অন্যের ‘দৃষ্টি’ ফেরাতে শ্ম.শানে শ্ম.শানে ঘুরে চলেন শ্রীরামপুরের সীদাম!

সীদাম বাবু এই কর্মকাণ্ডের জন্য পাশে পেয়েছেন বহু মানুষকে, প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রীরামপুর সেবা কেন্দ্র চক্ষু ব্যাঙ্ক। এবার তাঁর ছেলের মতো এই প্রজন্ম আরও বেশি করে মানবিক হয়ে উঠুক, এগিয়ে আসুক এই কাজে এটাই তাঁর অনুরোধ সমাজের কাছে।

সুমন করাতি, হুগলি

শ্রীরামপুরের (Srirampore)! বাসিন্দা ষাটোর্ধ পৌঢ় সীদাম সাহা (Sidam Saha), পেশায় আইসক্রিম ব্যবসায়ী হলেও সারাক্ষণ তাঁকে শ্মশানে শ্মশানে ঘুরতে দেখা যায়। কেন? অন্যকে পৃথিবীর আলো দেখানোর উদ্দেশ্যে। সকাল হলেই খোঁজ করেন কোথাও কেউ মারা গেছে কিনা। তারপর শোনা যায় তাঁর কাতর আর্তি, “দাদা চোখ দুটোকে পুড়িয়ে নষ্ট করবেন না, দয়া করে চোখ দান করে দিন। এই চোখ দুটি দিয়েই কেউ না কেউ পৃথিবীর আলো দেখবে।”

মানুষ অমর নয়, কিন্তু তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে পারেন বছরের পর বছর। যিনি আর কোনদিন চোখ খুলবেন না, তাঁর দৃষ্টি দিয়ে যদি অন্যকে এই পৃথিবীর সবকিছু দেখানো যায় তবেই তো চোখের আলোর পূর্ণতা, তাই না? মরণোত্তর চক্ষুদানের কথা বিভিন্ন প্রচারে শোনা বা জানা যায়, কিন্তু ২০২৩ সালের শেষ লগ্নে দাঁড়িয়েও কিছু কুসংস্কার কিছু অজ্ঞতা আমাদের অনেকটা পিছিয়ে রেখেছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি সীদাম সাহার মতো মানুষেরা। সেই ১৯৮০ সাল থেকে এভাবেই কর্নিয়া সংগ্রহ করার কাজে ব্রতী হয়েছেন তিনি। অবশ্য মৃতের পরিবারকে অনুরোধ করলেই যে তাঁরা চক্ষুদানের সম্মত হন এমনটা নয়। বেশির ক্ষেত্রেই “না হবে না” বলে দেওয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তাঁর আর্জি মেনে মৃতের পরিবার মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করার অনুমতি দেয়। বহু মানুষ মৃত্যুর আগেই চক্ষু দানের অঙ্গীকার করে যায়, আবার বহু ক্ষেত্রে বুঝিয়ে সরাসরি মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়। নিজের কাছে থাকা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ছোট্ট একটি অস্ত্র প্রচারের করে মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করেন সীদাম। এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মৃতদেহ থেকে চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন তিনি ও তাঁদের সংগঠন। একটা সময় ছিল যখন তিনি একা এই কাজটি করতেন। এখন ছেলে সায়ক সাহাকে পাশে পেয়েছেন , কলকাতা মেডিকেল কলেজ (Medical College) থেকে ট্রেনিং নিয়ে বাবার এই মহৎ কাজের অংশীদার হচ্ছেন সায়ক। সীদাম বাবু এই কর্মকাণ্ডের জন্য পাশে পেয়েছেন বহু মানুষকে, প্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রীরামপুর সেবা কেন্দ্র চক্ষু ব্যাঙ্ক। এবার তাঁর ছেলের মতো এই প্রজন্ম আরও বেশি করে মানবিক হয়ে উঠুক, এগিয়ে আসুক এই কাজে এটাই তাঁর অনুরোধ সমাজের কাছে।

 

Previous articleআইএস জঙ্গি যোগে গ্রেফতার ১৩, দুই রাজ্যের ৪০ জায়গায় NIA তল্লাশি
Next articleসংস্কারের কাজ চলাকালীন বি.পত্তি! ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখায় লাইনচ্যুত মালগাড়ি, না.কাল নিত্যযাত্রীরা