মাছে-ভাতে বাঙালির সেরা আকর্ষণ, টাটকা থেকে শুটকিতে সাজানো ‘মাছের মেলা’

দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী,পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে আসেন। রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা থেকে শুরু করে শুটকি - কোনও মাছই বাকি থাকে না মেলার নামকে সার্থক করতে।

বাঙালি বাড়িতে অতিথি এলে সবার আগে চিন্তা শুরু হয় কী মাছ খাওয়ানো হবে। এমনকি পরিবারের সদস্য দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরলেও তার প্রিয় মাছ পরিবেশন করেই আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হয়। অবাঙালি মহলে এই নিয়ে বাঙালি ‘বদনাম’ও রয়েছে বেশ। তবে তাতে কি আসে যায়। এই বাংলাই ৫০০ বছর ধরে আজও আয়োজন করে চলেছে মাছের মেলাও।

এমনিতেই শীতকালে রকমারি মাছে ভরে থাকে বাজার। তার ওপর এটাই মেলা বসানোর আদর্শ সময়। তবে হুগলির দেবানন্দপুরের (Devanandapur) মাছের মেলা বসে অন্য ঐতিহ্য নিয়ে। সেখানেও সেই ঘরে ফেরা আপনজনের মাছ খাওয়ার আবদারে ঐতিহ্যই রয়েছে। ১লা মাঘ ৫১৬ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে মঙ্গলবার আয়োজন করা হল সেই মাছের মেলার।

দেবনন্দপুরের কেষ্টপুরের জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তাঁর ছেলে রঘুনাথ সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি দীক্ষা নেওয়ার জন্য পানিহাটিতে স্বামী নিত্যানন্দের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর বয়স মাত্র ১৫ হওয়া দীক্ষা দেননি তিনি। বরং তাঁর ভক্তির পরীক্ষা নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন নিত্যানন্দ। দীর্ঘ নয় মাস পর বাড়ি ফেরেন তিনি। ছেলে বাড়ি ফিরে কাঁচা আমের ঝোল ও ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করে। ছেলে ফেরার আনন্দে সাথে সাথে গাছ থেকে আম ও পাশের জলাশয়ে জাল ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। জালে ধরা পড়ে জোড়া ইলিশ। এরপর থেকেই প্রতিবছর মাছের মেলার আয়োজন করা হয়।

৫০০ বছর ধরে ১লা মাঘ রাধাগোবিন্দ মন্দিরে পুজো দেওয়া হয়। আর মানুষ মেতে ওঠে মাছের মেলার আনন্দে। চুনোপুটি থেকে ৫০ কিলো পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয় সেখানে। দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী,পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে আসেন। রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা থেকে শুরু করে শুটকি – কোনও মাছই বাকি থাকে না মেলার নামকে সার্থক করতে। মেলায় যোগ দিতে শুধু হুগলির মানুষ না, বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা,বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় লোকজন ভিড় করেন। ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে সেখানে মাছ বিক্রি হয়। আবার অনেকেই মেলা থেকে টাটকা মাছ কিনে পাশের বাগানে টাটকা টাটকা পিকনিকও সেরে ফেলেন। মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ঘুরে দেখেন বিধায়ক অসিত মজুমদার।

Previous articleপাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে খুনের হুমকি পান্নুনের
Next articleফ্ল্যাট হস্তান্তর মামলায় অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে হাজিরার নির্দেশ আদালতের