শিল্পীর প্রয়াণে শিল্প স্বব্ধ হয় না। তবে অবশ্যই সেই শিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। মাত্র ৫৫ বছর বয়সে প্রয়াত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে উজ্জ্বল নক্ষত্র রাশিদ খান। উত্তরপ্রদেশের সুপ্রাচীন রামপুর-সাহশ্বন ঘরানা থেকে আধুনিক ফিউশন পর্যন্ত বিস্তৃত যার সঙ্গীত সফর, তাঁর অকাল প্রয়াণে যবনিকা পড়ল অনেক সম্ভাবনার। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদাউনে এক অসীম সম্ভাবনা নিয়ে যে সফর শুরু হয়েছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে, মঙ্গলবার বিকালে তারই অবসান হল।

সুরের সঙ্গে রাশিদের সফর শুরু হয়েছিল তাঁর পরিবারের পরম্পরার হাত ধরেই। উত্তরপ্রদেশে মায়ের পক্ষের দাদু উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছেই শুরু হয়েছিল তাঁর প্রথম তালিম। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ প্রথম নজরে আসে পরিবারের জ্যেষ্ঠ গোলাম মোস্তাফা খানের। তানসেনের ৩১তম বংশধরকে আর তারপরে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র ১১ বছর বয়সে মঞ্চে তাঁর প্রথম পরিবেশন। ১৯৮০ সালে আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি-র দ্বায়িত্ব নিয়ে নিসার হুসেন খান কলকাতা চলে আসেন। তখনই ১৪ বছর বয়সে রাশিদ খানও চলে আসেন কলকাতায়। আর সেই থেকেই যেন কলকাতার একজন হয়ে ওঠেন।

দাদু নিসার খানের নিয়ামানুবর্তী তালিমে ছোটবেলায় অনেক সময়ই অধৈর্য হয়ে পড়তেন। সেই তালিমই তাঁকে উস্তাদ করে তুলেছিল। তবে হয়তো আরও নতুন কিছুর নেশায় বুঁদ ছিলেন রাশিদ। নিসার হুসেন খানের মধ্য লয়ের তাল নির্ভর গোয়ালিয়র ঘরানাকে নতুন রঙ দিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগতভাবে খেয়ালের রাগের প্রতি বেশি আকর্ষণ ছিল তাঁর। রাশিদের গানে মিশেছিল উস্তাদ আমির খান ও উস্তাদ ভিমসেন যোশির ঘরানা। এতেই বোধহয় তাঁর গানে মিশেছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে আবেগ ও তার প্রকাশ।

২০০৬ সালে বাংলার সংগীত নাটক আকাডেমি পুরস্কার জয়ী হন তিনি। ২০১২ সালে তাঁকে বঙ্গভূষণে ভূষিত করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে পদ্মভূষণ সম্মান পান রাশিদ খান। তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি এক রকম দক্ষতায় বলিউডেও তাঁর সুর বিস্তার করেছিলেন রাশিদ খান। ইসমাইল দরবারের কিসনা চলচ্চিত্রে ‘তোরে বিনা মোহে’ যেমন গেয়েছেন তিনি, তেমনই রয়েছে জব উই মেট চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া ‘আওগে জব তুম’ ঢেউ তুলেছিল আসমুদ্র হিমাচলে। আবার বাংলা চলচ্চিত্র কাদম্বরী-তে তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে ‘ভরা ভাদর’। মঙ্গলবার তাঁর প্রয়াণে শুধু যে একজন সঙ্গীত সম্রাটের প্রয়াণ হল তা নয়, প্রয়াণ হল এক মানবিক শিল্পীর।

