১৭ দিনের ল.ড়াই শেষ! উদ্ধার ৪১ জন শ্রমিক, স্বস্তিতে বাংলার ৩ পরিবার

অবসান হল এক দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের। অবশেষে স্বস্তি। একে একে ৪১ জন শ্রমিকই বেরিয়ে এলেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে। টানা ১৭ দিন পর শ্রমিকদের বেরিয়ে আসার খবরটা শুনে ধরে প্রাণ ফিরেছে কোচবিহারের মানিক তালুকদারের স্ত্রী সোমা দেবীর। একই চিত্র হুগলির পাখিরা ও প্রামাণিক পরিবারেও। টানা ১৭ দিন নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধুই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে গিয়েছেন সকলে। অবশেষে স্বস্তি। একে একে ৪১ জন শ্রমিকই বেরিয়ে এলেন উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে।

সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধারের পর স্বামীকে ভিডিও কলে দেখে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠেছিলেন কোচবিহারের মানিক তালুকদারের স্ত্রী সোমা। অন্ধকার সুড়ঙ্গ থেকে একে একে উদ্ধার হলেন ৪১ জন শ্রমিক। সঙ্গে সঙ্গেই মানিক তালুকদারের ফোনে চেষ্টা করেন পরিবারের মানুষেরা। ফোনের টাওয়ার মিলতেই বাড়িতে খুশির আমেজ। মিষ্টিমুখ। ভিডিও কলে মানিকবাবু কথা বলেন পরিবারের সবার সঙ্গে। বলেন,‍‘‘চিন্তা কোরো না, আমি ভাল আছি।’’

স্বামীর আটকে পড়ার খবরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন স্ত্রী সোমা। উদ্ধারের খবর পেয়ে চক চক করে উঠল তাঁর চোখ। অনেকদিন পর যেন স্বস্তির নিশ্বাস নিলেন। দুর্ঘটনার প্রথম দিন থেকেই তাঁদের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। এদিনও দুপুরেই মানিকবাবুর বাড়িতে পৌঁছে যান তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায়। ছিলেন এছাড়াও তুফানগঞ্জ ১ নং বিডিও সঞ্জয় ঘিসিং। পার্থপ্রতিম রায় জানান, সবসময় এই পরিবারের পাশে আছেন তাঁরা। মানিক তালুকদারের ছেলে মনা তালুকদার জানান, কালীপুজোর আগের রাতে দুর্ঘটনার আগের দিনও স্বাভাবিক কথা হয়েছিল তাঁদের সঙ্গে৷ এরপরে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন টিভিতে। এরপরে সেই এলাকায় খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন। তারপর থেকেই কেবল অপেক্ষা করতে হয়েছে। শুরুর দিন থেকে পাশে ছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে খোঁজ নিয়েছেন মন্ত্রী এবং স্থানীয় নেতারা। অভিভাবকের মতো দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।

অন্যদিকে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে, এই খবর পেয়ে খুশির হওয়া হুগলির পুরশুরার দুই পরিবারের। পাখিরা পরিবার ও প্রামাণিক পরিবার। ১৭ দিন ধরে এই দুই পরিবারের ছেলে সৌভিক পাখিরা ও জয়দেব প্রামাণিক উত্তরকাশিতে কাজে গিয়ে সুড়ঙ্গের ভিতরেই আটকে পড়েছিলেন। সেই খবর শোনার পর থেকেই চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছিল দুই পরিবারের। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই দুই পরিবারের চোখ ছিল টিভিতে। কখন তাঁদের ছেলে বাইরে বেরোতে সক্ষম হবে সেই খবরটা তারা পাবে। এবার সেই প্রতীক্ষার অবসান হল। সুড়ঙ্গ থেকে বের করা হল আটকে থাকা যুবকদের। তার মধ্যে পাখিরা ও প্রামাণিক দুই পরিবারের দুই ছেলেও রয়েছে। আর সেই খবর পাওয়ার পরেই খুশিতে চোখে জল সৌভিক ও জয়দেবের পরিবারের সদস্যদের।

এদিন সৌভিক পাখিরার মা বলেন, এতদিন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি হবে। শুধুই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু শুধু দিনের পর দিন কাটছিল আর উদ্ধারকাজে বাধা আসছিল। কিন্তু আজ সব শেষে জানতে পারলাম যে উদ্ধারকাজ শেষ। তাঁদের ছেলে অন্ধকার সুড়ঙ্গ থেকে বেরোতে সক্ষম হয়েছে। আর এটা জানতে পেরে যে আনন্দ হচ্ছে সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এবার বাড়ির ছেলেটা এবার বাড়ি ফিরবে। তবে সব থেকে খুশি হব যখন ছেলের গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে পারব আর ছেলের কাছে মা ডাক শুনতে পারব। তবে সবই ভগবানের কৃপা। ভগবানের কাছে এত প্রার্থনার ফল এত দিনে পাওয়া গেল। ছেলে এবার মায়ের কাছে ফিরবে।

অপরদিকে জয়দেব প্রামাণিকের বাবা বা মা কেউ কথা বলতে চায়নি। তাঁদের এক প্রতিবেশী বলেন, ছেলের সুড়ঙ্গে আটকে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই জয়দেবের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তারা কেউ কথা বলার মত অবস্থায় নেই। কিন্তু এবার ছেলে বাড়ি ফিরবে সেই খবর পেয়েছে এবার সব ঠিক হবে। আর এলাকার ছেলে এত বড় বিপদের মুখ থেকে এবার বাড়ি ফিরবে এটা খুবই খুশির খবর। উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার খবরে এখন আতঙ্ক উৎকণ্ঠা কাটিয়ে খুশির হাওয়া সমগ্র পুরশুরা জুড়ে।

আরও পড়ুন- অবশেষে ঘুচল ব.ন্দিদশা! ১৭ দিন পর উত্তরকাশীর সু.ড়ঙ্গ থেকে বেরোলেন ৪১ জন শ্রমিক

Previous articleঅস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় টি-২০ ম‍্যাচে হার ভারতের, অজিদের কাছে ৫ উইকেটে হারলো টিম ইন্ডিয়া
Next articleমোদি জমানায় বেড়েছে দু.র্নীতি এবং বৈ.ষম্য! বদলের ডাক বিশিষ্টদের