলাপরামর্শ করে প্রকাশ্য সমাবেশের ডাক দিলো ।

সমাবেশের শুরুতেই গাধাদের মোড়ল চিৎকার করে বললো , ‘ ভাইসব , তোমরা যদি মালিকের কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চাও তাহলে সবাই সমস্বরে গর্জন করো । ‘ অমনি গাধারা সবাই তাদের বিকট স্বরে ‘ ঢেঁচু ঢেঁচু ‘ করে ডেকে উঠলো । সেই বিকট চিৎকার শুনে মালিক লাঠি নিয়ে তেড়ে এসে গাধাদের এলোপাতাড়ি পেটাতে লাগলো । গাধারা মার খেয়ে ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করলো । একটা গাধা চেঁচিয়ে উঠলো ,
‘ আমি তো প্রথমেই বলেছিলাম , প্রকাশ্য সমাবেশের ডাক দেওয়া একেবারেই উচিত হবে না । ‘

নির্বোধ হিসেবে গাধার যতোই বদনাম থাকুক না কেন , আদপে তা মোটেও সত্য নয় । গাধার প্রশংসা করা সহজ না হলেও প্রকৃত অর্থে কিন্তু গাধারা দারুণ বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা নিরীহ এবং মানুষের অত্যন্ত অনুগত । কারো ক্ষতি তো এরা করেই না , বরং উপকারই করে । মানুষ ‘ গাধা ‘ শব্দটি ব্যবহার করে নেতিবাচক অর্থে । কিন্তু সত্যিটা হলো এই যে , গাধা খুবই বুদ্ধিমান , কর্মঠ ও কর্তব্যনিষ্ঠ । গাধার আত্মপ্রত্যয় ও সম্মানবোধ অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে বেশি। গাধা মোটেও বোকা নয় , বুদ্ধিহীন তো কিছুতেই নয় ।

গাধাকে ঘোড়ার ছোট সংস্করণ বললে খুব ভুল হবে না । অথচ একটি গাধা একই আকারের একটি ঘোড়ার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। গাধার স্মৃতিশক্তি অবিশ্বাস্য । তারা ২৫ বছর আগে দেখা এলাকা এবং অন্য গাধাদের সহজেই শনাক্ত করতে পারে । তারা প্রচণ্ড জেদি । তাদের আত্মরক্ষা করার প্রবল ক্ষমতা আছে । গাধাদের ভয় দেখিয়ে অথবা জোর খাটিয়ে কোনো কাজ করানো যায় না।

এরা প্রখর কৌতুহলী এবং সহজে চমকে ওঠে না । এরা স্বাধীন থাকতে ভালোবাসে এবং নিজেদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে । একটি গাধা মরু পরিবেশে ৬০ মাইল দূরে থেকেও অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে । ঘোড়ার চেয়ে বড় কান গাধাদের শীতল থাকতে সাহায্য করে । গাধা একা থাকতে পছন্দ করে না । সঙ্গী হিসেবে অন্য প্রাণী তাদের পছন্দ । একজন দক্ষ পশুপালক পশুদের নেতা হিসেবে গাধাকেই বেছে নেবেন । কেননা খামারে পালিত পশুরা অন্য হিংস্র পশুদের দ্বারা আক্রান্ত হলে তাদের রক্ষা করতে গাধাই প্রথমে এগিয়ে আসে । গাধা কিন্তু নেকড়ে বাঘ বা অন্য শিকারীদের হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারে সঙ্কেতের সাহায্যে । প্রাণী হিসেবে এরা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

গাধা বা গর্দভের বৈজ্ঞানিক নাম ইকুস আফ্রিকানাস এসিনাস । ঘোড়া পরিবারের অযুগ্ম খুরযুক্ত চতুস্পদ প্রাণী গাধা কালক্রমে গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়েছে । বিশ্বসভ্যতার ঐতিহ্য গড়তেও গাধার ভূমিকা কম নয় । আদিকালে যখন গাড়ি ছিল না তখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য পরিবহনে গাধাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম । মিশরীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সমূহের অধিকাংশ ধাতু বহন করা হয়েছিল গাধাদের মাধ্যমে ।
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় সঙ্কীর্ণ পথের ওপর কাজ করার জন্য ব্যবহার করা হতো গাধাদের ।

