রাস্তা থেকে কুড়িয়ে অনাথ শিশুকন্যাদের মানুষ করছেন ৬৬ বছরের বৃদ্ধ!

আজ থেকে প্রায় দু- যুগ আগে হরে রাম পাণ্ডে নিজের বাড়ির কাছেই এক কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করেন। ফুটফুটে শিশুকে ফেলে রেখে চলে গেছিলেন তাঁর মা বাবা। একরত্তি প্রাণ ক্ষ*তবিক্ষ*ত হয়েছিল পিঁপড়ের দং*শনে।

৬৬ বছরের এক বৃদ্ধ মানুষের জীবন কেমন হতে পারে? ঘরে স্ত্রী, ছেলে আর ছেলের বৌ থাকা সত্ত্বেও তিনি ৩৫ জন কন্যা সন্তানের বাবা! এই কথাটা শুনলে প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হবে বা অনেকে মানুষটিকে না চিনেই এটা ওটা ভাবতে শুরু করবেন। কিন্তু কেবিসি (KBC)ভালবাসেন যে দর্শকরা তাঁদের কাছে এই ব্যক্তি ভগবানের সমতুল্য। আসলে নর্দমা, ট্রেনের টয়লেট, জঙ্গল বা ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়া সদ্যোজাতদের কুড়িয়ে এনে যে মানুষ গত ২১ বছর ধরে তাঁদের সন্তান স্নেহে বড় করে তুলছেন তিনি জীবন্ত ভগবান ছাড়া আর কীই বা হতে পারেন! ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) দেওঘরের বাসিন্দা হরে রাম পাণ্ডের (Hare Ram Pandya) জীবনের গল্পটা চোখে জল এনে দেবে।

আজ থেকে প্রায় দু- যুগ আগে হরে রাম পাণ্ডে নিজের বাড়ির কাছেই এক কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করেন। ফুটফুটে শিশুকে ফেলে রেখে চলে গেছিলেন তাঁর মা বাবা। একরত্তি প্রাণ ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল পিঁপড়ের দংশনে। প্রায় তিন সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁকে সুস্থ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন হরে রাম। স্ত্রী ভবানী দেবীকে (Bhabani Devi)বলেন বাচ্চাটিকে মানুষ করতে। স্বামীর স্বভাব তিনি জানতেন, তাই আর না বলেননি সহধর্মিণী। সেই শুরু, এরপর চলন্ত ট্রেনের টয়লেট থেকে দৃষ্টিহীন সদ্যোজাতকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন, সেও ছিল কন্যা সন্তান। তাঁকে মানুষ করতে শুরু করেন। হরে রামের (Hare Ram Pandya)সামাজিক কাজে মুগ্ধ দেওঘর মন্দির নগরের ডেপুটি কমিশনার তাঁকে রেজিস্টার্ড ট্রাস্ট খোলার পরামর্শ দেন। স্বামী- স্ত্রী যুগলে খুলে ফেলেন নারায়ণ সেবা আশ্রম (Narayana Seva Ashrama)। যেখানে দেশে প্রতি বছর গর্ভপাতের মাধ্যমে ৪৬ লক্ষ কন্যা ভ্রূণ হত্যা করা হয়, সেখানে এই নারায়ণের আশ্রমে ‘মা লক্ষ্মী’দের স্নেহ মায়া মমতায় বড় করছেন হরে রাম পাণ্ডে। জনসংখ্যা তহবিলের রিপোর্টে বলা হয়েছে গত বছর আমাদের দেশে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ মেয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। পরিসংখ্যানটা ভয় ধরানোর মতো। স্থানীয় পুলিশ থেকে আঞ্চলিক প্রশাসনের কর্তারা কোথাও পরিত্যক্ত শিশুকন্যার খোঁজ পেলেই তাঁকে নারায়ণ সেবা আশ্রমে দিয়ে আসেন। আসলে সম্পূর্ণ একার দায়িত্বে যে মানুষ এত বছর ধরে অন্যের সন্তানদের মানুষ করে চলেছেন, তাঁর থেকে নিরাপদ আশ্রয় এ পৃথিবীতে আর কোথাও পেতে পারেন না এই নিরীহ শিশুরা। স্বামী- স্ত্রী অভুক্ত থেকে, নিজের ঘরের জিনিস বিক্রি করে মেয়েদের বড় করে চলেছেন তাঁরা। কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বা আই পি এস- এদের স্বপ্ন পূরণের কাণ্ডারি হরে রাম পাণ্ডে (Hare Ram Pandya)। সম্প্রতি কেবিসিতে (Kaun Banega Crorepati)প্রতিযোগী হয়ে এসেছিলেন তিনি। জানান, ২৫ লক্ষ টাকা পেলে ৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী যে কন্যাদের মানুষ করে চলেছেন তিনি, তাঁদের মাথার উপরের ছাদ পাকা করতে চান। এদের সকলের আধার কার্ডে বাবা- মায়ের জায়গায় লেখা আছে হরে রাম পাণ্ডে আর ভবানী দেবীর নাম।

যে দেশে কন্যা সন্তান আজও বাড়ির বোঝা, অনাকাঙ্খিত, যাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলতে দুবার ভাবে না সমাজ, সেই সমাজে থাকেন এক হরে রাম পাণ্ডে – যিনি বৃদ্ধ বয়সেও অন্যের কন্যাসন্তানদের বাবার ভালবাসায় লালন করে চলেছেন। প্রতিকূলতা, অভাবের সঙ্গে লড়াই করেও ৩৫ শিশুকন্যাকে বড় করছেন তিনি। হরে রাম জানেন, ‘ মেয়েরা মায়ের জাত’ তাই মাকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায়না। বুঝল কি উন্নত সমাজ?

Previous articleশীতের দুপুরে বন্ধ নিউমার্কেট! হকার-ব্যবসায়ী জটিলতার প্রতিবাদ
Next articleঅসুস্থ পড়ুয়াকে নিজের গাড়িতে হাসপাতালে পাঠালেন বিধায়ক