রোমান সেনারা গাধাদের কৃষি পণ্য বহনকারী প্রাণী হিসেবে ব্যবহার করতো । ভারতের মরু অঞ্চলে , বিশেষ করে রাজস্থান প্রদেশের বেশ কিছু জায়গায় অন্যতম বাহন গাধা । এছাড়া দেশের দুর্গম অঞ্চলে মালপত্র নিয়ে যাত্রী পরিবহনে গাধারাই ভরসা । নোংরা ও ঘোলা জল গাধাদের অপছন্দ । এরা পরিষ্কার জল ছাড়া পান করে না । তরতাজা সবুজ ঘাস এরা খুব পছন্দ করে । খড় খেতেও পছন্দ করে খুব ।

গাধারা তাদের বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসে । সবসময় তাদের আগলে রাখে । অন্য প্রাণীদের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রেও গাধাদের কোনো বিকল্প নেই । এরা ভীষণ দায়িত্বশীল । অসুস্থ , আহত ও প্রতিবন্ধী প্রাণীরা গাধাদের তত্ত্বাবধানে থাকতে পছন্দ করে । গাধাদের মত সহৃদয় ও স্নেহশীল প্রাণী খুব বেশি নেই ।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মা শীতলা অর্থাৎ শীতলা দেবীর বাহন গাধা । মায়ের একহাতে কলস ও অন্য হাতে ঝাড়ু । ভক্তদের বিশ্বাস এই যে , কলস থেকে সুধা দান করেন মা এবং ঝাড়ুর মাধ্যমে রোগাক্রান্তদের রোগ দূর করেন । আফ্রিকান বন্য গাধা থেকে উদ্ভূত একটি উপ-প্রজাতি অথবা একটি পৃথক প্রজাতি হিসেবে এদের চিহ্নিত করা যেতে পারে । ৫০০০-৭০০০ বছর আগে আফ্রিকায় এরা গৃহপালিত শান্ত পশু ও কর্মজীবী হিসেবে মানুষের একান্ত আস্থাভাজন ও আপন হয়ে উঠেছিল । এরপরেও কি আর কাউকে
‘ গাধা ‘ ব’লে বিদ্রুপ করা উচিত হবে ?

আরও পড়ুন- ভোট চলাকালীন সমাজমাধ্যমে প্রচার! ফের রাহুলের বি.রুদ্ধে কমিশনে অ.ভিযোগ বিজেপির

Related articles

আইএএস-আইপিএসদের নয়া ইউনিফায়েড পেনশন প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত রাজ্যের

সর্বভারতীয় ক্যাডারের অন্তর্গত আইএএস, আইপিএস সহ অন্যান্য আধিকারিকদের জন্য রাজ্য সরকার নতুন ইউনিফায়েড পেনশন প্রকল্পের (Unified Pension Scheme)...

বিনা অনুমতিতে পাকিস্তানি মহিলাকে বিয়ে! ভিসা শেষের পর আশ্রয় দিয়ে বরখাস্ত CRPF জওয়ান

পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভারত...

সাত লাখি কলম! মনের মতো লেখার টানে পেন উৎসবে কলকাতার মানুষ

দাম দিয়ে কলমের আঁচড়ের যে মূল্য দেওয়া যায় না তার নজির মেলে বাঙালির পেনের প্রতি আকর্ষণ দেখলে। ল্যাপটপের...

ওয়াকফ আইন ঘিরে হিংসা: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাজ্য, সোমে মুর্শিদাবাদে মুখ্যমন্ত্রী

ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদ জেলা। হিংসার ঘটনায় বহু মানুষের...
Exit mobile version